সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি ভিডিও পোস্ট করে বলা হয়েছে, ভারতে এক মুসলিম ব্যক্তিকে জোর করে 'জয় শ্রীরাম' বলানো হয়েছে। এরকম কয়েকটি পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে ও এখানে।
গত ৩ সেপ্টেম্বর 'Minhaj Hossain' নামের পেজ থেকে ভিডিওটি পোস্ট করা হয়। পোস্টে উল্লেখ করা হয়, "জোর করে জয় শ্রীরাম বলানো হয় ইন্ডিয়াতে....কোনো মুসলিম দেশে জোর করে কাউকে আল্লাহু আকবর বলানো হইছে"। পোস্টটির স্ক্রিনশট দেখুন--
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, আলোচ্য পোস্টের দাবিটি সঠিক নয়। ২০২২ সালে এক কিশোরীকে হেনস্থার অভিযোগে উপস্থিত জনতা কর্তৃক অভিযুক্ত ব্যক্তিকে মারধরের একটি ভিডিওতে, ২০২১ সালে এক ব্যক্তিকে 'জয় শ্রীরাম' বলতে বাধ্য করার ভিন্ন ঘটনার অডিও যুক্ত করে সম্পাদিত ভিডিওটি ভারতের সাম্প্রতিক ঘটনা দাবি করে বাংলাদেশে প্রচার করা হচ্ছে।
ভিডিওটি থেকে কি-ফ্রেম নিয়ে ছবি রিভার্স ইমেজ সার্চ এর মাধ্যমে সামাজিক মাধ্যম এক্স (সাবেক টুইটার) এর ‘@Kshatriya_Guts’ ইউজারনেমের একটি অ্যাকাউন্ট থেকে ২০২২ সালের ৯ মে প্রকাশিত মূল সংস্করণের ভিডিওটি পাওয়া যায়। মূল ভিডিওটিতে জয় শ্রীরাম বলতে বাধ্য করার মতো কোনো বিষয় বা অডিও পাওয়া যায়নি। ভিডিওটির প্রিভিউ দেখুন--
ভিডিওতে হিন্দি ভাষায় অভিযোগ করে বলতে শোনা যায়, অভিযুক্ত ব্যক্তি একটি মেয়েকে উত্যক্ত করেছে।
এদিকে এক্স (টুইটার) এর ভিডিওটির সাথে পোস্টে উল্লেখ করা হয়, "দিল্লির শাহদারার নথু কলোনি চকে, ৪০- ৪৫ বছর বয়সী এক ব্যক্তি মাত্র ১৪ বছর বয়সী একটি মেয়েকে গত ৫ দিন ধরে শ্লীলতাহানি করছিল। আজ লোকটিকে মেয়েটির পিতা-মাতা ও আত্মীয় স্বজনেরা হাতেনাতে ধরেছে (অনূদিত)।"
এই তথ্যের সূত্র ধরে কি-ওয়ার্ড সার্চ এর মাধ্যমে ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম 'দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস'-এ ২০২২ সালের ১২ মে "Delhi: Man stalks, molests 13-yr-old, thrashed by her parents, locals" শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়।
এতে উল্লেখ করা হয়, মেয়েটির অভিযোগের ভিত্তিতে ২০২২ সালের ৭ মে শ্লীলতাহানির অভিযোগে অভিযুক্ত ইরফান খানের (৩৭) বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। তিনি পেশায় একজন হিসাবরক্ষক। ইরফানকে বিচার বিভাগীয় হেফাজতে পাঠানো হয়েছে। প্রতিবেদনটির স্ক্রিনশট দেখুন--
অর্থাৎ আলোচ্য ভিডিওটি কোনো সাম্প্রদায়িক ঘটনার নয় বরং ২০২২ সালের মে মাসে এক কিশোরীকে শ্লীলতাহানীর জেরে সংঘটিত একটি ঘটনার দৃশ্য। এছাড়া, ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ের কোনো ঘটনারও নয়।
যেহেতু আলোচ্য প্রচারিত ভিডিওর মূল অডিও পরিবর্তন করা হয়েছে। সেহেতু অডিওটির খোঁজে সংশ্লিষ্ট কি-ওয়ার্ড ব্যবহার করে সামাজিক মাধ্যম এক্স (সাবেক টুইটার) এর 'Anurag Dwary' নামের একটি অ্যাকাউন্ট থেকে ২০২১ সালের ২৯ আগস্ট প্রকাশিত আলোচ্য অডিওর (জয় শ্রীরাম বলতে বাধ্য করার চেষ্টা) মূল ভিডিওটি পাওয়া যায়। ভিডিওটির প্রিভিউ দেখুন--
অর্থাৎ আলোচ্য ভিডিওটিতে ভিন্ন একটি ঘটনার অডিও যুক্ত করে প্রচার করা হয়েছে।
এছাড়াও প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী ভারতীয় ফ্যাক্ট-চেকিং প্রতিষ্ঠান 'বুম লাইভ' এর 'Video Of Muslim Man Thrashed In Delhi Given False Communal Hue' শিরোনামে একটি ফ্যাক্ট-চেকিং প্রতিবেদন পাওয়া যায়। এতে উল্লেখ করা হয়, ভিডিওতে থাকা লোকটিকে দিল্লির শাহদারা এলাকায় ১৩ বছর বয়সী এক কিশোরীকে হয়রানির অভিযোগে জনগণ মারধর করেছিল। এছাড়াও আলোচ্য ব্যক্তিকে জয় শ্রীরাম বলতে বাধ্য করা হয়নি (অনূদিত ও সংক্ষেপিত)।
এতে আরো উল্লেখ করা হয়, বুম শাহদারা পুলিশের ডিসিপি আর সাথিয়াসুন্দরামের কাছে জানতে চাইলে তিনি বুমকে নিশ্চিত করেছেন আলোচ্য ভিডিওর সহিংসতা প্রকৃতপক্ষে স্টাকিং এবং হয়রানির অভিযোগের ফলস্বরূপ ঘটেছে। প্রতিবেদনটির স্ক্রিনশট দেখুন--
অর্থাৎ ২০২২ সালে এক কিশোরীকে হেনস্থার অভিযোগে উপস্থিত জনতা কর্তৃক অভিযুক্ত ব্যক্তিকে মারধরের ভিডিওতে ২০২১ সালের ভিন্ন একটি ঘটনার অডিও যুক্ত করে, ভিডিওটি ভারতের সাম্প্রতিক সময়ের ঘটনার বলে বাংলাদেশে প্রচার করা হচ্ছে।
সুতরাং সম্প্রতি সামাজিক মাধ্যমে পুরোনো একটি ঘটনার ভিডিওতে, ভিন্ন এক ঘটনার অডিও যুক্ত করে 'ভারতে এক মুসলিম ব্যক্তিকে জোর করে জয় শ্রীরাম বলানো হয়েছে' মর্মে যে তথ্য প্রচার করা হচ্ছে; তা বিভ্রান্তিকর।