গত শুক্রবার সিলেট এমসি কলেজে এক নারীকে গণধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্ত ও মামলার আসামি ৬ জনের ছবিসহ ফেসবুকে একটি পোস্ট ভাইরাল হয়েছে; যেখানে দাবি করা হচ্ছে, "গুজবে কান দিবেন না৷ এরা আমাদের ছাত্রলীগের কেউ না।"
এছাড়া আরও দাবি করা হয়েছে যে, ধর্ষকদের পরিবার বিএনপি-জামায়াত সংশ্লিষ্ট।
এমন কয়েকটি পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে ও এখানে।
এরকম পোস্টের স্ক্রিনশট দেখুন-
ভাইরাল হওয়া পোস্টে ধর্ষণে অভিযুক্ত যে ৬ জনের ছবি ও নাম রয়েছে তারা হলেন- শাহ মাহবুবুর রহমান রনি, মাহফুজুর রহমান মাছুম, এম সাইফুর রহমান, অর্জুন লস্কর, রবিউল হাসান এবং তারেকুল ইসলাম তারেক।
ফেসবুক পোস্টে এই ৬ জনকে 'ছাত্রলীগ নেতাকর্মী নয়' বলে দাবি করা হলেও দেশের শীর্ষ স্থানীয় সব সংবাদমাধ্যমে পুলিশ এবং এমসি কলেজ ছাত্রলীগের বরাতে জানানো হয়েছে এই ছয় ব্যক্তিই ছাত্রলীগের কর্মী।
প্রথম আলোর "তরুণীকে তুলে নিয়ে এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে 'ছাত্রলীগের কক্ষের' সামনে গণধর্ষণ" শিরোনামের খবরে পুলিশের সূত্রে জানানো হয়েছে, "ছাত্রাবাসে নিয়মিত যাতায়াতকারী ছয়জন সম্পর্কে তথ্য পেয়েছে পুলিশ। এই ছয়জনের বাড়ি হবিগঞ্জ, সিলেট, সুনামগঞ্জের দিরাই ও জগন্নাথপুরে। তাঁরা এমসি কলেজের সাবেক ছাত্র ও ছাত্রলীগ কর্মী।"
দেখুন নিচের স্ক্রিনশট--
প্রথম আলোর আরেকটি প্রতিবেদনের শিরোনাম "এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে গণধর্ষণে নাম এল যাদের"। এখানে জানানো হয়েছে--
"কলেজ সূত্র জানায়, সাইফুর, রনি ও মাহফুজুর ইংরেজি বিভাগের স্নাতক শ্রেণির অনিয়মিত শিক্ষার্থী। অর্জুন সাবেক শিক্ষার্থী। রবিউল বহিরাগত। ছয়জনই ছাত্রলীগের কর্মী ও টিলাগড়কেন্দ্রিক একটি পক্ষে সক্রিয়।
এর মধ্যে প্রধান আসামি সাইফুর রহমানের সঙ্গে জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক রণজিৎ সরকারের সঙ্গে ছবি আছে। ছাত্রলীগ সূত্র জানায়, ধর্ষণ মামলার আসামি সবাই রণজিৎ সরকারের অনুসারী ছাত্রলীগ কর্মী। এ ব্যাপারে রণজিৎ সরকারের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।"
শুধু প্রথম আলো নয়, দেশের শীর্ষ স্থানীয় প্রায় সব সংবাদমাধ্যমে পুলিশ এবং অন্যান্য সূত্রের বরাতে জানানো হয়েছে মামলার নাম উল্লেখ করা ৬ জন আসামি ছাত্রলীগের কর্মী। নিচে তেমন কয়েকটি সংবাদের শিরোনাম দেখুন--
বাংলাট্রিবিউন: এমসি কলেজের ছাত্রাবাসে ধর্ষণ, ছাত্রলীগের কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা
সমকাল: এমসি কলেজে ধর্ষণে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ কর্মীর কক্ষ থেকে অস্ত্র উদ্ধার
ডেইলি স্টার (বাংলা): এমসি কলেজে ধর্ষণ ঘটনায় 'ছাত্রলীগ'র ৬ জনের নামে মামলা
চ্যানেল আই: এমসি কলেজে ধর্ষণ ঘটনায় ছাত্রলীগ নেতাসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা
কালের কণ্ঠ: এমসি কলেজে গণধর্ষণ: অভিযুক্ত ছাত্রলীগ কর্মীদের ধরতে অভিযান
বাংলাদেশ প্রতিদিন: এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে ছাত্রলীগের গণধর্ষণ, পুলিশ যাদের খুঁজছে
যুগান্তর: ছাত্রাবাসে গণধর্ষণ: ছাত্রলীগ নেতা সাইফুরের নামে আরেক মামলা
জাগোনিউজ: ছাত্রাবাসে নারীকে গণধর্ষণ: আসামি রবিউল মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চেরও সভাপতি
সমকালের "প্রভাবের 'দুধ-কলায়' বেড়ে উঠেছে তারা" শিরোনামের প্রতিবেদনের একাংশ দেখুন নিচের স্ক্রিনশটে--
এছাড়া বুম বাংলাদেশ অভিযুক্তদের ফেসবুক প্রোফাইল ঘেটে দেখার চেষ্টা করেছে। এর মধ্যে দুইজন ছাড়া বাকিদের ফেসবুক প্রোফাইল খুঁজে পাওয়া যায়নি।
অভিযুক্তদের মধ্যে মাহফুজুর রহমান রনি এবং রবিউল হাসানকে ভাইরাল হওয়া ফেসবুক পোস্টে 'শিবির নেতা/কর্মী' হিসেবে দাবি করা হলেও এই দুইজনের ফেসবুক প্রোফাইলে নিজেদের ছাত্রলীগ করার তথ্য তারা নিজেরাই দিয়েছেন। এবং দুইজনের প্রোফাইলের কভার পিকচারে জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক রণজিৎ সরকারের সঙ্গে তাদের ছবি দেখা গেছে। এছাড়াও উভয়ের প্রোফাইলে নিয়মিত ছাত্রলীগের নানান কর্মসূচিতে যোগ দেয়া, নেতাকর্মীদের সাথে সাক্ষাৎ ও আড্ডার ছবি ও পোস্ট দেখা গেছে।
রবিউল হাসানের ফেসবুকের কভার ফটো--
মাহফুজুর রহমানের প্রোফাইল--
অতএব, স্পষ্টতই দেখা যাচ্ছে ভাইরাল হওয়া ফেসবুক পোস্টের দাবিগুলো ভিত্তিহীন।