সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থ্রেডসে পোস্ট করে বলা হচ্ছে, আগামী ১ সেপ্টেম্বর থেকে বাংলাদেশে সব ধরণের পর্নোগ্রাফি সাইট বন্ধ থাকবে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেনের নাম জুড়ে দিয়ে পোস্টটি প্রচার করা হয়েছে। এরকম কয়েকটি পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে ও এখানে।
ফেসবুক প্ল্যাটফর্মে প্রচারিত কয়েকটি পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে ও এখানে।
গত ২৯ আগস্ট 'sumon.ahmod23' ইউজারনেম এর একটি অ্যাকাউন্ট থেকে পোস্টটি করা হয়। পোস্টে উল্লেখ করা হয়, "আলহামদুলিল্লাহ। সেপ্টেম্বর মাসের ১ তারিখ থেকে বাংলাদেশের সকল প"র্নো"গ্রা''ফি সাইট বন্ধ থাকবে। ধর্ম উপদেষ্টা ~ড.আ.ফ.ম খালিদ হোছাইন!"। পোস্টটির স্ক্রিনশট দেখুন--
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, আলোচ্য দাবিটি সঠিক নয়। আগামী ১ সেপ্টেম্বর থেকে নয় বরং বেশ কয়েক বছর আগে থেকেই বাংলাদেশে পর্নোগ্রাফি সাইট বন্ধ করার প্রক্রিয়া চালু রয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে কি-ওয়ার্ড সার্চ এর মাধ্যমে অনলাইন সংবাদমাধ্যম 'ডেইলি বাংলাদেশ'-এ গত ২৯ আগস্ট "ফেসবুকে ধর্ম উপদেষ্টার নামে ফেক আইডি, ছড়ানো হচ্ছে বিভ্রান্তি" শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
এতে উল্লেখ করা হয়, "অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেনের নামে ফেক ফেসবুক আইডি খোলার অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া ফেক আইডি থেকে পর্নোগ্রাফি সাইট বন্ধ, হজ-ওমরাহর খরচ কমানোসহ বেশকিছু বিভ্রান্তিকর পোস্ট দেওয়ারও অভিযোগ পাওয়া গেছে।" প্রতিবেদনটির স্ক্রিনশট দেখুন--
এতে আরো উল্লেখ করা হয়, "নতুন করে পর্নো সাইট বন্ধের নির্দেশনার বিষয়ে ধর্ম উপদেষ্টার একান্ত সহকারী ইকরামুল হক বলেন, বিষয়টি ভুয়া। একটি শ্রেণী ধর্ম উপদেষ্টার সুনাম ক্ষুণ করার চেষ্টা করছে। উপদেষ্টার বক্তব্যের জন্য তার ব্যক্তিগত আইডি ও ফেসবুক পেইজ ফলো করা উচিত।"
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী আলোচ্য ভুয়া অ্যাকাউন্ট ও অ্যাকাউন্টের পোস্টটি পাওয়া যায়। অ্যাকাউন্টটিতে ধর্ম উপদেষ্টার নামের একটি অংশের বানানের ক্ষেত্রেও ভুল পরিলক্ষিত হয়।
অনলাইন সংবাদমাধ্যম 'ঢাকা পোস্ট'-এ গত ২৯ আগস্ট "ধর্ম উপদেষ্টার নামে ভুয়া আইডি, দেওয়া হচ্ছে বিভ্রান্তিকর পোস্ট" শিরোনামেও আলোচ্য বিষয়ে প্রকাশিত আরো একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। এতেও একই তথ্য উল্লেখ করা হয়। প্রতিবেদনটির স্ক্রিনশট দেখুন--
অন্যদিকে সার্চ করে গণমাধ্যমে আগামী ১ সেপ্টেম্বর থেকে নতুন করে পর্নো সাইট বন্ধ করার কোনো সিদ্ধান্ত বা ঘোষণা পাওয়া যায়নি। অর্থাৎ আগামী ১ সেপ্টেম্বর থেকে নতুন করে পর্নো সাইট বন্ধ করার কোনো সিদ্ধান্ত বা ঘোষণা হয়নি।
বাংলাদেশে কবে থেকে পর্নো সাইট বন্ধ করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে?
কি-ওয়ার্ড সার্চ এর মাধ্যমে 'দৈনিক ইত্তেফাক'-এর অনলাইন সংস্করণে ২০১৯ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি "আরো ২৪৪ পর্নো সাইট ব্লক করলো সরকার" শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। এতে উল্লেখ করা হয়, "এর আগে দেশে কয়েক দফা ব্লক করা হয়েছিল পর্নো সাইটগুলো। ২০১৬ সাল থেকে চলা এ অভিযানের প্রথম পর্যায় ৫৬০টি পর্নো ওয়েবসাইট ব্লক করা হয়েছিল টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি।"
পরবর্তীতে ‘দ্য ডেইলি স্টার’-এর অনলাইন সংস্করণে ২০১৬ সালের ২৮ ডিসেম্বর "পাঁচ শতাধিক পর্নো-সাইট বন্ধ করেছে সরকার" শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
অর্থাৎ দেশে পর্নো সাইট বন্ধ করার প্রক্রিয়া আগে থেকেই ছিল। ২০১৬ সালে শুরু হয়ে বিভিন্ন সময়েই কয়েক দফায় এটি বাস্তবায়ন করা হয়েছে।
সুতরাং সামাজিক মাধ্যমে 'পহেলা সেপ্টেম্বর থেকে বাংলাদেশে সকল পর্নোগ্রাফি সাইট বন্ধ থাকবে' মর্মে যে তথ্য প্রচার করা হচ্ছে; তা বিভ্রান্তিকর।