সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকের একাধিক পেজ ও গ্রুপে একটি সংবাদ শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে, মেট্রোরেলের সুড়ঙ্গ খুঁড়তে গিয়ে স্বর্ণ উদ্ধার করা হয়েছে। এরকম কয়েকটি পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে ও এখানে।
গত ৮ ফেব্রুয়ারি 'সময়ের বাংলা' নামে একটি ফেসবুক পেজে একটি সংবাদ পোস্ট করে লেখা হয়, "মেট্রোরেলের সু’ড়ঙ্গ খু’ড়তে গিয়ে বেরিয়ে এল সোনা! ভিডিও তুমুল ভাইরাল"। ফেসবুক পোস্টটির স্ক্রিনশট দেখুন--
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, আলোচ্য পোস্টে করা মেট্রোরেলের নির্মাণ চলাকালে সুড়ঙ্গ খুঁড়তে গিয়ে স্বর্ণ খুঁজে পাওয়ার দাবিটি সঠিক নয়। মেট্রোরেলের নির্মাণ চলাকালে স্বর্ণ উদ্ধারের কোনো ঘটনা ঘটার খবর গণমাধ্যমে পাওয়া যায়নি। এছাড়া, ফেসবুক পোস্টে করা অখ্যাত পোর্টালের লিংকের শিরোনামে সোনা উদ্ধারের কথা লিখা হলেও খবরের বিষয়বস্তু ভিন্ন।
পোস্টে যুক্ত লিংকের সংবাদটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, পোস্টের ক্যাপশন ও সংবাদের শিরোনাম শিরোনামের সাথে সংবাদের বিষয়বস্তুর কোন মিল নেই। খবরবিডি ডট কম নামের ওয়েবসাইটের উক্ত লিংকে ঢুকে দেখা যায়, ‘মেট্রোরেলের সু’ড়ঙ্গ খু’ড়তে গিয়ে বেরিয়ে এল সোনা! ভিডিও তুমুল ভাইরাল’ শিরোনামে সংবাদটি প্রকাশ করা হয়েছে। বিষয়বস্তুতে লেখা হয়েছে, “সোনা মানুষের আবিষ্কৃত প্রাচীনতম মৌল। এমনকি নব প্রস্তর যুগেও সোনার তৈরি দ্রব্যাদি ব্যবহৃত হতো। সে যুগে খননকৃত অনেক নিদর্শনে পাথরের জিনিসের সাথে এগুলোর অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। জার্মানির বিখ্যাত সমাজতত্ত্ববিদ কার্ল মার্ক্সও সোনাকে মানুষের আবিষ্কৃত প্রথম ধাতু হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। অপরিবর্তনীয় রুপ, সহজ বণ্টনযোগ্যতা এবং চকচকে প্রকৃতির জন্য এটি অনেক আগে থেকেই অর্থের প্রধান মানদণ্ড হিসেবে ব্যবহৃত হতো। সোনার সাথে পৃথিবীর অনেক বেদনা বিধুর ও ভয়ংকর কাহিনী জড়িত। সোনা অধিকারের লক্ষ্যে জাতিতে জাতিতে যুদ্ধ হয়েছে, প্রাণ হারিয়েছে অগণিত মানুষ। আবার সোনার মালিক হয়েও কেউ শান্তি পায়নি। কারণ পাওয়ার পরই এসে যেতো সোনা হারানোর ভয়। যখন থেকে মানুষ সমাজবদ্ধ হতে শিখেছে এবং ধীরে ধীরে সামাজিক শ্রেণীবিভাগের সূচনা হয়েছে তখন থেকেই মানুষ খনি থেকে সোনা উত্তোলন করতে শুরু করে।” স্ক্রিনশট দেখুন--
অর্থ্যাৎ শিরোনামের সাথে বিষয়বস্তুর কোন মিল নেই। শিরোনামে মেট্রোরেলের নির্মাণকালে সুড়ঙ্গ করার সময় সোনা উদ্ধারের কথা বলা হলেও, বিষয়বস্তুতে স্বর্ণ ও স্বর্ণের খনি নিয়ে অপ্রাসঙ্গিক আলোচনা করা হয়েছে। মেট্রোরেল, সুড়ঙ্গ করা কিংবা সোনা উদ্ধার ইত্যাদি বিষয়ে কোন তথ্যই উল্লেখ করা হয়নি।
এদিকে, বিভিন্নভাবে কি-ওয়ার্ড সার্চ করেও মেট্রোরেলের কাজ চলাকালে সুড়ঙ্গ খুঁড়তে গিয়ে স্বর্ণ উদ্ধারের কোনো খবর গণমাধ্যমে খুঁজে পাওয়া যায়নি। মেট্রোরেলের কাজ চলাকালে স্বর্ণ উদ্ধারের মত কোনো ঘটনা ঘটেছে কি না জানতে মেট্রোরেল প্রজেক্টের এমডি এম এ এন সিদ্দিকের সাথে যোগাযোগ করে বুম বাংলাদেশ। এসময় এম এ এন সিদ্দিকের পক্ষ থেকে তাঁর ব্যক্তিগত সহকারী জানান, এরকম কোনো ঘটনা ঘটেনি।
সুতরাং বিষয়বস্তুতে ভিন্ন সংবাদ দিয়ে শিরোনামে মেট্রোরেলের কাজ চলাকালে স্বর্ণ উদ্ধারের বানোয়াট ও ভিত্তিহীন খবর প্রচার করা হচ্ছে ফেসবুকে, যা বিভ্রান্তিকর।