সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকের একাধিক আইডি, পেজ ও গ্রুপে আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের বরাত দিয়ে পোস্ট করে বলা হচ্ছে, রয়টার্সের এক জরিপে উঠে এসেছে যে, বাংলাদেশ দ্রুতই দেউলিয়া হতে পারে। এরকম কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে ও এখানে।
গত ১৭ জুলাই 'MD Amran Hosen Sojol' নামের একটি আইডি থেকে সংবাদ চ্যানেল আরটিভির ফেসবুক পেজে প্রচারিত একটি গ্রাফের ছবি শেয়ার করে লেখা হয়, ''ইন্না-লিল্লাহ 💔 নিউজটা দেখে চমকে উঠলাম মোট ১২ টি দেশের মধ্যে শ্রীলংকার পরে ৮ নাম্বার স্থানে বাংলাদেশ দেউলিয়া হতে চলেছে.... হে আল্লাহ আপনি আমাদের মাফ করুন 🤲''। পোস্টটির স্ক্রিনশট দেখুন--
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, বাংলাদেশের দেউলিয়া হতে যাওয়ার দাবিটি সঠিক নয়। রয়টার্স তাদের প্রকাশিত কোনো সংবাদে লেখেনি যে, বাংলাদেশ দেউলিয়া হওয়ার ঝুঁকিতে আছে। সংবাদ চ্যানেল আরটিভির ফেসবুক আইডিতে প্রচারিত একটি সংবাদে রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে যুক্ত করা ভিন্ন একটি গ্রাফের ছবি ভুলভাবে উপস্থাপনের ফলে তথ্যটি ভুলভাবে ছড়িয়ে পড়ে।
রিভার্স ইমেজ সার্চ করে আরটিভির ফেসবুক পেজে 'জেনে নিন বিশ্বের যে ১২টি দেশ দেউলিয়া হতে পারে!' শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। ওই পোস্টের ১ মিনিট ১৯ সেকেন্ডে খুঁজে পাওয়া যায় ভাইরাল গ্রাফটি। আরটিভির ওই প্রতিবেদনে বলা হয়নি যে বাংলাদেশ দেউলিয়া হওয়ার ঝুঁকিতে আছে। মূলত রয়টার্সের এ সংক্রান্ত বিস্তারিত একটি প্রতিবেদনে প্রকাশিত ভিন্ন তথ্যের একটি গ্রাফকে ভুলভাবে উপস্থাপন করে আরটিভি। আরটিভির প্রতিবেদনটি দেখুন এখানে--
আরটিভির করা ওই রিপোর্টটিতে ব্যবহৃত গ্রাফটির সূত্র খুঁজতে গিয়ে কী ওয়ার্ড সার্চ করে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের 'The big default? The dozen countries in the danger zone' শিরোনামে করা একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। ওই প্রতিবেদনে রয়টার্স ১২ টি দেশের নাম উল্লেখ করেছে, যাদের দেউলিয়া হওয়ার আশঙ্কা আছে বলে দাবি করা হয়। তবে, উল্লেখিত তালিকায় বাংলাদেশের নাম নেই। দক্ষিণ এশিয়ায় একমাত্র দেশ হিসেবে পাকিস্তানের নাম উল্লেখ করা হয়েছে ওই প্রতিবেদনে। প্রতিবেদনটিতে উল্লেখিত দেউলিয়া হওয়ার আশঙ্কায় থাকা দেশগুলো হলো, আর্জেন্টিনা, ইউক্রেন, তিউনিশিয়া, ঘানা, মিশর, কেনিয়া, ইথিওপিয়া, এল স্যালভেদর, পাকিস্তান, বেলারুশ, ইকুয়েডর ও নাইজেরিয়া। সেই তালিকায় বাংলাদেশের নাম নেই।
এদিকে, আরটিভিতে প্রকাশিত রিপোর্টে ব্যবহৃত আলোচ্য গ্রাফটি রয়টার্সের করা ওই প্রতিবেদনে দেখা যায়। ওই গ্রাফটিতে মূলত কোনো দেশের মোট রাজস্ব আয়ের সর্বোচ্চ কত শতাংশ বিভিন্ন বৈদেশিক খাত থেকে নেওয়া ঋণের সুদ পরিশোধ করা হচ্ছে তার হারের নিম্নক্রমের একটি তালিকা। ওই তালিকায় দক্ষিণ এশিয়া থেকে বাংলাদেশ ছাড়াও ভারতের অবস্থানও লক্ষ্যণীয়। প্রতিবেদনে দেখা যায়, বাংলাদেশ তার রাজস্ব আয়ের ২১ শতাংশ ঋণের সুদ পরিশোধে ব্যয় করে যেখানে ভারত ২৬ শতাংশ হারে ঋণ পরিশোধ করে এবং সদ্য দেউলিয়া ঘোষণাকারী দেশ শ্রীলঙ্কায় এই হার ছিলো ১১৫ শতাংশ। স্ক্রিনশট দেখুন--
অর্থ্যাৎ রয়টার্সের প্রতিবেদনে যুক্ত করা ঋণ পরিশোধকারী দেশের তালিকাকে দেউলিয়া হওয়ার সম্ভাবনাময় দেশের তালিকা হিসেবে প্রচার করা হচ্ছে এবং বাংলাদেশকে সেই তালিকার অন্তর্ভুক্ত হিসেবে দাবি করা হচ্ছে। আরটিভি ত্রুটিপূর্ণভাবে ওই গ্রাফ চার্টটি ব্যবহার করলেও তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়নি বাংলাদেশ দেউলিয়া হওয়ার ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে।
সুতরাং, রয়টার্সের প্রতিবেদনে যুক্ত করা রাজস্ব আয়ের মাধ্যমে ঋণ পরিশোধকারী দেশগুলোর ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ হারের দেশের তালিকাকে দেউলিয়া হওয়ার ঝুঁকিতে থাকা দেশের তালিকা হিসেবে প্রচার করা হচ্ছে, যা বিভ্রান্তিকর।