সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকের একাধিক আইডি, গ্রুপ ও পেজে ইন্দোনেশিয়ার বিশ হাজার রুপির একটি ছবি শেয়ার করে বলা হচ্ছে, ইন্দোনেশিয়ার বিশ হাজার রুপিয়ার নোটে এখনো গণেশের ছবি ছাপা হয়। এরকম কয়েকটি পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে ও এখানে।
গত ২ সেপ্টেম্বর 'দেবী' নামের একটি ফেসবুক গ্রুপে 'Biswa Jit' নামে একটি আইডি থেকে বিশ হাজার ইন্দোনেশিয়ান রুপির একটি ছবি শেয়ার করে লেখা হয়, "কেন মুসলিম অধ্যুষিত দেশ ইন্দোনেশিয়ার টাকায় গণেশের ছবি থাকে, কারণ জানলে অবাক হবেন। ইন্দোনেশিয়ার নোটের সামনের দিকে রয়েছে গণেশ এবং পিছনে রয়েছে ক্লাসরুমের ছবি। সেটি শিক্ষক ও পড়ুয়াদের জন্যই রাখা হয়েছে। আসলে, গণেশকে সেদেশের শিক্ষা, শিল্প ও বিজ্ঞানের দেবতা হিসাবে বিবেচনা করা হয়।বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম থেকে জানা যায় কয়েক বছর আগে ইন্দোনেশিয়ার অর্থনীতি ব্যাপকভাবে ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছিল। সেদেশের জাতীয় অর্থনীতিবিদেরা প্রস্তাব দেন, নোটের উপরে গণেশের মূর্তি ছাপা হলে পুনরায় অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াবে। এবং সেটাই হয়েছিলো🕉️ ঠিক সেই বিশ্বাস থেকেই আজও ইন্দোনেশিয়ার নোটে গণেশের ছবি ছাপা হয়, যাতে দেশ ফের অর্থনীতির টালমাটাল অবস্থায় না পড়ে।" পোস্টটির স্ক্রিনশট দেখুন--
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, ইন্দোনেশিয়ার নোটে এখনো গণেশের ছবি ছাপা হওয়ার দাবিটি সঠিক নয়। ইন্দোনেশিয়ার বিশ হাজার রুপিয়ায় গণেশের ছবি সম্বলিত ব্যাংক নোটটি ২০০৮ সালেই বাতিল ঘোষিত হয়।
ছবিটির রিভার্স ইমেজ সার্চ করে উইকিমিডিয়া কমন্সের ওয়েবসাইটে 'Indonesian currency issued 1998-2005.' ডেস্ক্রিপশনে ইন্দোনেশিয়ান রুপিয়ার একটি ছবি খুঁজে পাওয়া যায়। ওই ছবিটি এবং আলোচ্য মুদ্রার ছবিটি হুবহু এক। পোস্টটির অথর হিসেবে ইন্দোনশিয়ার জাতীয় ব্যাংক 'ব্যাংক ইন্দোনেশিয়া' এর নাম উল্লেখ করা হয়েছে। ১৯৯৮ সাল থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত ওই মুদ্রাটি চালু ছিল। স্ক্রিনশট দেখুন--
এছাড়াও, 'ব্যাংকনোট ওয়ার্ল্ড' নামের আরেকটি ওয়েবসাইটেও আলোচ্য মুদ্রার ছবিটি একই শিরোনামে খুঁজে পাওয়া যায়। অর্থ্যাৎ আলোচ্য ইন্দোনেশিয়ান মুদ্রাটি ১৯৯৮ সাল থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত চালু ছিল এবং ছাপানো হতো।
মুদ্রাটির ব্যাপারে জানতে আরো সার্চ করে 'ব্যাংক ইন্দোনেশিয়া' এর ওয়েবসাইটের পাবলিকেশন্স অংশে গিয়ে ২০০৮ সালের ২৬ নভেম্বর 'BANK INDONESIA TO REVOKE AND WITHDRAW 4 (FOUR) BANKNOTES FROM CIRCULATION' (ব্যাংক ইন্দোনেশিয়া ৪টি ব্যাংকনোট বাতিল করে চলতি বাজার থেকে তুলে নেবে) শিরোনামে একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। ওই প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ১৯৯৮ সালে চালু হওয়া একটি বিশ হাজার রুপিয়ার নোট ব্যাংক ইন্দোনেশিয়া বন্ধ করে দিচ্ছে যেটির সামনের পিঠে দেশটির সাবেক শিক্ষামন্ত্রী কি হাজার দেবান্তরার ছবি ছাপানো আছে। আলোচ্য মুদ্রার ছবিটি লক্ষ্য করে দেখা যায়, নোটটির এক পিঠে দেবতা গণেশের ছবির সাথে সাবেক শিক্ষামন্ত্রী কি হাজার দেবান্তরার ছবি ছাপানো আছে। স্ক্রিনশট দেখুন--
এদিকে, ইন্দোনেশিয়ার ন্যাশনাল ব্যাংক 'ব্যাংক ইন্দোনেশিয়া' এর ওয়েবসাইটে গিয়ে ২০,০০০ রুপিয়ার যতগুলো নোট দেশটিতে বর্তমানে প্রচলিত আছে দেখা যায়, একটি ছবিও আলোচ্য মুদ্রার ছবির সদৃশ নয়। ২০,০০০ রুপিয়ার সর্বশেষ মুদ্রাটির স্ক্রিনশট দেখুন--
অর্থ্যাৎ ইন্দোনেশিয়ার বাজার থেকে বাতিল করে তুলে নেওয়া গণেশের চিত্র সম্বলিত মুদ্রাকে এখনো সচল বলে দাবি করা হচ্ছে ফেসবুকে, যা বিভ্রান্তিকর।