সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে ও বিভিন্ন অনলাইন পোর্টালে হেফাজতে ইসলামের নতুন কমিটির যুগ্ম-মহাসচিব ও বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হকের মৃত্যুর একটি খবর ছড়ানো হচ্ছে। 'মারা গেলেন হেফাজতে ইসলামের নতুন কমিটির যুগ্ম-মহাসচিব মামুনুল হক' শিরোনামের খবরটিতে শিরোনামে মৃত্যুর খবর থাকলেও মূল খবরে এরকম কোন তথ্য নেই। দেখুন এখানে, এখানে ও এখানে।
আবার একইভাবে মাওলানা মামুনুলের জেলে যাওয়ার শিরোনাম দিয়ে অন্য একটি খবরও কিছু অনলাইন পোর্টালের বরাতে সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়েছে। দেখুন এখানে।
ফ্যাক্ট চেক:
মাওলানা মামুনুলের মৃত্যুর খবর যাচাই করে দেখা যায় যেসব প্রতিবেদনের শিরোনামে তার মৃত্যুর খবর দেয়া হয়েছে সেগুলোর ভেতরের মূল খবরে মৃত্যুর কোন তথ্য নেই। বরং সবকটি প্রতিবেদনেরই মূল খবর হুবহু একইরকম। একটি প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে-
''হেফাজতে ইসলামের নতুন কমিটির যুগ্ম-মহাসচিব, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক বলেছেন, 'বঙ্গবন্ধু মরহুম শেখ মুজিবুর রহমান এর প্রতি জাতীয় নেতা হিসেবে আমাদের পরিপূর্ণ শ্রদ্ধা রয়েছে। আমরা চাই না একজন মরহুম, একজন মৃত মুসলমানকে নিয়ে এমন কোনও কার্যকলাপ পরিচালনা করা হোক, যে কার্যকলাপের কারণে কবরের মধ্যে বঙ্গবন্ধুকে আল্লাহর পক্ষ থেকে কোনও আজাবের সম্মুখীন হতে হয়।'
বৃহস্পতিবার (১৯ নভেম্বর) জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে এক বিক্ষোভে মামুনুল হক এসব কথা বলেন।
এরআগে, বৃহস্পতিবার সকালে ইসলামী ঐক্যজোট নেতা মুফতি সাখাওয়াত হোসাইন রাজির নেতৃত্বাধীন 'রাহমাতুল্লিল আলামিন' নামে একটি সংগঠন ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন মিলনায়তনে একটি সভা করতে গেলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বাধা পায়। মুফতি রাজি বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, আইনশৃঙ্খলাবাহিনী সেখানে সভা করতে দেয়নি, পরে তারা বায়তুল মোকাররম এলাকায় সংক্ষিপ্ত সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল করে। কয়েকশ' মাদ্রাসার ছাত্র ও শিক্ষকরা এই বিক্ষোভে অংশগ্রহণ করেন।
বক্তব্যে হেফাজত নেতা মামুনুল হক বলেন, 'আমরা মাঠে নামবো, এভাবে ছেড়ে দেবো না। হেফাজতের কমিটি আপনাদের মন মতো হয়নি, আপনারা রাগ করেন, অভিমান করেন। হেফাজত আপনার প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী চলবে না, আলেমদের সমর্থণে চলবে। হেফাজত বাংলাদেশের পক্ষে থাকবে।'
দেশের সকল মুসলিম নেতাদের ভাস্কর্য বা মূর্তি অপসারণের দাবি জানিয়ে মামুন বলেন, 'এই মূর্তি যারই হোক, জিয়াউর রহমানের হোক, এগুলো সরাতে হবে। দেশের মুসলমানরা এই মূর্তি সংস্কৃতি মানবে না।'
মুফতি সাখাওয়াত হোসাইন রাজির সভাপতিত্বে বিক্ষোভে হেফাজতের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আতাউল্লাহ আমীনসহ কয়েকজন হেফাজত নেতা বক্তব্য দেন।''
তাছাড়া মূলধারার কোন সংবাদ মাধ্যমেও এরকম কোন সংবাদ পাওয়া যায়নি অথচ সম্প্রতি ভাস্কর্য ইস্যুতে আলোচিত এই হেফাজত নেতার মৃত্যু হলে তা কোন সংবাদ মাধ্যমের চোখ এড়ানোর কথা নয়।
অন্যদিকে মাওলানা মামুনুলের জেলে যাওয়ার খবরটিও সত্য নয়। এই শিরোনামের খবরেও পূর্বের প্রতিবেদনগুলোর মতো হুবহু ভাষ্য দেয়া হয়েছে। মূলধারার কোন সংবাদ মাধ্যমের অনলাইন কিংবা ছাপা কোন সংস্করনেই এরকম কোন সংবাদ খুঁজে পায়নি বুম বাংলাদেশ।
উল্লেখ্য, বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপন নিয়ে সাম্প্রতিক বিতর্কে ভাস্কর্যের বিরুদ্ধে আক্রমণাত্নক বক্তব্য দেয়া ও অবস্থান নেয়ায় হেফাজত নেতা মাওলানা জুনায়েদ বাবুনগরী ও 'ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের' নেতা মাওলানা সৈয়দ ফয়জুল করিম পীর চরমোনাইয়ের সাথে মাওলানা মামুনুল হকের বিরুদ্ধেও রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা হয়েছে। গত সোমবার ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে এই মামলা করেছেন মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল। দেখুন এখানে ও এখানে।