সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকের একাধিক আইডি, পেজ ও গ্রুপে একটি স্থাপনার ছবি পোস্ট করে বলা হচ্ছে, এটি ভারতবর্ষের রামেশ্বরম মন্দির। এরকম কয়েকটি পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে ও এখানে।
গত ২১ জুলাই 'Unknown Artist' নামের একটি পাবলিক গ্রুপে 'Thè Mòón' নামে একটি আইডি থেকে একটি স্থাপনার ছবি পোস্ট করে বলা হয়, ''প্রথম পিলার দুটির ঠিক মাঝখানে দাঁড়ালে এই অত্যাশ্চর্য স্থাপত্যের শ্রেষ্ঠত্ব বোঝা যায়। আগেই বলেছি ফ্রি-ম্যাসনারী , ইলুমিনাতি বা সিক্রেট সোসাইটি ইত্যাদি সংগঠন থেকে উদ্ভূত জ্যামিতিক নক্সার ভিতর অনন্য বিজ্ঞান লুকিয়ে থাকলেও ইউরোপ যে সময় এগুলো নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছে তখন ভারত এই জাতীয় শ্রেষ্ঠ আর্কিটেকচার নিয়ে তার ট্যালেন্টের মধ্য যৌবনে। তাই ভারতের স্থাপত্য সংস্কৃতির সাথে ওসব সংকীর্ণ রাজনৈতিক প্রভাব কোনদিনই যুক্ত থাকেনি। ভারত নিজেই এক রহস্যঃ। এখানে যারাই কিছু শিখতে আসে তারাই এই দেশের জ্ঞানের সমুদ্রে ডুবে যায় বা ডুবে যেতে চায়।' পোস্টটির স্ক্রিনশট দেখুন--
ওই পোস্টে যুক্ত করা ছবিটির নিচে বর্ণনায় লেখা ছিলো, ''এটি ভারতবর্ষের রামেশ্বরম মন্দির। আজ থেকে প্রায় ১৭৪২ বছর আগে ভারতীয় কারিগররা এই মন্দিরটি বানিয়েছিলেন''। পোস্টের স্ক্রিনশট দেখুন--
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, দাবিটি সঠিক নয়। পোস্টের ছবিটি ভারতের তামিলনাড়ু রাজ্যে অবস্থিত রামেশ্বরম মন্দিরের নয়। ছবিটি ভারতের মধ্যপ্রদেশ রাজ্যে অবস্থিত হোশাং শাহের সমাধির।
রামেশ্বরম মন্দিরের স্থাপত্যকলা জানতে কি-ওয়ার্ড সার্চ করে করে 'Tamilnadu Tourism' নামের একটি ওয়েবসাইটে 'Ramanathaswamy Temple, Rameswaram The Temple' শিরোনামে একটি নিবন্ধ খুঁজে পাওয়া যায়। ওই নিবন্ধে দেখা যায়, রামেশ্বরম মন্দিরের করিডোরের পিলারের আকৃতি এবং আলোচ্য ছবির পিলারের আকৃতিতে পার্থক্য রয়েছে। রামেশ্বরম মন্দিরের পিলারের আকৃতি দেখুন--
এরপর আলোচ্য ছবিটির রিভার্স ইমেজ সার্চ করে ফটো স্টকার ওয়েবসাইট 'stockfreeimages'-এ আলোচ্য ছবির মত ছবি খুঁজে পাওয়া যায়। ছবির বর্ণনায় বলা হয়, "এটি হোশাং শাহের সমাধিস্থলের। হোশাং শাহের সমাধিকে ভারতের প্রথম মার্বেল পাথরনির্মিত কবর হিসেবে জানা যায়। আফগান স্থাপত্যকলার এটি এক চমৎকার নিদর্শন"। ছবিটির স্ক্রিনশট দেখুন--
এবারে আলোচ্য ছবি ও এই ছবিটির তুলনা দেখুন--
আবার, আরেকটি অনলাইন ফটো স্টকার ওয়েবসাইট 'gettyimages.com' তাদের ওয়েবসাইটে আলোচ্য স্থানের ছবি কয়েকটি এঙ্গেল থেকে পোস্ট করে। সেখানেও ছবির বর্ণনা অংশে বলা হয়েছে যে, সমাধিটি হোশাং শাহের, যা ভারতের মধ্যপ্রদেশ রাজ্যের মান্ডু শহরে অবস্থিত। ছবিগুলোর স্ক্রিনশট দেখুন--
অর্থ্যাৎ সমাধিটি পঞ্চদশ শতকে হোশাং শাহ নামে একজন আফগান শাসকের যিনি ইতিহাসে একজন গুরুত্বপূর্ণ শাসক হিসেবে পরিচিত।
সুতরাং ভারতের মধ্যপ্রদেশে অবস্থিত হোশাং শাহের সমাধিকে তামিলনাড়ুতে অবস্থিত রামেশ্বরম মন্দিরের বলে প্রচার করা হচ্ছে ফেসবুকে, যা বিভ্রান্তিকর।