সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি ভিডিও পোস্ট করে বলা হচ্ছে, ২০৩৮ সালের ১২ জুলাই পৃথিবী ধ্বংস হবে বলে জানিয়েছে নাসা। এরকম কয়েকটি পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে ও এখানে।
গত ৩ জুলাই 'Islam and Life' নামের পেজ থেকে ভিডিওটি পোস্ট করে লেখা হয়, "২০৩৮ সালের ১২ জুলাই ধ্বংস হবে পৃথিবী | জানিয়েছে নাসা! | এ ব্যাপারে কী বলে আল-কুরআন?"। পোস্টটির স্ক্রিনশট দেখুন--
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, আলোচ্য দাবিটি সঠিক নয়। নাসা এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থার বিশেষজ্ঞরা সম্প্রতি কল্পিত গ্রহাণু পৃথিবীতে আছড়ে পড়লে তার প্রভাব অনুমান করে সেই অনুযায়ী প্রতিক্রিয়া এবং করণীয় বিষয়ে অনুশীলন করেছেন। সেই বিষয়টিই বিভ্রান্তিকরভাবে ২০৩৮ সালে গ্রহাণু আছড়ে পড়ে পৃথিবী ধ্বংস হবে বলে ছড়িয়ে পড়ে।
বিষয়টি নিয়ে কি-ওয়ার্ড সার্চ এর মাধ্যমে বিজ্ঞান বিষয়ক জনপ্রিয় সাইট 'লাইভ সায়েন্স'-এ গত ২৬ জুন "No, NASA hasn't warned of an impending asteroid strike in 2038. Here's what really happened." শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। এতে উল্লেখ করা হয়, নাসা এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থার বিশেষজ্ঞরা সম্প্রতি কল্পিত গ্রহাণু পৃথিবীতে আছড়ে পড়লে তার প্রভাব অনুমান করে সেই অনুযায়ী প্রতিক্রিয়া এবং করণীয় বিষয়ে অনুশীলন করেছেন। এই অনুশীলনে উদ্দেশ্য অনুযায়ী সফলও হয়েছেন তারা। কল্পিত বিষয়টিকে সত্য মনে করে তথা ২০৩৮ সালে গ্রহাণু আঘাত করবে এমন সিদ্ধান্তমূলক বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার করা হয়েছে। প্রতিবেদনটির স্ক্রিনশট দেখুন--
লাইভ সায়েন্স এর এই প্রতিবেদনে 'স্পেস ডট কম' এর এই সংক্রান্ত আরো একটি প্রতিবেদন হাইপারলিংক অবস্থায় পাওয়া যায়। স্পেস ডট কম এর এই প্রতিবেদনে আলোচ্য ডেমো অনুশীলনের বিষয়ে নাসার অফিশিয়াল সাইটে গত ২০ জুন প্রকাশিত স্টেটমেন্ট বা প্রেস রিলিজ পাওয়া যায়। প্রেস রিলিজটি "NASA, Partners Conduct Fifth Asteroid Impact Exercise, Release Summary" শিরোনামে প্রকাশ করা হয়।
এতে উল্লেখ করা হয়, NASA এর প্ল্যানেটারি ডিফেন্স কো-অর্ডিনেশন অফিস, FEMA (ফেডারেল ইমার্জেন্সি ম্যানেজমেন্ট এজেন্সি) এর সাথে অংশীদারিত্বে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট অফিস অব স্পেস অ্যাফেয়ার্সের সহায়তায়, সম্ভাব্য বিপজ্জনক গ্রহাণু বা ধূমকেতুর আছড়ে পড়ার হুমকি মোকাবেলায় কার্যকরভাবে প্রতিক্রিয়া জানানো এবং মূল্যায়ন করার জন্য একটি মহড়ার আয়োজন করা হয়েছিল।
যদিও নিকট ভবিষ্যতে উল্লেখযোগ্য গ্রহাণুর প্রভাবের কোনো হুমকি নেই, তবে কল্পনার উপর ভিত্তি করে অনুশীলনের মাধ্যমে বিভিন্ন পরিস্থিতিতে ঝুঁকি যাচাই, বিভিন্ন বিষয়ে প্রতিক্রিয়া যাচাই করে কাঙ্ক্ষিত ফলাফল পাওয়া গেছে। এই ফলাফল গ্রহাণুর প্রভাবে ছোট ছোট আঞ্চলিক ক্ষতি থেকে শুরু করে বৈশ্বিক বিপর্যয় পর্যন্ত নিকট ভবিষ্যতে সম্ভাব্য হুমকি মোকাবেলায় সহায়তা করবে। প্রেস রিলিজটির স্ক্রিনশট দেখুন--
অর্থাৎ সম্ভাব্য হুমকি মোকাবেলায় নাসার একটি কল্পিত বিষয়ের উপর ভিত্তি করে আয়োজিত মহড়াকে ঘিরে আলোচ্য বিভ্রান্তিকর তথ্যটি প্রচার করা হয়েছে।
১৪ বছর পর গ্রহাণুর আছরে পড়ার (২০৩৮) দাবিটি যেভাবে এসেছে
নাসার প্রেস রিলিজ অনুযায়ী, অনুশীলনের সময় একটি গ্রহাণু সনাক্ত করা হয়েছিল যেটি প্রাথমিক গণনা অনুসারে আনুমানিক ১৪ বছর পরে (২০৩৮) পৃথিবীতে আঘাত করার ৭২% সম্ভাবনা পাওয়া যায়। এটি মহড়ায় বর্ণিত প্রাথমিক পর্যবেক্ষণ। তবে এই তথ্য গ্রহাণুর আকার, গঠন এবং দীর্ঘমেয়াদী গতিপথ সঠিকভাবে নির্ধারণ করার জন্য যথেষ্ট ছিল না। এই বছরের পুরো কল্পিত চিত্র পেতে আরো ৭ মাস সময় প্রয়োজন।
নাসার আরেক প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রাথমিক পর্যবেক্ষণে পাওয়া ৭২% সম্ভাব্য আঘাত হানতে পারে যে গ্রহাণুটি সেটি পৃথিবীতে আছরে না পড়ে পৃথিবীর পাশ দিয়ে চলে যাওয়ার সম্ভাবনাও ২৮%।
অর্থাৎ এটি নিশ্চিত কোনো সিদ্ধান্ত বা ফলাফল নয় কেননা এটি প্রাথমিক পর্যবেক্ষণ মাত্র। নিশ্চিত হতে আরো সময় ও গভীর পর্যবেক্ষণ প্রয়োজন আছে। এছাড়াও যেহেতু এটি পৃথিবীতে না পড়ার সম্ভাবনাও আছে সেহেতু নিশ্চিত না হওয়ায় নাসা এখন পর্যন্ত কোনো সতর্কবার্তাও দেয়নি।
উল্লেখ্য আলোচ্য দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত ১৩ মিনিটের ভিডিওটির একদম শেষ দিকে কিছু সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দেওয়া হলেও ভিডিওর পোস্টের সাথে উল্লিখিত তথ্য বা লেখাটি বিভ্রান্তিকর। ফলে পুরো ভিডিও কেউ না দেখলে যে কেউ বিভ্রান্ত হতে পারেন।
সুতরাং সামাজিক মাধ্যমে '২০৩৮ সালের জুলাইতে পৃথিবী ধ্বংস হবে বলে জানিয়েছে নাসা' মর্মে যে তথ্য প্রচার করা হচ্ছে, তা বিভ্রান্তিকর।