সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকের একাধিক আইডি, পেজ ও গ্রুপে একটি বাইক পোড়ানোর দৃশ্য এবং কয়েকটি আলাদা আলাদা ক্লিপ যুক্ত করে তৈরি একটি ভিডিও শেয়ার করে বলা হচ্ছে, জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি করায় রেগে বাইকে আগুন দিয়েছেন এক যুবক। এরকম দুটি পোস্ট দেখুন এখানে ও এখানে।
গত ১০ আগস্ট 'লক্ষ্মীপুর টিভি' নামের একটি ফেসবুক পেজে একটি ভিডিও শেয়ার করে বলা হয়, "তেলের দাম বৃদ্ধি রেগে বাইকে আ'গুন দিল যোবক | জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি নিয়ে একি বললো"। পোস্টটির স্ক্রিনশট দেখুন---
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, ভিডিওর ক্যাপশনে করা দাবিটি সঠিক নয়। ক্যাপশনে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধিকে বাইকে আগুন লাগানোর কারণ হিসেবে লেখা হলেও মূলত বাইকের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেখাতে না পারায় ট্রাফিক পুলিশ ওই চালকের বিরুদ্ধে মামলা দিলে চালক নিজেই নিজের বাইকে আগুন ধরিয়ে দেন।
কী-ওয়ার্ড সার্চ করে বেসরকারি টিভি চ্যানেল আরটিভির অনলাইন সংস্করণ 'Rtvonline'-এ "মোটরসাইকেলে আগুন দিয়ে যা বললো যুবক (ভিডিও)" শিরোনামে একটি ভিডিওসহ প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। ওই প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, রাজশাহীতে সড়কে মোটরবাইক আটকানোর প্রতিবাদে আশিক আলী (২৫) নামে এক যুবক তার বাইকে আগুন ধরিয়ে দেন। স্ক্রিনশট দেখুন--
আরো সার্চ করে আরেকটি বেসরকারি টিভি চ্যানেল 'Jamuna Television'-এর ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে গত ৮ আগস্ট প্রকাশিত "অনুরোধ রাখলো না ট্রাফিক পুলিশ, ক্ষোভে আগুন দিলেন নিজের বাইকে!" শিরোনামে একটি ভিডিও প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। ওই প্রতিবেদন থেকে জানা যায় যে, গত ৮ আগস্ট ঘটনার দিনে রাজশাহী নগরীর কাঁঠালবাড়িয়া এলাকার বাসিন্দা ব্যবসায়ী আশিক আলী ট্রাফিক পুলিশকে বাইকের বৈধতার কাগজপত্র দেখাতে ব্যর্থ হলে, পুলিশ মামলা দিয়ে বাইক জব্দ করে। এতে ওই চালক ক্ষুব্ধ হয়ে নিজের বাইকে আগুন ধরিয়ে দেন। ফেসবুক পোস্টটি দেখুন--
এছাড়াও, যুগান্তর, কালের কণ্ঠ, বাংলা নিউজ ২৪, বিডিনিউজ ২৪ এই বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে। কিন্তু, ভাইরাল ভিডিওর দাবি অনুযায়ী, তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে ক্ষুব্ধ হয়ে বাইক পোড়ানোর মত কোনো ঘটনার সম্পৃক্ততা এখানে ছিল না।
এসব প্রতিবেদনে পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে জানা যায়, মোটরসাইকেলের কাগজপত্র দেখাতে না পারায় ট্রাফিক পুলিশ মামলা দেওয়ায় ওই বাইক চালক নিজেই তার বাইকটিতে আগুন ধরিয়ে দেন। আলোচ্য ভিডিওতেও প্রত্যক্ষদর্শীদের কিছু বক্তব্য রয়েছে, যেখানে বাইকে আগুন দেয়ার একই কারণ তারা উল্লেখ করেন। তবে ভাইরাল ভিডিওর একাংশে দৃশ্যমান মাথায় বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা বাঁধা ব্যক্তির সাথে বাইক পোড়ানোর ঘটনার কোনো সম্পৃক্ততা নেই।
অর্থ্যাৎ বাইকের বৈধতার কাগজপত্র দেখাতে না পারায় মামলা দেওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে বাইক পোড়ানোর ঘটনাকে তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে বাইক পোড়ানোর ঘটনা হিসেবে প্রচার করা হচ্ছে, যা বিভ্রান্তিকর।