সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকের একাধিক আইডি, পেজ ও গ্রুপে ফাঁসিতে ঝুলন্ত এক ব্যক্তির ছবি পোস্ট করে বলা হচ্ছে, অপমান সইতে না পেরে চট্টগ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু সাঈদ সর্দার আত্মহত্যা করেছেন। এরকম কয়েকটি পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে ও এখানে।
কয়েক ঘন্টা আগে '💪বড়চাপা ইউনিয়ন ছাত্রলীগ💪' নামে একটি ফেসবুক গ্রুপে 'Gulam Saruar Sugib' নামে একটি ফেসবুক একাউন্ট থেকে একটি ছবি পোস্ট করে বলা হয়, "জানোয়ারদের হাতে অপমান সহ্য করতে না পেরে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার আত্মহত্যা। চট্টগ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু সাঈদ সর্দার। স্বাধীনতার ৫৩ বছর পর অপমান সইতে না পেরে বেছে নিলেন আত্মহত্যার পথ। বলার কোন ভাষা নাই 😢"। ফেসবুক পোস্টটির স্ক্রিনশট দেখুন--
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, চট্টগ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু সাঈদ সর্দার অপমানে আত্মহত্যা করেছেন দাবিটি সঠিক নয়। ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই করতে করতে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে এই মুক্তিযোদ্ধা আত্মহত্যা করেছেন বলে গণমাধ্যমের খবর থেকে জানা গেছে।
মুক্তিযোদ্ধা আবু সাইদ সরদারের আত্মহত্যার ঘটনা সম্পর্কে জানতে কি-ওয়ার্ড সার্চ করে গতকাল (২৩ডিসেম্বর) দৈনিক পত্রিকা আজকের পত্রিকার অনলাইন ভার্সনে "বদ্ধ ঘরে মুক্তিযোদ্ধার ঝুলন্ত লাশ, মিলল আবেগঘন ৬ সুইসাইড নোট" শিরোনামে একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, "চট্টগ্রামের আগ্রাবাদে ঘরের দরজা ভেঙে এক মুক্তিযোদ্ধার গলায় ফাঁস দেওয়া মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। ওই কক্ষ থেকে সন্তান ও নাতি-নাতনিদের উদ্দেশে লেখা ছয়টি আবেগঘন সুইসাইড নোট উদ্ধার করা হয়েছে। পুলিশের ধারণা, তিনি ক্যানসার আক্রান্ত ছিলেন এবং আত্মহত্যা করেছেন। গতকাল রোববার সন্ধ্যা পৌনে ৬টার আগে নগরের ডবলমুরিং থানার আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিকের ২০ নম্বর রোডে একটি বাসায় এ ঘটনা ঘটে। ওই বীর মুক্তিযোদ্ধার নাম আবু সাইদ সরদার (৬৫)। তাঁর ইমন ও সায়মন নামের দুই ছেলে এবং পায়েল নামের এক মেয়েসন্তান রয়েছে। তিনি ওই বাসায় তাঁর ছেলে ইমনের পরিবারের সঙ্গে থাকতেন।" স্ক্রিনশট দেখুন--
আরো কি-ওয়ার্ড সার্চ করে গতকাল (২৩ডিসেম্বর) দৈনিক পত্রিকা সমকালের অনলাইন ভার্সনে "ক্যান্সারের যন্ত্রণা সইতে না পেরে বীর মুক্তিযোদ্ধার আত্মহত্যা" শিরোনামে একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, "ক্যান্সারের শারীরিক যন্ত্রণা সইতে না পেরে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু সাঈদ সরদার (৭৫)। রোববার সন্ধ্যায় নগরের আগ্রাবাদের সিডিএ আবাসিক এলাকার নিজ বাসা থেকে পুলিশ তার ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে। পুলিশ জানিয়েছে, ক্যান্সারের শারীরিক যন্ত্রণা সইতে না পেরে তিনি আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন বলে চিরকুটে লিখে গেছেন। ডবলমুরিং থানার ওসি কাজী রফিক আহম্মদ জানান, আবু সাঈদ দীর্ঘদিন ধরে ক্যান্সারে আক্রান্ত ছিলেন। রোববার সন্ধ্যায় এই বীর মুক্তিযোদ্ধা আত্মহত্যা করেছেন বলে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশের একটি টিম যায়। পরে বাসার দরজা ভেঙে উনার মরদেহ উদ্ধার করা হয়।"। স্ক্রিনশট দেখুন--
এছাড়াও, দৈনিক পত্রিকা দৈনিক ইত্তেফাক এবং ঢাকা ট্রিবিউনের ওয়েবসাইট থেকেও জানা একই তথ্য।
অর্থাৎ মুক্তিযোদ্ধা আবু সাঈদ সর্দার ক্যান্সারের চিকিৎসা চলাকালে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে আত্মহত্যা করেছেন। কোনো অপমান বা লাঞ্ছনার কারণে তিনি মারা যাননি।
উল্লেখ্য সম্প্রতি কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে একজন মুক্তিযোদ্ধা লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনা ঘটে।
সুতরাং চট্টগ্রামের মুক্তিযোদ্ধা আবু সাঈদ সর্দার অপমান সইতে না পেরে আত্মহত্যা করেছেন বলে যে প্রচার করা হচ্ছে, তা বিভ্রান্তিকর।