সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ইরানের সাবেক প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আহমাদিনেজাদ এর একটি ছবি পোস্ট করে বলা হচ্ছে; তিনি এখন গ্রামে মেষ পালন করছেন। এরকম কয়েকটি পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে ও এখানে।
গত ২২ মে 'Mirza Tarequl Qader' নামের একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে ইরানের সাবেক প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আহমাদিনেজাদের একটি ছবি পোস্ট করে বলা, "ছবির ভদ্রলোককে কি আপনারা চিনতে পেরেছেন? বিশ্বব্যাপী আলোচিত-সমালোচিত একটি দেশের দুই মেয়াদে প্রেসিডেন্ট ছিলেন তিনি। এখন তিনি মেষ পালন করেন। সাবেক প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রাপ্য ভাতা (প্রতি মাসে) গ্রহণ না করে সমুদয় অর্থ দান করে দিয়েছেন। .............. এখন তিনি চলাচল করেন সাধারণ বাসে। কারণ তাঁর ব্যক্তিগত পিউজিয়ট গাড়িটি বিক্রি করে দিতে হয়েছে সংসার চালানোর জন্য। এই সাবেক প্রেসিডেন্টের স্ত্রী একজন মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার। সুখী এই দম্পতির দুই ছেলে এক মেয়ে! সন্তানদের তিনি কোন রাষ্ট্রীয় সুবিধা ভোগ করতে দেননি! যাকে নিয়ে এতো কথা,তিনি হলেন ইরানের সাবেক প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আহমাদিনেজাদ"। পোস্টটির স্ক্রিনশট দেখুন--
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, দাবিটি সঠিক নয়। ইরানের সাবেক প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আহমাদিনেজাদ এখন গ্রামে মেষ পালন করছেন না বরং তিনি তেহরানে বসবাস করছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতার পাশাপাশি ইরানের রাজনীতির সাথেও জড়িত রয়েছেন। আলোচ্য ছবিটি ২০১৬ সালে ইরানের কান্দলোস গ্রাম ভ্রমণের সময়ে তোলা হয়েছে।
কি-ওয়ার্ড সার্চ করে মাহমুদ আহমাদিনেজাদের মেষ পালনের কোনো তথ্য গ্রহণযোগ্য কোনো মাধ্যমে পাওয়া যায়নি। পরবর্তীতে আলোচ্য ছবিটি রিভার্স ইমেজ সার্চ এর মাধ্যমে সামাজিক মাধ্যম 'এক্স (সাবেক টুইটার)'-এ ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসি এর অনুসন্ধানি ও ফ্যাক্ট চেক বিভাগ 'বিবিসি ভেরিফাই' এর সাংবাদিক "Shayan Sardarizadeh" এর ভেরিফায়েড অ্যাকাউন্টে গত ২২ মে আলোচ্য ছবিটির মূল ছবিসহ প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনের স্ক্রিনশট জুড়ে দেয়া একটি পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়। পোস্টে বলা হয়, ইরানের সাবেক প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আহমাদিনেজাদ ২০১৩ সালে তার মেয়াদ শেষ হওয়ার পর থেকে মেষ-ভেড়া পালন করছেন শীর্ষক তথ্যটি সত্য নয়। তিনি তেহরানে বসবাস করছেন এবং এখানেই কাজ করছেন। পোস্টটির স্ক্রিনশট দেখুন--
এর সূত্র ধরে সার্চ করে আলোচ্য এক্স (টুইটার) পোস্টের স্ক্রিনশটের প্রতিবেদনটি (আর্কাইভ) খুঁজে পাওয়া যায়। মাহমুদ আহমাদিনেজাদ এর আলোচ্য ছবি সহ প্রতিবেদনটি পার্সিয়ান ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ১৩৯৫-এ তথা গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ২০১৬ সালে প্রকাশিত হয়। এতে ছবিটির বর্ণনায় উল্লেখ করা হয়, নিজের ৬০ তম জন্মদিনে গতকাল শুক্রবার মাজানদারান প্রদেশের নওশাহর কাউন্টির কাজুর জেলার কান্দলোস গ্রামে গিয়েছিলেন এবং সেখানকার মানুষের সাথে দেখা করেন ইরানের সাবেক প্রেসিডেন্টের আহমাদিনেজাদ। এসময়ে তিনি ড. আব্দুল রেজা শেখুল ইসলামির সাথে উঁচু পাহাড় ভ্রমণ করেন।
ফেসবুকে প্রচারিত ছবি (বামে) ও ইরানের সংবাদ মাধ্যমে পাওয়া মূল ছবির (ডানে) পাশাপাশি তুলনা দেখুন--
এর আগে ২০১৮ সালে একই ছবি ব্যবহার করে 'আহমাদিনেজাদ মেষ পালন করছেন' এমন দাবি তুরস্কের সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ফ্রান্স ভিত্তিক আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ও ফ্যাক্ট চেক সংস্থা 'The France 24 Observers' দাবিটিকে অসত্য প্রমাণ করে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। তুরষ্কের ফ্যাক্ট-চেক সংস্থা 'তেয়িত'ও দাবিটিকে 'অসত্য' বলে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। The France 24 Observers এর স্ক্রিনশট দেখুন--
উপরের দুটি ফ্যাক্ট-চেক প্রতিবেদনে বলা হয়, ইরানের সাবেক প্রেসিডেন্ট এখন দেশটির রাজধানী তেহরানে কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে বসবাস করছেন এবং তিনি ইরানের বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতার পাশাপাশি দেশটির রাজনীতিতেও জড়িত আছেন। প্রেসিডেন্ট থাকাকালে সরকারি অর্থ অপব্যবহারের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা চলছে।
এদিকে সার্চ করে ২০২৩ সালে বাইডেন প্রশাসন (যুক্তরাষ্ট্র) কর্তৃক আহমাদিনেজাদকে স্যাংশন দেওয়ার খবর পাওয়া যায়। এছাড়া চলতি মে মাসের শুরু দিকে হাঙ্গেরির রাজধানী বুদাপেস্টে একটি ইউনিভার্সিটিতে লেকচার দেওয়া ও গত বছরের অক্টোবরে গুয়েতেমালা ভ্রমণের খবরও পাওয়া যায়।
গত ১৭ মে 'ইরানওয়্যার' এর সাইটে আহমাদিনেজাদ কর্তৃক বর্তমানে ইরানে রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের নীরব প্রচেষ্টা নিয়েও একটি নিবন্ধ পাওয়া যায়। এই প্রতিবেদনগুলোও প্রমাণ করে তিনি এখনও ইরানের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত রয়েছেন। তবে এসব প্রতিবেদনের সব তথ্য আলাদা করে যাচাই করে দেখেনি বুম বাংলাদেশ।
অর্থাৎ ২০১৬ সালে ইরানের সাবেক প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আহমাদিনেজাদ গ্রামে মেষ পালন করছেন না বরং তিনি তেহরানেই বসবাস করছেন। আর আলোচ্য ছবিটি ২০১৬ সালে তাঁর পাহাড়ে ঘুরতে যাওয়ার ছবি।
সুতরাং সামাজিক মাধ্যমে আহমাদিনেজাদের ছবি দিয়ে মেষ পালন করছেন মর্মে যে তথ্য প্রচার করা হচ্ছে; তা বিভ্রান্তিকর।