সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকের একাধিক পেজ থেকে একটি ভিডিও শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে, শ্রীলঙ্কার তথ্যমন্ত্রীকে মারছে দেশটির বিক্ষোভকারীরা। ভিডিওতে দেখা যায় এক ব্যক্তি অসহায় অবস্থায় রাস্তায় ঘুরছে এবং শেষ দিকে একটি স্থানে বসে পড়েছে। এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে।
গত ১১ মে 'Md Nayem' নামের ফেসবুক আইডি থেকে ভিডিওটি শেয়ার করে লেখা হয়, "শ্রীলংকান তথ্যমন্ত্রী, যিনি কথায় কথায় স্বাধীনতা বিরোধিতাকারী যাতে সুযোগ নিতে না পারে বলে টিভিতে ভাষন দিতেন আজ তারে দৌড়ায়ে দৌড়ায়ে মারলো জনতা 😭"। স্ক্রিনশট দেখুন--
আবার গত ১০ মে 'Sayem Nufa' নামের একটি ফেসবুক আইডি থেকে একই ভিডিওটি পোস্ট করে শ্রীলঙ্কার এমপি দাবি করা হয়েছে। স্ক্রিনশট দেখুন--
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, ক্যাপশনে করা দাবিটি বিভ্রান্তিকর। ভিডিওতে দেখতে পাওয়া ব্যক্তি শ্রীলঙ্কা সরকারের তথ্যমন্ত্রী কিংবা এমপি নন বরং মাহিন্দা কাহান্দাগামা নামের ঐ ব্যক্তি দেশটির সরকার সমর্থিত একটি ট্রেড ইউনিয়নের নেতা।
ভিডিওটি থেকে কী-ফ্রেম কেটে রিভার্স সার্চ করার পর, সিংহলি ভাষী সাপ্তাহিক সংবাদপত্র মাওবিমা-এ (Mawbima) একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়, যেখানে আলোচ্য ভিডিওতে দেখতে পাওয়া ব্যক্তির ছবি ব্যবহার করা হয়েছে। গত ৯ মে "අරගලකරුවන්ට ගහන්න ආ මහින්ද කහඳගමට ලැබුණු අනපේක්ෂිත දඬුවම (Unexpected punishment meted out to Mahinda Kahandagama who came to attack the protesters-গুগল স্বয়ংক্রিয় অনুবাদ)" শিরোনামে প্রকাশিত ঐ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভিডিওতে দৃশ্যমান মাহিন্দা কাহান্দাগামা ক্ষমতাসীন দল শ্রীলংকা পিপলস ফ্রন্ট (এসএলপিপি) সমর্থিত একজন ট্রেড ইউনিয়ন নেতা বা শ্রমিক সংগঠনের নেতা। দেশটিতে সাম্প্রতিক সরকারবিরোধী বিক্ষোভে আক্রমন করতে এসে উল্টো বিক্ষোভকারীদের দ্বারাই তিনি আক্রান্ত হন। স্ক্রিনশট দেখুন--
একই ব্যক্তির আক্রান্ত ভিডিওটি শ্রীলঙ্কার প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম ডেইলি মিররের টুইটার হ্যান্ডেলেও পোস্ট করে মাওবিমা সংবাদমাধ্যম অনুরূপ বিবরণ দেয়া হয়েছে।
সার্চ করার পর, মাহিন্দা কাহান্দাগামা নামের এই ট্রেড ইউনিয়ন নেতার সাথে সম্পর্কিত বেশ কিছু খবর খুঁজে পাওয়া গেছে। যেমন ২০১৮ সালে শ্রীলঙ্কার সংবাদমাধ্যম নিউজফার্স্ট ডটএলকে-এর একটি প্রতিবেদনে ট্রেড ইউনিয়ন নেতাদের একটি সভায় তার উপস্থিত থাকার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। স্ক্রিনশট দেখুন--
পাশাপাশ, শ্রীলঙ্কার সরকারী ওয়েবসাইটে তথ্যমন্ত্রী সম্পর্কিত তথ্যের জন্য অনুসন্ধান করে দেখা যায়, দেশটি তথ্য ও গণমাধ্যম মন্ত্রণালয় সংক্ষেপে গণমাধ্যম মন্ত্রণালয়-এ দায়িত্বশীল সর্বশেষ মন্ত্রী হিসাবে নালাকা গোদাহেবা-এর নাম উল্লেখ করা হয়েছে। যিনি কিছুদিন আগেই মন্ত্রীত্ব ত্যাগ করেছেন।
অর্থাৎ ভিডিওতে দেখতে পাওয়া ব্যক্তি শ্রীলঙ্কা সরকারের কোনো এমপি বা মন্ত্রী নন, বরং সরকার সমর্থিত একটি ট্রেড ইউনিয়নের নেতা তিনি।
সুতরাং বিক্ষোভকারীদের হাতে আক্রান্ত শ্রীলঙ্কার একজন ট্রেড ইউনিয়ন নেতাকে দেশটির তথ্যমন্ত্রী দাবি করা হচ্ছে সামাজিক মাধ্যমে, যা বিভ্রান্তিকর।