ফেসবুকে একটি ছবিসহ কিছু তথ্য ভাইরাল হয়েছে। ছবিটি কম্পিউটার প্রিন্ট করা একটি কাগজের। তাতে শিরোনাম আকারে লেখা রয়েছে, "কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন- ১ম কিস্তি, মোট সংখ্যা ২ লক্ষ"।
শিরোনামের নিচে আরও লেখা রয়েছে "বিতরণের প্রস্তাবিত তালিকা"। এরপর হিসাব করে দেখানো হয়েছে কাদের জন্য কতটি ভ্যাকসিন বিতরণ করা হবে সেই তথ্য।
নিচে ছবিটি দেখুন স্ক্রিনশটে--
ছবিটি ফেসবুকে অনেক পেইজ এবং আইডি থেকে পোস্ট করা হয়েছে। এসব পোস্টের শেষে ব্রাকেটে "(মন্ত্রণালয় সুত্রে প্রাপ্ত) বলে একটি কথাও লেখা রয়েছে।
ফ্যাক্ট চেক:
প্রথমত, ভাইরাল হওয়া তথ্যগুলোকে 'মন্ত্রণালয় সূত্রে প্রাপ্ত' বলে প্রচার করা হলেও কে কবে কিভাবে মন্ত্রণালয় থেকে পেয়েছেন তার কোনো তথ্য ভাইরাল হওয়া ফেসবুক পোস্টে নেই। নির্ভরযোগ্য সংবাদমাধ্যম বা ব্যক্তির বরাতে কোথাও এমন তথ্য প্রকাশিত আকারে পাওয়া যায়নি। অনলাইনে সার্চ করে ফেসবুকে অজ্ঞাত সূত্রের বরাত ছাড়া আর কোনো তথ্য মিলেনি এই বিষয়ে।
দ্বিতীয়ত, নির্ভরযোগ্য সংবাদমাধ্যমে ভ্যাকসিন ব্যবস্থাপনায় জড়িত সরকারের উচ্চপদস্ত ব্যক্তিদের বরাতে যেসব খবর সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে তার সাথে ভাইরাল হওয়া অনেকগুলো তথ্যের কোনো মিল নেই।
গত ১৩ ডিসেম্বর ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউটের সাথে আনুষ্ঠানিক চুক্তি স্বাক্ষর করে বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। চুক্তি মতে, সিরাম বাংলাদেশকে মোট ৩ কোটি ডোজ ভ্যাকসিন দেবে আগামী ছয় মাসের মধ্যে। প্রতি মাসে ৫০ লাখ ডোজ করে সরবরাহ করা হবে।
প্রথম কিস্তির ৫০ লাখ ডোজ বাংলাদেশ হাতে পাবে জানুয়ারি মাসের মাঝামাঝি। এক রোগীকে ২টি ডোজ দেয়া লাগায় ৩ কোটি ডোজের বিনিময়ে দেড় কোটি মানুষকে আগামী মাসগুলোতে ভ্যাকসিন দেয়া যাবে যা মোট জনসংখ্যার ৯ শতাংশ।
বিস্তারিত দেখুন এখানে ও এখানে।
ভাইরাল হওয়া পোস্টে দাবি করা হয়েছে প্রথম কিস্তিতে ২ লাখ ভ্যাকসিন আসবে। অর্থাৎ, এই তথ্যটি অসত্য।
ভ্যকসিন বন্টনের বিষয়েও যেসব তথ্য দেয়া হয়েছে ভাইরাল হওয়া পোস্টে সেগুলোর সাথে নির্ভরযোগ্য সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য কোনোভাবেই মিলছে না।
গত ১২ ডিসেম্বর ইংরেজি দৈনিক দ্য বিজনেস স্যান্ডার্ড "Who will get the first jabs in Bangladesh?" শিরোনামের প্রতিবেদনে ভ্যাকসিন ব্যবস্থাপনায় জড়িত ব্যক্তিদের বরাতে বিস্তারিত জানিয়েছে যে, ৩ কোটি ডোজ ভ্যাকসিন দেয়ার জন্য কিভাবে দেড় কোটি ব্যক্তিকে নির্বাচন করা হবে।
কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন ম্যানেজম্যান্ট টাস্কফোর্স এর সদস্য সচিব বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানান, প্রথম পর্যায়ে আসা ৫০ লাখ ডোজ (২৫ লাখ ব্যক্তি) ভ্যাকসিন দেয়া হবে স্বাস্থ্যকর্মী, পুলিশ এবং সরকারি প্রশাসনে কর্মরত সম্মুখযোদ্ধাদেরকে।
টাস্কফোর্স পুরো দেড় কোটি ভ্যাকসিন বন্টন করা হবে তার একটি প্রস্তাবনা তুলে ধরেছে। সেই প্রস্তাবনা অনুযায়ী (যা চূড়ান্ত হওয়ার আগে সরকারের অনুমোদন সাপেক্ষ), ১ কোটি ২০ লাখ ডোজ দেয়া হবে ৬০ বছরের বেশি বয়স্ক লোকদেরকে। ৭ লাখ ডোজ দেয়া হবে বেসরকারি স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য, সরকারি স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য সাড়ে ৪ লাখ, সেনাবাহিনী ৩ লাখ, পুলিশ সাড়ে ৫ লাখ, মুক্তিযোদ্ধা ২ লাখ ১০ হাজার, স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা সহযোগী কর্মী দেড় লাখ, জনপ্রতিনিধি ৭০ হাজার, সাংবাদিক ৫০ হাজার, সিভিল সার্জ, জেলা প্রশাসক এবং মন্ত্রণালয় কর্মকর্তা ৫ হাজার ডোজ।
অর্থাৎ, ভাইরাল হওয়া তথ্যের সাথে টাস্কফোর্সের দেয়া তথ্যের কোনো মিল নেই।
এছাড়া ভাইরাল হওয়া পোস্টে বেশ কিছু অসঙ্গতি রয়েছে। যেমন বলা হয়েছে, "রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী এবং কেবিনেট: ২০,০০০"। একজন রাষ্ট্রপতি, একজন প্রধানমন্ত্রী এবং ৪৭ জন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী-উপমন্ত্রীর জন্য ডোজ প্রয়োজন ৯৮টি। তাদের মূল পরিবারের সদস্যদের হিসাবের মধ্যে নিলেও ২০ হাজার ডোজ ভ্যাকসিন বরাদ্দ রাখা অস্বাভাবিক। এছাড়া "অধিদপ্তর ও সেক্টর কর্পোরেশন" বলে কী বুঝানো হয়েছে তাও স্পষ্ট নয়।
সিদ্ধান্ত:
ভাইরাল হওয়া পোস্টের তথ্যগুলো ভিত্তিহীন ও বিভ্রান্তিকর। ২ লাখ নয়, প্রথম পর্যায়ে ৩ কোটি ডোজ ভ্যাকসিন আমদানি করছে বাংলাদেশ।