পেঁয়াজ থেকে 'ব্ল্যাক ফাঙ্গাস' বা মিউকরমাইকোসিস রোগ ছড়াচ্ছে মর্মে একটি খবর সম্প্রতি একাধিক অনলাইন পোর্টালে প্রকাশিত হয়েছে এবং এসব খবরের লিংক সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট ও প্রচার করা হচ্ছে। পোস্টগুলো দেখুন এখানে, এখানে, এখানে।
'Dhaka Post Online' নামের একটি ফেসবুক পেজ থেকে একটি অনলাইন পোর্টালের লিংক শেয়ার করে শিরোনামে লেখা হয়েছে, "এবার পেঁয়াজ থেকে ছড়াচ্ছে যে প্রা'ণঘাতী ভাই'রাস"। অর্থাৎ পোস্টে দাবি করা হচ্ছে পেঁয়াজ থেকে একটি রোগ ছড়াচ্ছে, যা প্রাণঘাতী।
ফ্যাক্ট চেক
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, মূল খবরের সাথে দেয়া শিরোনামটি বিভ্রান্তিকর। খবরটির ভেতরের অংশে পরস্পর বিরোধী তথ্য দেয়া হয়েছে, যার সাথে উক্ত শিরোনামের মিল নেই।
যেমন, অনলাইন পোর্টালের খবরের দ্বিতীয় প্যারায় অনির্দিষ্ট সুত্রের বরাত দিয়ে লেখা হয়েছে, "এক পোস্ট থেকে জানা যায়, পেঁয়াজের গায়ে যে কালো রঙের ছত্রাক তৈরি হয়, তা নাকি অত্যন্ত বিষাক্ত এবং তা থেকেই ছড়াতে পারে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস। যদি এই ধরনের পেঁয়াজ ফ্রিজে রাখা হয়, তা হলে ফ্রিজের গায়েও এই কালো ছত্রাক ছেয়ে যাবে। পরবর্তীতে তা ছড়িয়ে পড়বে খাবারের মধ্যে।"
ঠিক এর পরের প্যারায় লেখা আছে, "পেঁয়াজের গায়ে যে কালো ছত্রাক সাধারণত দেখা যায়, তার নাম অ্যাস্পারজিলাস নাইজার। মাটিতে পাওয়া যায় এই ছত্রাক। কিন্তু এটা বা ফ্রিজের ছত্রাক কোনোটাই মিউকরমাইকোসিসের কারণ নয়।"
অর্থাৎ দ্বিতীয় প্যারায় পেঁয়াজের গায়ে কালো রঙের ছত্রাকটিকে অত্যন্ত বিষাক্ত বলে দাবি করা হচ্ছে, যা থেকে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস ছড়াতে পারে বলেও তথ্য দেয়া হয়েছে। কিন্তু পরের প্যারায় এই কালো ছত্রাকটিকে 'অ্যাস্পারজিলাস নাইজার' বলে উল্লেখ করে বলা হয়েছে, এটি 'মিউকরমাইকোসিস' রোগের কারণ নয়।
প্রসঙ্গত, 'মিউকরমাইকোসিস' রোগটি প্রকৃতপক্ষে 'ব্ল্যাক ফাঙ্গাস' না হলেও রোগটি এই নামেই জনসাধারণের কাছে বেশি পরিচিত।
দ্বিতীয় ও তৃতীয় প্যারায় পরস্পর বিরোধী তথ্য দেয়ার পর খবরটির শেষাংশে বলা হয়েছে, "পুষ্টি বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, পেঁয়াজের গায়ে যে কালো ছত্রাক তৈরি হয়, তা থেকে মিউকরমাইকোসিস শুধু নয়, কোনো রকম সংক্রমণই মানুষের শরীরে সাধারণত হয় না। তবে পেঁয়াজ কাটার আগে অবশ্যই ভালো করে ধুয়ে নেওয়া উচিত।"
খবরটির ভেতরের অংশের স্ক্রিনশটে চিহ্নিত দ্বিতীয় ও তৃতীয় প্যারা এবং শেষাংশ দেখুন--
অর্থাৎ শিরোনাম ও খবরের প্রথমাংশে যা বলা হয়েছিলো, খবরের শেষাংশে ঠিক তার বিপরীত তথ্য দেয়া হয়েছে।
প্রথমাংশে 'অত্যন্ত বিষাক্ত' এবং 'ব্ল্যাক ফাঙ্গাস' ছড়িয়ে পড়ার কারণ হিসেবে এই ছত্রাকটিকে চিহ্নিত করা হলেও, শেষাংশে বলা হচ্ছে এই ছত্রাকটি থেকে মিউকরমাইকোসিস তো দূরের কথা কোনো রকম সংক্রমণই মানুষের শরীরে হয় না।
এদিকে সম্প্রতি ভারতে পেঁয়াজ থেকে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস ছড়িয়ে পড়ার খবর প্রচারিত হলে আউটলুক ম্যাগাজিন খবরটিকে যাচাই করে বিভ্রান্তিকর হিসেবে চিহ্নিত করে।
'Fact Check: Can You Catch Mucormycosis, Or Black Fungus, From Onions?' শিরোনামে ২০২১ সালের ৭ জুন প্রকাশিত প্রতিবেদনে আউটলুক এআইআইএমএস- এর প্রধান রণদীপ গুলেরিয়ার উদ্ধৃতি দিয়ে জানায়, মিউকরমাইকোসিস আসলে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস নয়। নাকের উপর কালচে ছোপ ছোপ দাগ হওয়ার ফলে রোগটিকে এই নাম দেওয়া হয়েছে। এর সংক্রমণের কারণে অনেক সময় মুখের একাংশ ফ্যাকাসে হয়ে যায়। তা থেকেও অনেকের মনে হতে পারে, জায়গাটা কালো হয়ে যাচ্ছে। আউটলুক ম্যাগাজিনের স্ক্রিনশট দেখুন--
মূলত, বহুদিন ফ্রিজ পরিষ্কার না করলে বা না খুললে পেঁয়াজের উপর এক ধরণের কালো ছত্রাক তৈরি হতে পারে। ব্যাক্টেরিয়া ও ইস্টের কারণে তৈরি হওয়া এই ছত্রাকের প্রভাবে শাক-সবজি, পাউরুটি বা চিজের মতো খাবার নষ্ট হয়ে যেতে পারে। কিন্তু মিউকরমাইকোসিসের সাথে এই ছাত্রাকের কোনো সম্পর্ক নেই। আউটলুক ম্যাগাজিনের প্রতিবেদনেও পেঁয়াজ থেকে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস বা মিউকরমাইকোসিস ছড়ানোর খবরটি নাকচ করা হয়েছে।
সুতরাং বুম বাংলাদেশের অনুসন্ধান অনুযায়ী, বস্তুনিষ্ট তথ্য ছাড়া চটকদার শিরোনামে পেঁয়াজ থেকে প্রাণঘাতী রোগ ছড়ানোর খবর প্রকাশ করা হচ্ছে; যা ভিত্তিহীন ও বিভ্রান্তিকর।