ফেসবুকে বিভিন্ন প্রোফাইল ও গ্রুপে একটি ভিডিও ক্লিপ ছড়িয়েছে যেখানে দেখা যাচ্ছে একজন নার্স এক নারী ও এক পুরুষের শরীরে ইনজেকশনের সিরিঞ্জ পুশ করার চেষ্টা করছেন। তবে কারো শরীরেই সিরিঞ্জ পুশ করেননি।
ভিডিওটি পোস্ট করে দাবি করা হচ্ছে, ভারতের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা দেশটিতে উৎপাদিত ভ্যাকসিন বাস্তবে না নিয়ে বরং ক্যামেরার সামনে সেটা নেয়ার অভিনয় করছেন।
বুম বাংলাদেশ ভিডিওটির কী ফ্রেম সার্চ দিলে দেখা যায় অনুরূপ দাবি যুক্ত ভিডিও ক্লিপটি ভারতেও ভাইরাল হয়েছে। দেশটির নেটিজেনরা এভাবে ভ্যাকসিন নেয়ার ভুয়া অভিনয় করার সমালোচনা করে সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট দিয়েছেন। এর প্রেক্ষিতে ভারতীয় ফ্যাক্ট চেকিং সংস্থা 'লজিক্যাল ইন্ডিয়ান' এবং 'ইন্ডিয়া টুডে' ও 'ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস' এর মত মূলধারার সংবাদ মাধ্যম বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন করেছে।
বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের সূত্রে জানা যায়, ভ্যাকসিন নেয়ার ভিডিও ক্লিপটিতে দৃশ্যমান নারী ও পুরুষ হলেন যথাক্রমে কর্নাটকের তুমকুর সরকারী নার্সিং কলেজের অধ্যক্ষ ডা. রজনী এবং তুমকুর জেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা এমবি নগেন্দ্রপ্পা। গত ১৬ জানুয়ারী ভারতে দেশব্যাপী ভ্যাকসিন প্রয়োগ কার্যক্রমের প্রথম দিনেই করোনা মোকাবেলায় ফ্রন্টলাইনারদের উদ্বুদ্ধ করার জন্য তারা দুজনে একই ভেন্যুতে ভ্যাকসিন নেন।
'লজিক্যাল ইন্ডিয়ান' এমবি নগেন্দ্রপ্পার সাথে কথা বললে তিনি জানান, 'যেহেতু পৃথক একটি কক্ষে অপ্রকাশ্যে ভ্যাকসিন দেয়া হচ্ছিল তাই সাংবাদিকরা সংবাদের স্বার্থে আমাদেরকে ভ্যাকসিনের শটের সাথে ছবি তোলার পোজ দেয়ার জন্য অনুরোধ করলে আমরা সেভাবেই শুধু পোজ দেই। নির্দিষ্ট রুমে গিয়ে ঠিকই আমরা ভ্যাকসিন নিয়েছি। আমাদের এই ছবি তোলার পোজের ভিডিও ক্লিপকে কিছু মানুষ বিভ্রান্তিকরভাবে ছড়িয়ে দাবি করছেন আমরা ভ্যাকসান নেইনি।'
লজিক্যাল ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনটি দেখুন এখানে। নগেন্দ্রপ্পা জানান যে, তিনি এই অপপ্রচারের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। তার মতে তারা যে ভ্যাকসিন নিয়েছেন এর সংশ্লিষ্ট কাগজপত্রও তার কাছে আছে।
অধ্যক্ষ ডা: রজনীও স্থানীয় এক সাংবাদিকের কাছে দেয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, 'গত ১৬ জানুয়ারী আমি ভ্যাকসিন নেয়ার পর কিছু সাংবাদিক সেখানে আসেন এবং ছবি তুলতে চান। তখন তাদের স্বার্থে আমি পুনরায় ভ্যাকসিন নেয়ার মত করে বসি।' (রজনীর ভিডিও বক্তব্য শুনুন লজিক্যাল ইন্ডিয়ান এর
প্রতিবেদনে ক্লিক করে)।
কর্নাটকের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা: সুধাকরও এই ব্যাপারে 'ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে' তার বক্তব্য দিয়েছেন এবং জানিয়েছেন যে এই দু'জন কর্মকর্তা আসলেই ভ্যাকসিন নিয়েছেন। সাংবাদিকদের অনুরোধে ছবিটি তোলা হয় বলেও তিনি জানান। দেখুন এখানে।
কর্নাটক সরকারের 'ডিপার্টমেন্ট অব হেল্থ অ্যান্ড ফ্যামিলি ওয়েলফেয়ার সার্ভিসেস' এর ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ থেকেও 'ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস' এর বরাতে বিষয়টি নিয়ে ব্যাখ্যামূলক পোস্ট দেয়া হয়েছে।
অর্থাৎ, ইন্টারনেটে ছড়ানো ভিডিওটি ভ্যাকসিন গ্রহণের অভিনয় বা বিজ্ঞাপন ছিলো না। বরং ভ্যাকসিন গ্রহণের পর সংবাদকর্মীদের অনুরোধে সংবাদমাধ্যমের জন্য তোলা ছবি ও ফুটেজ ছিলো।