সামাজিক মাধ্যমে একাধিক সংবাদমাধ্যমের বরাতে একটি খবরে দাবি করা হয়, ভারতে করোনার টিকা না নিতে পালিয়ে বেড়াচ্ছে নার্সরা। দেখুন বেশ কিছু খবরের লিংক এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে।
গত ২২ জানুয়ারি আরটিভি'র একটি খবরের শিরোনাম করা হয়, "করোনার টিকা না নিতে পালিয়ে বেড়াচ্ছে ভারতের স্বাস্থ্যকর্মীরা"। বিস্তারিত খবরে দাবি করা হয়, ১৬ জানুয়ারি থেকে ভারতব্যাপী করোনা টিকাদান কর্মসূচি শুরু হয়। কিন্তু এরই মধ্যে দেশটিতে টিকা নেয়ার পর তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। এতেই আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে দেশটির স্বাস্থ্যকর্মীরা। এখন টিকা না নিতে রীতিমতো পালিয়ে বেড়াচ্ছেন তারা।
দেখুন খবরটির স্ক্রিনশট--
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, খবরটি বিভ্রান্তিকর।
প্রথমত, শিরোনামে ভারতের স্বাস্থ্যকর্মীদের পালিয়ে বেড়ানোর দাবি করা হলেও একই খবরের বিস্তারিত অংশে সেরকম কিছুর উল্লেখ নেই। টাইমস অফ ইন্ডিয়ার বরাতে দিল্লীতে ভ্যাকসিন নিতে যে অনাগ্রহের কথা বলা হচ্ছে, সেটি মূলত ভারতের নিজস্ব প্রতিষ্ঠান বায়োটেক কর্তৃক উদ্ভাবিত ভ্যাকসিন কোভ্যাক্সিন সংক্রান্ত। "Resident docs in RML Hospital want Covishield, expresses 'bit apprehension' about Covaxin" শিরোনামের সেই খবরে নয়াদিল্লীর আর এম এল হাসপাতালের চিকিৎসকরা এক চিঠিতে তাদের পরিচালককে জানিয়েছিলেন, তারা ভারতের তৈরি কোভ্যাক্সিন এর ব্যাপারে 'কিছুটা উদ্বিগ্ন' যেহেতু এটির ব্যাপারে এখনো পর্যাপ্ত তথ্য পাওয়া যায়না। তারা বরং এস্ট্রোজেনেকার কোভিশিল্ড ভ্যাকসিন নিতে আগ্রহী। কিন্তু ভ্যাকসিন নিবে না বলে পালিয়ে বেড়াচ্ছে এমন কিছুই টাইমস অফ ইন্ডিয়ার খবরে পাওয়া যায়নি।
আরটিভির খবরটির শেষাংশে দিল্লীর পাশাপাশি বিহারে ভ্যাকসিন নিতে স্বাস্থ্যকর্মীদের অনাগ্রহের কথা উঠে এসেছে। সে ব্যাপারেও টাইমস অফ ইন্ডিয়া একটি প্রতিবেদন করেছে। সেই খবরমতে, বিহারের পাটনায় ডাক্তার এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীরা ভারতের নিজস্ব ভ্যাকসিন 'কোভ্যাক্সিন' নিতে আগ্রহী নয় কেননা এটি এখনো থার্ড ট্রায়াল স্টেজ সমাপ্ত করেনি।
সুতরাং ভারতীয় খবরমাধ্যম অনুযায়ী ভ্যাকসিনের প্রতি ভারতে যে অনাগ্রহ তৈরি হয়েছে সেটি নির্দিষ্টভাবে ভারতের নিজস্ব প্রতিষ্ঠান বায়োটেকের কোভ্যাক্সিনকে ঘিরে, এস্ট্রোজেনেকার কোভিশিল্ড নিয়ে নয়। কিন্তু সেটি আরটিভির খবরটির শিরোনামে স্পষ্ট করা হয়নি। এছাড়া একই খবরের শিরোনাম অনুযায়ী, ভারতে স্বাস্থ্যকর্মীরা কোভ্যাক্সিন নিবেনা বলে পালিয়ে বেড়াচ্ছে এমন কোনো তথ্য কোনো সংবাদমাধ্যমে পাওয়া যায়নি।
অর্থাৎ ভারতে স্বাস্থ্যকর্মীরা করোনা টিকা না নিতে পালিয়ে বেড়াচ্ছে এমন দাবি বিভ্রান্তিকর।