সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকের একাধিক পেজ থেকে অনলাইন পোর্টালের লিংকসহ একটি প্রাণীর ছবি শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে, সমুদ্র পারে পরে থাকে অদ্ভূত প্রাণী, এলিয়েন বলে দাবি করা হচ্ছে এবং এর আগে মানুষ এই ভিনপ্রজাতির প্রাণী কখনো দেখেনি। এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে।
গত ১৮ এপ্রিল 'Celeb Hub' নামের ফেসবুক পেজ থেকে অনলাইন পোর্টালের একটি লিংক শেয়ার করা হয় যার শিরোনাম, "মুষলধারে বৃষ্টির পর সমুদ্রের পাড়ে মিলল অদ্ভূত প্রাণী, এলিয়েন বলে দাবি নেটিজেনদের"। স্ক্রিনশট দেখুন--
অনলাইন পোর্টালের খবরের লেখা হয়- "কিছুদিন আগে অস্ট্রেলিয়ায় অতি ভারী বৃষ্টিপাতের পরে সমুদ্রের তীরে বেশ কিছু প্রাণী দেখা গিয়েছিল। প্রাথমিক অবস্থায় উক্ত প্রাণীগুলোকে শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। উদ্ভূত প্রাণীগুলো মানুষের কাছে রহস্যময় হয়ে ওঠে। অনেকের মতে এগুলি এলিয়েন (Alien), আবার কেউ বলেছেন ক্ষুদ্র ড্রাগন।
অস্ট্রেলিয়ায় (Australia) কয়েক সপ্তাহ ধরে অপ্রত্যাশিতভাবে বৃষ্টির কারণে সমুদ্র সৈকতে অদ্ভুত প্রাণীর মৃত অবস্থায় পর থাকার খবর আসতে থাকে। এবং তাদের চিত্রও সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করা হয়। এর আগে মানুষ এই ভিনপ্রজাতির প্রাণী কখনো দেখেনি। বিশেষজ্ঞরাও এই ধরনের প্রজাতির প্রাণী দেখে চিন্তিত এবং পর্যবেক্ষণ সংযত বলে মনে করছে।
সমুদ্রসৈকতে শুয়ে থাকা জলজ প্রাণীর ছবি যে হারে আসছে তার মধ্যে অনেকেরই ভিন্নতা রয়েছে। ক্রুনালু, মালাবার এবং সেন্ট্রাল কস্টে পাওয়া প্রাণের সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিল আগাছা সিড্রাগন।"
অর্থাৎ, এখানে বলার চেষ্টা করা হচ্ছে, অস্ট্রেলিয়ায় সমুদ্র তীরে যে সকল প্রাণী দেখা গেছে (অনলাইন পোর্টালে কেবল একটি ছবি দেয়া হয়েছে) তা "প্রাথমিক অবস্থায় উক্ত প্রাণীগুলোকে শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি", "অনেকে একে এলিয়েন বলছেন" এবং "এর আগে মানুষ এই ভিনপ্রজাতির প্রাণী কখনো দেখেনি"। খবরের স্ক্রিনশট দেখুন--
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, অনলাইন পোর্টালের খবরে করা দাবিটি বিভ্রান্তিকর। ছবিটি এমন কোনো প্রানীর নয় যা আগে দেখা যায়নি, বরং ছবিটি উইডি সি ড্রাগন নামের এক প্রকার সামুদ্রিক প্রাণীর যা অস্ট্রেলিয়ায় নিউ সাউথ ওয়েলসের ক্রনুল্লা, মালাবার এবং সেন্ট্রাল কোস্ট অঞ্চলে প্রায়ই দেখা যায়।
ছবিটি রিভার্স সার্চ করার পর, ভারতীয় সংবাদমাধ্যম 'নিউজ১৮'-এ "Vibrantly Coloured Seadragons Wash up on Australian Beaches after Record Rainfall" শিরোনামে একটি খবরে ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়। খবরে বলা হয়, প্রানীটি একটি সামুদ্রিক সি ড্রাগন। কয়েক দিন আগে রেকর্ড পরিমান বৃষ্টির পরে অস্ট্রেলিয়ার সমুদ্র সৈকতে ঘুরতে আসা পর্যটকেরা বিভিন্ন বিরল প্রাণী ভেসে আসতে দেখেন, এরমধ্যে এই সি ড্রাগনটির ছবিও রয়েছে। স্ক্রিনশট দেখুন--
আরও নিশ্চিত হবার জন্য সার্চ করার পর, অস্ট্রেলিয়ান সংবাদমাধ্যম দ্য সিডনি মর্নিং হেরাল্ড-এর " 'My god, what's happening?': Dead weedy seadragons wash up on Sydney beaches" শিরোনামে একটি প্রতিবেদনেও সি ড্রাগনের ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়, যা গত ১২ এপ্রিল প্রকাশিত হয়েছে। প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে, বেশ কয়েকদিন ধরে টানা বৃষ্টির পর অস্ট্রেলিয়ার সমুদ্রপৃষ্টের জলস্তর অনেকটা স্ফীত হয়ে উঠে দেশটির সমুদ্র সৈকতে বেশ কিছু বিরল সামুদ্রিক প্রাণী ভেসে আসে। যার মধ্যে সি ড্রাগনও ছিল। রঙ্গিন বৈচিত্রময় এই প্রাণীটি উইডি সি-ড্রাগন (weedy seadragon) বা সাধারণ সি-ড্রাগন(common seadragon) নামেও পরিচিত। প্রাণীগুলি অস্ট্রেলিয়ার পূর্ব এবং দক্ষিণ উপকূল বরাবর পাওয়া যায়। সিডনি ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির মেরিন ইকোলজির অধ্যাপক, ড. ডেভিড বুথ, সিডনি মর্নিং হেরাল্ডকে আরও জানান, এটি সাধারনত বিস্তৃত অঞ্চল জুড়ে চলাচল করে না। তবুও টানা দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া, অতিমাত্রায় দূষণের ফলে রং-বেরংয়ের সি-ড্রাগনগুলো পথভ্রষ্ট হয়ে সমুদ্র পাড়ে ভেসে এসে থাকতে পারে। ছবিগুলো বেটি র্যাটক্লিফ নামে একজন পর্যটক সামাজিক মাধ্যমে শেয়ার করেন। স্ক্রিনশট দেখুন--
বেটি র্যাটক্লিফের পোস্টটি দেখুন--
প্রাণীটি সম্পর্কে জানতে বিস্তারিত সার্চ করার পর, ২০১১ সালে প্রকাশিত অস্ট্রেলিয়ান ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশন-এ উইডি সি-ড্রাগন নিয়ে একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে তখন এই প্রানীটি সংরক্ষণের জন্য আইন প্রণয়ন করা হয়েছিল।
অর্থাৎ এটি নাম না জানা কোনো প্রানী নয় বা মানুষ এই ভিনপ্রজাতির প্রাণী কখনো দেখেনি বলে যে দাবি করা হচ্ছে অনলাইন পোর্টালের সংবাদে সেটিও সঠিক নয়। ছবিটি একটি উইডি সি-ড্রাগনের (weedy seadragon), বিরল হলেও সামুদ্রিক এই প্রানীটি ঐ অঞ্চলে প্রায়ই দেখা যায়।
সুতরাং অস্ট্রেলিয়ান সমুদ্রতটে ভেসে আসা উইডি সি-ড্রাগন ছবি দিয়ে বিভ্রান্তিকর খবর প্রকাশ করা হচ্ছে অনলাইন পোর্টালে।