সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের একাধিক আইডি, পেজ ও গ্রুপ থেকে বাংলাদেশে ভূমিকম্পের পূর্বাভাস পোস্ট করে দাবি করা হচ্ছে, বিশেষজ্ঞদের মতে আগামী ৭২ ঘন্টার মধ্যে বাংলাদেশসহ পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে ৫.৫ থেকে ৬.৮ রিখটার স্কেলের ভূমিকম্প হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। এরকম কয়েকটি পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে।
গত ১৯ সেপ্টেম্বর সাইবার '৭১ - We Work to Protect Bangladesh' নামের একটি পেজ থেকে পোস্ট করে লেখা হয়, "বিশেষজ্ঞদের মতামত অনুযায়ী, আগামী ৭২ ঘন্টার মধ্যে বাংলাদেশ সহ পাশ্ববর্তী দেশ গুলোতে ৫.৫ থেকে ৬.৮ রিখটার স্কেলের ভূমিকম্প হওয়ার সমূহ আশংকা রয়েছে। আল্লাহ আমাদের সহায় হোক।" নিচে পোস্টটির স্ক্রিনশট দেখুন--
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, দাবিটি ভিত্তিহীন। বৈজ্ঞানিকভাবে ভূমিকম্পের পূর্বাভাস পাওয়া যায়না। বিশেষজ্ঞরা এই তথ্যকে গুজব হিসেবে চিহ্নিত করে আতঙ্কিত না হয়ে সবাইকে সতর্ক থাকার অনুরোধ করেছেন।
কি-ওয়ার্ড সার্চ করে বিভিন্ন গণমাধ্যমে বাংলাদেশসহ পার্শ্ববর্তী এলাকায় ভূমিকম্প হওয়ার পূর্বাভাসের তথ্য ছড়িয়ে পড়া সংক্রান্ত একাধিক প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। "দেশে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ভূমিকম্পের পূর্বাভাসের খবরটি অসত্য" শিরোনামে ঢাকা ট্রিবিউনের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, "বিষয়টি পুরোপুরি গুজব। কারণ, ভূমিকম্পের পূর্বাভাস দেওয়ার প্রযুক্তি এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত হয়নি। এ বিষয়ে আতঙ্কিত না হয়ে সবাইকে সতর্ক থাকার অনুরোধ জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।"
একইভাবে সার্চ করে "৭২ ঘণ্টার মধ্যে বড় ভূমিকম্পের খবর গুজব" শিরোনামে জাগোনিউজের একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সেস অনুষদের ডিন ও ডিজাস্টার সায়েন্স অ্যান্ড ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্স বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. জিল্লুর রহমানকে উদ্ধৃত করে বলা হয়, "এটি সম্পূর্ণ গুজব। এখন পর্যন্ত ভূমিকম্পের পূর্বাভাস দেওয়ার মতো প্রযুক্তি আবিষ্কৃত হয়নি।" স্ক্রিনশট দেখুন--
ভূমিকম্পের পূর্বাভাস জানা কি সম্ভব?
কি-ওয়ার্ড সার্চ করে ভূমিকম্পের পূর্বাভাস জানা সম্ভব কিনা সেটি নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে বিশেষজ্ঞদের মতামত পাওয়া যায়। "ভূমিকম্পের কথা কি কখনো আগে থেকে মানুষ জানতে পারবে?" শিরোনামে বিবিসি বাংলার একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, "বৈজ্ঞানিকভাবে আগে থেকেই ভূমিকম্পের পূর্বাভাস পাওয়া খুবই কঠিন। যদিও একটি ঘটনা ঘটে যাবার পর প্রায়শই ভূকম্পনজনিত ডেটা বা তথ্যে মিনিটের সংকেত শনাক্ত করা যায়, তবে কী অনুসন্ধান করতে হবে সেটা বোঝা এবং পূর্বাভাস দেয়ার জন্য এটি ব্যবহার করা আরও বেশি চ্যালেঞ্জিং।"
প্রতিবেদনে ইতালির রোমের সেপিয়েঞ্জা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূ-বিজ্ঞানের এবং যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়ার পেন স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ক্রিস ম্যারোনের মন্তব্য উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়, "যখন আমরা পরীক্ষাগারে ভূমিকম্পের পরীক্ষা চালাই তখন আমরা এই সমস্ত ব্যর্থতা দেখি- যেখানে প্রথমে কিছু ফাটল এবং কিছু ত্রুটি দেখা যায়। কিন্তু প্রকৃতিতে অনেক অনিশ্চয়তা থাকায় আমরা প্রায়শই বড় ভূমিকম্প হতে যাচ্ছে এমন কোনো ইঙ্গিত পাই না।" স্ক্রিনশর্ট দেখুন--
সার্চ করে Can you predict earthquakes? শিরোনামে যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি Geological Survey এর ওয়েবসাইটে বলা হয়, ইউএসজিএস বা অন্য কোনো বিজ্ঞানী কেউই বড় ভূমিকম্পের পূর্বাভাস দেননি। আমরা জানি না কিভাবে এবং এমনকি আমরা অদূর ভবিষ্যতে সেটা জানার প্রত্যাশাও করিনা। স্ক্রিনশট দেখুন--
অর্থাৎ বাংলাদেশসহ এর পার্শ্ববর্তী এলাকায় ভূমিকম্পের পূর্বাভাসটি সঠিক নয় বরং গুজব।
সুতরাং বাংলাদেশসহ এর পার্শ্ববর্তী এলাকায় আগামী ৭২ ঘন্টার মধ্যে ভূমিকম্পের পূর্বাভাস দিয়ে ফেসবুকে যে তথ্য প্রচার করা হচ্ছে, তা বিভ্রান্তিকর।