আসন্ন রমজান মাস উপলক্ষে পাকিস্তানে ৫ টাকায় প্রতি কেজি বাসমতি চাল ও সাড়ে ১২ টাকায় দেড় লিটার তেল বিক্রি হবে মর্মে একটি খবর বাংলাদেশের মূলধারার কয়েকটি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। সব প্রতিবেদনেই বাংলাদেশি মুদ্রা তথা টাকায় পণ্যগুলোের মূল্য দেখানো হয়েছে।
সবগুলো প্রতিবেদনেই মূল খবর একইরকম। ইত্তেফাকের খবরে বলা হয়েছে-
'পাকিস্তানে মাত্র পাঁচ টাকা প্রতিকেজিতে পাওয়া যাবে বাসমতি চাল, সাড়ে ১২ টাকায় দেড় কেজি সয়াবিন তেল ও ১০ টাকা লিটারে দুধ। আসন্ন রমজান মাসে নিত্যপ্রয়োজনীয় এমন কয়েকটি দ্রব্য অবিশ্বাস্য কম দামে জনগণকে সরবরাহ করবে পাকিস্তান সরকার। বুধবার (১০ মার্চ) দেশটির সংবাদমাধ্যম জিও নিউজ দিয়েছে এ খবর।
রমজান উপলক্ষে ভর্তুকি মূল্যে ১৯টি নিত্যপণ্যের একটি প্যাকেজ ঘোষণা করেছে দেশটি। সরকারি ইউটিলিটি স্টোরের মাধ্যমে পণ্য প্যাকেট বিক্রি করা হবে। ঘোষিত রমজান প্যাকেজে রয়েছে ২ কেজি আটা, ১ কেজি চিনি, বাসমতি চাল, তেল, দুধ, চাপাতি, পানিয়, খেজুর, ঘি ও অন্যান্য সামগ্রী। যাতে পাকিস্তানি সরকার ভর্তুকি দেবে বাংলাদেশি টাকার প্রায় ৩৫০ কোটি টাকা।
নিত্যপণ্যগুলোর মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে, বাসমতি চাল প্রতিকেজি বাংলাদেশি টাকায় পাঁচ টাকা (১০রুপি), দেড়লিটার ভোজ্য তেলের মূল্য ধরা হয়েছে সাড়ে ১২ টাকা, ৮০০ মিলিলিটার সরবতের মূল্য রাখা হয়েছে ১০ টাকা, চাপাতি ৫০০ গ্রামের মূল্য ২৫ টাকা, ১ লিটার দুধের দাম ১০ টাকা, ১ কেজি চিনির মূল্য ধরা হয়েছে ৩৪ টাকা। ২০ কেজি আটার মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৪০০ টাকা। ঘির কেজি নির্ধারণ করা হয়েছে ১০০ টাকা।'
এর সূত্র ধরে সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকেও এমন পোস্ট ছড়িয়েছে।
ফ্যাক্ট চেক:
জিও নিউজের সূত্রে বাংলাদেশি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরের বিষয়বস্তু এরকম-
এক: রমজান উপলক্ষে পাকিস্তান ভর্তুকি মূল্যে একটি প্যাকেজ ঘোষণা করেছে যাতে দেশটির সরকার ভর্তুকি দেবে বাংলাদেশি টাকার প্রায় ৩৫০ কোটি টাকা।
দুই: নিত্যপণ্যগুলোর মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে, বাসমতি চাল প্রতিকেজি বাংলাদেশি টাকায় পাঁচ টাকা (১০রুপি), দেড়লিটার ভোজ্য তেলের মূল্য ধরা হয়েছে সাড়ে ১২ টাকা, ৮০০ মিলিলিটার সরবতের মূল্য রাখা হয়েছে ১০ টাকা, চাপাতি ৫০০ গ্রামের মূল্য ২৫ টাকা, ১ লিটার দুধের দাম ১০ টাকা, ১ কেজি চিনির মূল্য ধরা হয়েছে ৩৪ টাকা। ২০ কেজি আটার মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৪০০ টাকা। ঘির কেজি নির্ধারণ করা হয়েছে ১০০ টাকা।
বুম বাংলাদেশ জিও নিউজের মূল খবর যাচাই করে দেখেছে যে, বাংলাদেশি সংবাদমাধ্যমে জিও এর কিছু তথ্য বিভ্রান্তিকরভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। জিও নিউজের প্রতিবেদনের তথ্য এরকম:
প্রথমত: রোজা উপলক্ষে পাকিস্তান সরকার নিয়ন্ত্রিত ইউটিলিটি স্টোরের মাধ্যমে বিক্রির জন্য ৬.৩ বিলিয়ন তথা ৬৩০ কোটি রুপির ভর্তুকি প্যাকেজ হাতে নিয়েছে যা বাংলাদেশি টাকায় ৩.৪ বিলিয়ন বা ৩৪০ কোটি টাকার মতো।
দ্বিতীয়ত: জি নিউজের খবরে ভর্তুকি দেয়ার পর কিছু পণ্যের মূল্য কত হবে সেটা উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন বলা হয়েছে প্রতি কেজি চিনির দাম হবে ৬৮ রুপি, ২০ কেজির আটার বস্তার দাম হবে ৮০০ রুপি এবং প্রতি কেজি ঘি এর দাম হবে ২০০ রুপি। বাংলাদেশি টাকায় এগুলোর মূল্যমান হবে যথাক্রমে প্রায় ৩৮, ৪৩০ এবং ১১০ টাকার মতো।
তৃৃতীয়ত: কিছু পণ্যের দাম উল্লেখ না করে জি নিউজের খবরে শুধু কত ভর্তুকি দেয়া হবে সেটি উল্লেখ আছে। যেমন- চা'তে ৫০ রুপি, দুধে ২০ রুপি, প্রতি কেজি ভোজ্য তেলে ২০ রুপি, প্রতি কেজি ময়দায় ২০ রুপি এবং প্রতি কেজি বাসমতি চালে ১০ রুপি ভর্তুকি দেয়া হবে বলে জিও এর প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। বাংলাদেশি টাকায় হিসাব করলে এই ভর্তুকির সমমূল্য দাঁড়ায় যথাক্রমে প্রায় ২৭ টাকা, ১১ টাকা, ১১ টাকা, ১১ টাকা এবং ৬ টাকার মতো। এখানে আবারও উল্লেখ্য যে, এই মূল্যমানগুলো বর্ণিত পণ্যগুলোর মূল্য নয়, বরং এই পরিমাণ অর্থ ওইসব পণ্যে ভর্তুকি হিসেবে প্রদান করবে সরকার।
অর্থাৎ, ইত্তেফাকের প্রতিবেদনে যেমন দাবি করা হয়েছে 'বাসমতি চালের প্রতি কেজির দাম ৫ টাকা (বা ১০ রুপি) এবং তেলের লিটার সাড়ে ১২ টাকা (বা ২০ রুপি) তা সঠিক নয়। বরং এই পরিমাণ অর্থ প্রতি কেজি এবং লিটারে এই দুটি পণ্যে ভর্তুকি দেয়া হবে। ভর্তুকির পর বাসমতির কেজি প্রতি এবং তেলের লিটার প্রতি দাম কত দাঁড়াবে তার কোনো উল্লেখ রিপোর্টে নেই।
পাকিস্তানে বর্তমানে বাসমতি চালের কেজিপ্রতি মূল্য কত সে সম্পর্কে ধারণা পেতে দারাজ এর পাকিস্তান ভিত্তিক ওয়েবসাইটে গেলে দেখা যায় সেখানে ১৩০ রুপি বা তার চেয়ে বেশি দাম লেখা রয়েছে। দেখুন নিচের স্ক্রিনশট-