সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি ভিডিও পোস্ট করা হয়েছে। ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, একটি অ্যাপে রেজিস্ট্রেশন করলে ক্ষতিগ্রস্ত নাগরিকগণ আর্থিকভাবে লাভবান হতে পারবেন। আরো বলা হয়, প্রথম দিকের ব্যবহারকারীরা কয়েকগুন বোনাস পাবেন এবং বেটিং এর মাধ্যমে আয় বৃদ্ধি করতে পারবেন। ভিডিওটিতে সময় টেলিভিশনের লোগোযুক্ত একজন সংবাদ পাঠিকার এ সংক্রান্ত সংবাদ পাঠের দৃশ্যও যুক্ত করা হয়েছে। এরকম একটি পোস্ট দেখুন এখানে।
গত ২০ অক্টোবর 'Yudi liceth Arboleda' নামের পেজ থেকে ভিডিওটি পোস্ট করা হয়। পোস্টটি স্পন্সরড পোস্ট। ভিডিওটি দিয়ে একটি অ্যাপের প্রচারণা চালানো হচ্ছে। পোস্টটির দুইটি স্ক্রিনশট (কোলাজ) দেখুন--
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, দাবিটি সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের একটি ভিডিওতে প্রযুক্তির সাহায্যে এডিটের মাধ্যমে তাঁর কণ্ঠের অনুরূপ নকল কণ্ঠ বসিয়ে এই ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের এমন প্রচারণার কোনো সত্যতাও গ্রহণযোগ্য কোনো মাধ্যমে পাওয়া যায়নি।
ভিডিও থেকে কি-ফ্রেম তৈরি করে ছবিটি রিভার্স ইমেজ সার্চ এর মাধ্যমে বেসরকারি সম্প্রচার মাধ্যম সময় টেলিভিশনের একটি ইউটিউব চ্যানেলে "অ্যাকশন শুরু হলে সমর্থন চাই: ড. মুহাম্মদ ইউনূস" শিরোনামে প্রকাশিত আলোচ্য ভিডিওর মূল ভিডিওটি (শর্টস সংস্করণে) পাওয়া যায়। ভিডিওটিতে নতুন বাংলাদেশ তৈরি ও সেক্ষেত্রে নাগরিকদের করণীয় সম্পর্কে তিনি কথা বলেছেন। ভিডিওটিতে কোনো অ্যাপ এর প্রচারণা কিংবা আর্থিক প্রণোদনা নিয়ে কথা বলেননি। ভিডিওটির স্ক্রিনশট দেখুন--
পরবর্তীতে এই শিরোনাম ব্যবহার করে সার্চ করে সময় টেলিভিশনের অনলাইন সংস্করণে গত ১০ আগস্ট "অ্যাকশন শুরু হলে সমর্থন চাই: ড. মুহাম্মদ ইউনূস" শিরোনামে একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। এতে উল্লেখ করা হয়, শনিবার (১০ আগস্ট) বিকেলে রংপুর সার্কিট হাউসে সাংবাদিকদের সাথে তিনি নাগরিকদের ঐক্যবদ্ধ থাকা সহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন (সংক্ষেপিত)। আলোচ্য ভিডিওটির স্থিরচিত্রের (বামে) সাথে রংপুর সার্কিট হাউসে ড. মুহাম্মদ ইউনূস এর সাংবাদিকদের সাথে কথা বলার সময়ের দৃশ্যের (ডানে) পাশাপাশি মিল দেখুন--
যেহেতু মূল ভিডিওর ঐ দৃশ্যে ড. মুহাম্মদ ইউনূস কোনো অ্যাপ এর প্রচারণা কিংবা আর্থিক প্রণোদনা নিয়ে কথা বলেননি (১, ২, ৩) সেহেতু আলোচ্য প্রচারিত ভিডিওতে অ্যাপ এর প্রচারণার বিষয়টি তাঁর কণ্ঠস্বর নকল (ভয়েস ক্লোন) করে তৈরি করা হয়েছে।
অর্থাৎ ড. মুহাম্মদ ইউনূস এর কণ্ঠস্বর নকল (ভয়েস ক্লোন) করে রংপুর সার্কিট হাউসে ড. মুহাম্মদ ইউনূস এর সাংবাদিকদের সাথে কথা বলার সময়ের দৃশ্যের সাথে সম্পাদনা করে ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে।
ভিডিওতে উল্লিখিত ড. মুহাম্মদ ইউনূস কর্তৃক 'ক্রেজি টাইম' অ্যাপ এর প্রচারণার কোনো তথ্য গ্রহণযোগ্য কোনো মাধ্যমের কোথাও পাওয়া যায়না। তাই এরকম একটি বিষয়ে সময় টেলিভিশনের সংবাদ প্রকাশ করা তথা সংবাদ পাঠিকার এ সংশ্লিষ্ট সংবাদ পাঠের বিষয়টিও সমীচীন নয়।
এদিকে সংবাদ পাঠিকার মূল ভিডিওটি না পাওয়া গেলেও আলোচ্য ভিডিওতে তাঁর অঙ্গভঙ্গির অস্বাভাবিকতা ও কথার সাথে মুখের ভঙ্গিমার অমিল লক্ষ্য করা যায়। এছাড়াও তাকে 'বাসিন্দা' শব্দের পরিবর্তে 'বাছিন্দা' বলতে শোনা যায়। সাধারণত সংবাদ পাঠের ক্ষেত্রে এরকম উচ্চারণ করা হয়না। এর ফলে প্রতীয়মান হয় যে সংবাদ পাঠিকার দৃশ্য ও কণ্ঠস্বরের ক্ষেত্রেও সম্পাদনা করা হয়েছে।
অর্থাৎ সময় টেলিভিশনের লোগো যুক্ত করে একজন সংবাদ পাঠিকার সম্পাদিত ভিডিও যুক্ত করে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বেটিং বা এজাতীয় কোনো অ্যাপের প্রচারণার ভুয়া ভিডিও প্রচার করা হয়েছে। ড. মুহাম্মদ ইউনূস বেটিং বা এজাতীয় কোনো অ্যাপের প্রচারণা কিংবা অ্যাপ ব্যবহার করলে আর্থিক সহায়তার কথা বলেননি।
উল্লেখ্য ভিডিওতে টেক্সট ফরম্যাটের লেখা (সংবাদ) এর বাক্য গঠনের ক্ষেত্রেও অসামঞ্জস্যতা পাওয়া যায়। সাধারণত সংবাদের ক্ষেত্রে বাক্যের এমন ভুল দেখা যায়না। দেখুন--
অর্থাৎ ভিডিওটি বাস্তব নয় বরং এডিটেড।
সুতরাং সামাজিক মাধ্যমে আর্থিক প্রতারণার উদ্দেশ্যে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের একটি ভিডিওতে প্রযুক্তির সাহায্যে নকল কণ্ঠ জুড়ে দিয়ে জুয়ার প্রচারণা চালানো হচ্ছে, যা প্রতারণামূলক।