ফেসবুকে কিছু পোস্ট দেখা যাচ্ছে যেখানে দাবি করা হয়েছে, ইংল্যান্ডে নতুন একটি ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে মানুষদের মধ্যে যা কিনা করোনা ভাইরাসের থেকেও গুরুতর। । এছাড়া একটি লিংকও যুক্ত করা হয়েছে। দেখুন এখানে।
২১ ডিসেম্বর 'জানেন তো ?' নামের একটি পেইজ একটি ছবি পোস্ট করা হয়। সাথে একটি লিংকও পোস্টটির রেফারেন্স হিসেবে যোগ করা হয়েছে। লিংকটিতে ক্লিক করলে দেখা যায়, সেটি কানাডার সংবাদমাধ্যম সিবিসি এর একটি প্রতিবেদন। সেখানে ব্রিটেনে করোনা ভাইরাসের নতুন একটি ধরনের দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার বিষয়ে বিভিন্ন তথ্য দেয়া হয়েছে। পোস্টটির স্ক্রিনশট দেখুন--
ছবিটিতে করা দাবিগুলো ছিল-
- ইংল্যান্ডে নতুন একটি ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে মানুষদের মধ্যে যা কিনা করোনা ভাইরাসের থেকেও গুরুতর।
- এই ভাইরাসটি করোনা ভাইরাসের অন্য এক শাখা।
- আর এই ভাইরাসের জন্য আপাতত কোনো টিকা নেই।
- এই ভাইরাসে এখন পর্যন্ত সেখানে ৬ হাজার মানুষ আক্রান্ত হয়েছে এবং সংখ্যা বাড়ছে।
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ উক্ত পোস্টটি যাচাই করে দেখেছে, পোস্টটি বিভ্রান্তিকর। প্রথমত পোস্টের প্রথম দাবিটিতে বলা হয়েছে, নতুন আবিস্কৃত ভাইরাসটি করোনার চেয়েও বেশি গুরুতর। কিন্তু উক্ত পোস্টে উল্লেখ করা খবরটিতেই পাওয়া যায় ভিন্ন বক্তব্য। সেখানে প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের বরাতে লেখা হয়েছে, "There's no evidence to suggest it is more lethal or causes more severe illness," he stressed, or that vaccines will be less effective against it." দেখুন সেই প্রতিবেদনের স্ক্রিনশট--
অর্থাৎ, ভাইরাসের নতুন ধরনটি বেশি ছড়ালেও তা বেশি ক্ষতিকর বা এটিতে ভ্যাকসিন কম কার্যকরি হবে তেমন কোনো প্রমাণ মিলেনি।
বিবিসির এক প্রতিবেদনেও জানানো হয়েছে, ব্রিটেনে ধরা পড়া ভাইরাসের নতুন ধরনটি বেশি ক্ষতিকর বা বর্তমানের চেয়ে বেশি গুরুতর কোনো অসুস্থতা ঘটায়- এমন কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি এখনও।
ফেসবুক পোস্টে করোনার নতুন শাখা ভাইরাস আবিস্কারের দ্বিতীয় দাবিটি সম্পূর্ণ তথ্য নয়। চলমান কোভিড-১৯ এর জন্য দায়ী ভাইরাসটি বিগত মাসগুলোতে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে কয়েক হাজারবার রূপ বদলেছে। এই প্রক্রিয়াকে বলে মিউটেশন (Mutation)। ফলে ব্রিটেনে যে দেখা দেয়া করোনার নতুন যে 'শাখা'র কথা বলা হয়েছে সেটিও এই ভাইরাসের নিয়মিত মিউটেশনের অংশ। এটি একদম নতুন কোনো ভাইরাস নয়। দেখুন একই খবরের স্ক্রিনশট--
"এই ভাইরাসের জন্য আপাতত কোনো টিকা নেই" বলে তৃতীয় যে দাবিটি করা হয়েছে সেটি ভুয়া। কারণ উপরের খবরেই বরিস জনসন জানিয়েছেন, বর্তমানে বাজারে থাকা টিকাগুলো করোনা ভাইরাসের এই নতুন ধরনের ক্ষেত্রে কম কার্যকরী হবে এমন কোনো প্রমাণ মেলেনি।
বিবিসির প্রতিবেদনে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের বরাতে বলা হয়েছে--
তবে আরও মিউটেশন অব্যাহত থাকলে চলমান ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা কমে যেতেও পারে। সেক্ষেত্রে কোভিড-১৯ এর ভ্যাকসিনকে সাধারণ ফ্লু এর ভ্যাকসিনের মতো নিয়মিত আপডেট করা লাগতে পারে। যদিও গঠনগত কারণে কোভিড-১৯ এর ভ্যাকসিনকে নিয়মিত আপডেট করা সহজ হবে। এমনটাই বলা হয়েছে বিবিসির এই প্রতিবেদনে।
৬ হাজারের বেশি মানুষ নতুন ধরনের ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে বলে যে তথ্য দেয়া হয়েছে ফেসবুক পোস্টে সেরকম নির্দিষ্ট সংখ্যা নির্ভরযোগ্য কোনো সংবাদমাধ্যমে পাওয়া যায়নি। তবে এক হাজারের বেশি মানুষ গত সপ্তাহে আক্রান্ত ছিলেন এমন তথ্য পাওয়া গেছে। এবং এটা সত্য যে, ভাইরাসের এই ধরনটি দ্রুত ছড়াচ্ছে।
তাই ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া নতুন ভাইরাসের ব্যাপারে করা পোষ্টটির একাধিক দাবি ভিত্তিহীন ও বিভ্রান্তিকর।