সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকের একাধিক আইডি ও পেজ থেকে দৈনিক নয়া দিগন্ত পত্রিকার অনলাইন ভার্সনে প্রকাশিত খবর দাবি করে একটি স্ক্রিনশট শেয়ার করা হচ্ছে, যাতে লেখা ''চট্টগ্রামে হিজাব পরায় ছাত্রীকে হেনস্থা ও বেত্রাঘাত করেছে হিন্দু শিক্ষক তুষার কান্তি বড়ুয়া''। এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে।
গত ১১ এপ্রিল 'Qazi Sheikh Sadi' নামের একটি ফেসবুক পেজ থেকে স্ক্রিনশটটি পোস্ট করে লেখা হয়, "বর্তমানে জিহাদ চলে হিন্দুদের বিরুদ্ধে। বৌদ্ধরা আপাততঃ টার্গেটে নাই। তাই কে হিন্দু কে বৌদ্ধ তা বিবেচনার সময় ইসলামিস্ট সাংবাদিক ও নয়াদিগন্তের নাই। কি বুঝলেন? মাথায় কিছু ঢুকলো? ভাবুন ভাবার প্র্যাক্টিস করুন। নয়াদিগন্তের বিরুদ্ধে কড়া একশন চাই।" অর্থাৎ দাবি করা হচ্ছে স্ক্রিনশটে দেখতে পাওয়া শিরোনামটি দৈনিক নয়া দিগন্তে প্রকাশিত খবরের। স্ক্রিনশট দেখুন--
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, স্ক্রিনশটটি এডিট করা। ২৯ মার্চ দৈনিক নয়া দিগন্তের অনলাইন ভার্সনে প্রকাশিত একটি খবরের শিরোনামকে এডিট করে প্রচার করা হচ্ছে সামাজিক মাধ্যমে।
ভাইরাল পোস্টের স্ক্রিনশটটি বিভিন্ন কারণে সন্দেহজনক।
প্রথমত, স্ক্রিনশটটিতে শিরোনামের শেষে দাঁড়ি বা পূর্ণচ্ছেদ চিহ্ন দেয়া হয়েছে। কিন্তু সাধারণত খবরের শিরোনামে দাঁড়ি বা পূর্ণচ্ছেদ চিহ্ন দেয়া হয়না। নয়া দিগন্তের অন্য সব শিরোনাম বিশ্লেষণ করেও দেখা গেছে খবরের শিরোনামে দাঁড়ি চিহ্ন দেখা যায়নি।
দ্বিতীয়ত, স্ক্রিনশটে দেখতে পাওয়া শিরোনামটি দৈনিক নয়া দিগন্তের কিনা যাচাই করার জন্য একাধিকবার কিওয়ার্ড ধরে সার্চ করার পরও, এই শিরোনামে কোনো খবর নয়া দিগন্তের অনলাইন ভার্সনে খুঁজে পাওয়া যায়নি।
বরং গত ২৯ মার্চ দৈনিক নয়া দিগন্ত পত্রিকার অনলাইন ভার্সনে প্রকাশিত "মিরসরাইয়ে হিজাব পরায় স্কুলছাত্রীকে হেনস্থা ও বেত্রাঘাতের অভিযোগ" শিরোনামে একটি খবর খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদনটি মূলত চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের জোরারগঞ্জ বৌদ্ধ উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণীর শিক্ষার্থী লামিয়া বিনতিহা নামের এক শিক্ষার্থীর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে একটি লিখিত অভিযোগের উপর ভিত্তি করে লেখা হয়েছে এবং পুরো খবরে "হিন্দু শিক্ষক" শব্দটির কোনো উল্লেখ নেই। দেখুন খবরটির স্ক্রিনশট--
আবার খেয়াল করলে দেখা যায়, ভাইরাল পোস্টের শিরোনাম ও দৈনিক নয়া দিগন্ত অনলাইনের শিরোনামেরও কোনো মিল নেই। ভাইরাল পোস্টে স্থানের নাম হিসাবে "চট্টগ্রামে" শব্দটি উল্লেখ থাকলেও নয়া দিগন্তের মূল শিরোনামে শব্দটির উল্লেখ নেই বরং সেখানে লেখা হয়েছে, "মিরসরাই"। কিন্তু দুটি খবরের প্রকাশের সময় হুবহু এক।
পাশাপাশি বুম বাংলাদেশ গুগল ক্যাশ যাচাই করেও দেখেছে দৈনিক নয়া দিগন্ত তাদের অনলাইনের শিরোনামটির পরিবর্তন করেনি। অর্থাৎ প্রকাশের পর থেকে এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত অনলাইন সংস্করণে তাদের শিরোনাম একই আছে। প্রসঙ্গত গুগল ক্যাশ'র মাধ্যমে একটি ওয়েবসাইট পূর্ববর্তী সংস্করণ অনুসন্ধান করা যায়। ক্যাশ সংস্করণের স্ক্রিনশট দেখুন--
অর্থাৎ ভাইরাল ফেসবুক পোস্টের স্ক্রিনশটটি বিকৃত করা বা এডিট করা।
আবার ৩০ মার্চ নয়া দিগন্তের প্রিন্ট সংস্করণেও "মিরসরাই জেবি স্কুলে হিজাব নিষিদ্ধ!" খবরটি খুঁজে পাওয়া যায়। হুবহু শিরোনামে প্রিন্ট সংস্করণের খবরটির অনলাইন সংস্করণও খুঁজে পাওয়া গেছে। উল্লেখ, সবগুলো খবরেরই বিষয়বস্তু একই। খবরের বিষয়বস্তুতে চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের জোরারগঞ্জ বৌদ্ধ উচ্চ বিদ্যালয়ের (জেবি) প্রধান শিক্ষক তুষার কান্তি বড়ুয়ার পরিচয় হিসাবে 'হিন্দু' উল্লেখ করা হয়নি। প্রিন্ট সংস্করণের স্ক্রিনশট দেখুন--
প্রসঙ্গত, চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের জোরারগঞ্জ বৌদ্ধ উচ্চ বিদ্যালয়ের (জেবি) অষ্টম শ্রেণির ওই ছাত্রীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে সেখানকার এসি ল্যান্ড, জোরারগঞ্জ থানার ওসি, মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ঘটনাস্থলে গিয়ে তদন্ত করে মারধরের কোনো সত্যতা না পাওয়ার খবর একাধিক সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।
সুতরাং ২৯ মার্চ দৈনিক নয়া দিগন্ত পত্রিকার অনলাইন ভার্সনে প্রকাশিত একটি খবরের শিরোনামকে এডিট করে সাম্প্রদায়িক রং লাগিয়ে প্রচার করা হচ্ছে সামাজিক মাধ্যমে; যা বিভ্রান্তিকর।