সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকের একাধিক আইডি, পেজ ও গ্রুপে একটি অসুস্থ শিশুর ছবি পোস্ট করে বলা হচ্ছে, মাইসা নামের শিশুটি অসুস্থ এবং তার চিকিৎসার জন্য অনেক টাকা দরকার। শিশুটির চিকিৎসার জন্য আর্থিক সাহায্যের আবেদন করা হয়েছে পোস্টগুলোতে। এরকম কয়েকটি পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে ও এখানে।
গত ২২ আগস্ট "Abdullah ZONE" নামের একটি ফেসবুক পেজে একটি অসুস্থ শিশুর ছবি পোস্ট করে লেখা হয়, "..........দয়া করে কেউ এড়িয়ে যাবেন না, সাহায্য করতে না পারলেও দয়া করে পোস্টটি শেয়ার করুন যাতে কোনো দানশীল ব্যক্তির নজরে আসে। আমার ছোট মেয়ে মাইশা জাহান। শিশুটির চিকিৎসার জন্য 25/35লক্ষ টাকার প্রয়োজন ।" আবার, পোস্টটির কয়েক লাইন মাইসার নামে লেখা হলেও এরপরেই লেখা হয় "ছোট্ট তাহমিদা কে বাচাতে এগিয়ে আসুন। টাকা দিয়ে সাহায্য করতে না পারলে শেয়ার করে বিভিন্ন গ্রুপে ছড়িয়ে দেন যেন বিত্তবান দের নজরে আসে। ডক্টর পরিক্ষা নিরিক্ষা করে জানায় তাহমিদের লিভার নষ্ট। ওর চিকিৎসা করতে অনেক অর্থের প্রয়োজন যা তাহমিদের মামার অটো চালিয়ে তাহমিদের চিকিৎসা করাতে পারছেন না । ডাক্তার এর হিসেব মতে প্রায় ১৫/২০লক্ষ টাকার প্রয়োজন । সবাই এগিয়ে আসুন প্লিজ । যে যা পারবেন তাই দিয়ে সাহায্য করুন বাচ্চাটার চিকিৎসার জন্য।" আবার ওই পোস্টটিতে আর্থিক সাহায্য পাঠানোর জন্য মুঠোফোনে আর্থিক লেনদেন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান বিকাশ ও নগদের ফোন নম্বর যুক্ত করা হয়। ফেসবুক পোস্টটির স্ক্রিনশট দেখুন--
পোস্টে সংযুক্ত ছবিগুলো দেখুন আলাদাভাবে---
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, আলোচ্য পোস্টদের দাবিটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। ছবির শিশুটি বাংলাদেশের মাইসা নয় বরং ভারতের আহমেদাবাদের আয়না যে স্পাইনাল মাসকিউলার এট্রোফি টাইপ-২ নামের একটি দূর্লভ জেনেটিক রোগে ভুগছে।
ছবিটির রিভার্স ইমেজ সার্চ করে ভারতের অসহায় ও দুঃস্থদের জন্য অর্থ উত্তোলনকারী সংস্থা 'Impact Guru' এর ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে আলোচ্য ছবিগুলো খুঁজে পাওয়া যায়, যা গত ২৯ এপ্রিল পোস্ট করা হয়। ওই ফেসবুক পোস্ট থেকে জানা যায়, ৪ বছর বয়সী আয়না নামের এই শিশুটি স্পাইনাল মাসকিউলার এট্রোফি টাইপ-২ নামের একটি জেনেটিক রোগে ভুগছে। তার চিকিৎসার জন্য অনেক টাকার দরকার। ফেসবুক পোস্টটি দেখুন--
ফেসবুকের সূত্র থেকে 'Impact Guru'-র অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে গিয়ে "Help Ayna Juned Mansuri Raise Funds To Fight SMA" শিরোনামে শিশুটির ছবি খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইটে বিভিন্ন সময়ে শিশুটির ছবি সংযুক্ত করা হয়েছে, যা দেখে বোঝা যায় যে আলোচ্য ছবির শিশু এবং ওয়েবসাইটের শিশুটি একই জন। শিশুটি বর্তমানে ভারতের আহমেদাবাদের ROYAL INSTITUTE OF CHILD NEUROSCIENCES-এ ভর্তি আছে। স্ক্রিনশট দেখুন--
অর্থ্যাৎ ভারতের অসুস্থ শিশু আয়নার ছবিকে বিভ্রান্তিকরভাবে বাংলাদেশের মাইসার বলে দাবি করা হচ্ছে। এদিকে ভাইরাল পোস্টে সাহায্য চেয়ে দেয়া বিকাশ ও নগদ নম্বরে যোগাযোগের চেষ্টা করলে কেউ ফোন রিসিভ করেনি।
সুতরাং ভারতের অসুস্থ শিশুর ছবি দিয়ে, তাকে বাংলাদেশের শিশু দাবি করে অর্থ সাহায্য চাওয়া হচ্ছে, যা প্রতারণাপূর্ণ।