একাধিক ফেসবুক গ্রুপ এবং পেইজ থেকে মেসি এবং রোনালদোর ফিলিস্তিনের প্রতি সহমর্মিতা সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য ভাইরাল হয়েছে। দেখুন এমন কিছু লিঙ্ক এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে।
গত ১৬ মে 'আমরা আর্জেন্টিনা ফুটবলের কট্টর সমর্থক' নামের গ্রুপে একটি পোস্টে লেখা হয়েছে, ৮ বছর আগে (অর্থাৎ ২০১৩ সালে) ইসরায়েলের সাথে এক ফুটবল ম্যাচ শেষে জার্সি বদল করতে অস্বীকৃতি জানায় পর্তুগালের ফুটবলার ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো। তিনি বলেন, খুনিদের সাথে জার্সি বদল করিনা। একইভাবে ২০১৮ সালে বিশ্বকাপ-২০২২ এর প্রস্তুতি ম্যাচে ইসরায়েলের সাথে খেলতে নারাজি জানান মেসি। পরে সেই ম্যাচ বাতিল করে আর্জেন্টাইন ফুটবল এসোসিয়েশন।
এছাড়া পোস্টের সাথে রোনালদোর একাধিক ছবি দেখা যাচ্ছে যেখানে শেষ ছবিতে রোনালদোর হাতে ফিলিস্তিনের পতাকা দেখা যাচ্ছে।
এছাড়া লিওনেল মেসি ও রোনালদো সংক্রান্ত এই দাবিগুলো ভিন্ন ভিন্ন পোস্টেও ভাইরাল হয়।
এরকম একটি পোস্টে দাবি করা হয়, মেসি সেই ম্যাচ খেলতে অস্বীকৃতি জানিয়ে বলেন, '"জাতিসংঘের শুভেচ্ছাদূত হিসাবে আমি তাদের বিপক্ষে কখনোই খেলতে পারি না, যারা নির্দোষ শিশুদের হত্যা করে। আমাদের এই ম্যাচটি বাতিল করতে হয়েছে কারণ আমরা ফুটবলার বটে কিন্তু তার আগে মানুষ।"
দেখুন স্ক্রিনশট-
রোনালদো সংক্রান্ত একটি পোস্ট দেখুন--
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, পোস্টে করা দাবিগুলো বিভ্রান্তিকর।
প্রথমত, একটি পোস্টে দাবি করা হয়েছে, ইসরায়েলের সাথে খেলতে অস্বীকৃতি জানান মেসি। এছাড়া আরেকটি পোস্টে দাবি করা হয়, মেসি বলেছেন, নির্দোষ ফিলিস্তিনি শিশু হত্যাকারীদের সাথে তিনি খেলবেন না। কিন্তু গুগল সার্চ করে কোনো বিশ্বাসযোগ্য সংবাদমাধ্যমে মেসির এমন কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
বরং এএফপি'র ২০১৮ সালের এক ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, মেসির ইসরায়েলের বিরুদ্ধে এমন বক্তব্যের দাবিটি অপ্রমানিত।
উক্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, 'ট্রল ফুটবল' নামক একটি পেইজে TYC Sports এর বরাতে এমন বক্তব্য পোস্ট করা হয়। কিন্তু আর্জেন্টিনা-ভিত্তিক খেলার চ্যানেল TYC Sports এর সাংবাদিক মার্টিন আরেভালো এক টুইটে জানান, এরকম দাবি ভিত্তিহীন। ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংক্রান্ত কোনো বক্তব্যই আর্জেন্টিনার তারকা খেলোয়ার মেসি কোনো মিডিয়াতে দেননি, আমাদের চ্যানেল তো নয়ই। দেখুন সেই টুইট-
Es falso lo que escribes. Messi no hablo con ningún medio y tampoco en @TyCSports sobre esto. Informen con precisión. Messi en esta gira no hablo con la prensa. https://t.co/yCfeSprdwZ
— Martin Arevalo (@arevalo_martin) June 6, 2018
ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি'র প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, লিওনেল মেসির ইউনিসেফের শুভেচ্ছাদূত হওয়ার তথ্যটি সঠিক হলেও তাকে কখনো কোনো প্রকার রাজনৈতিক বক্তব্য দিতে দেখা যায়নি।
তবে ইসরায়েলের সাথে আর্জেন্টিনার সেই প্রস্তুতি ম্যাচ বাতিল হওয়ার খবর প্রকাশিত হয়েছিল একাধিক আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে। মেসির নেতৃত্বাধীন আর্জেন্টিনার জাতীয় দল রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণ দেখিয়ে সেই ম্যাচটি খেলতে অস্বীকৃতি জানায়। এ ব্যাপারে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু আর্জেন্টিনার রাষ্ট্রপ্রতিকে ফোন করলেও তিনি কিছু করতে পারবেন না বলে জানিয়ে দেন রাষ্ট্রপ্রতি মরিসিও মাক্রি। দেখুন এ সংক্রান্ত দুটি খবর এখানে ও এখানে। ।
সুতরাং ইসরায়েলের সাথে ২০১৮ সালের প্রস্তুতি ম্যাচটি আর্জেন্টিনা বাতিল করার খবরটি সত্য হলেও মেসির ব্যক্তিগতভাবে এব্যাপারে মন্তব্য করার দাবিটি অপ্রমানিত এবং বিভ্রান্তিকর।
একইভাবে পর্তুগালের তারকা ফুটবলার ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর ২০১৩ সালে ইসরায়েলের সাথে ম্যাচের পর জার্সি বদলে অস্বীকৃতি জানানোর তথ্যটিও অপ্রমানিত। মূলত যুক্তরাজ্য-ভিত্তিক মেট্রো ডট কো ডট ইউকে'তে এ সংক্রান্ত দুটি ছবি পোস্ট করা হলেও ছবিগুলো জার্সি-বিনিময়ে অস্বীকৃতি সংক্রান্ত কোনো তথ্য কিংবা বক্তব্যের উল্লেখ সেখানে নেই।
এমনকি মেট্রো'তে প্রকাশিত দুটি ছবি দেখেও জার্সি বদল করতে না চাওয়ার ব্যাপারটি স্পষ্ট নয়। এছাড়া আর কোনো মুলধারার সংবাদমাধ্যমে রোনালদো'র ইসরায়েলের সাথে জার্সি-বিনিময় অস্বীকারের বিষয়ে কোনো প্রতিবেদন কিংবা বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
অপরদিকে, ২০১৯ সালে ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসরায়েল কাটজকে নিজের জার্সি উপহার দিয়েছিলেন রোনালদো। এ নিয়ে নানা বিতর্কও উঠে রোনালদোভক্ত পাড়ায়।
এছাড়া ভাইরাল হওয়া পোস্টের সাথে যুক্ত চারটি ছবির একটি এডিট করা। সেখানে একটি ছবিতে রোনালদোকে ফিলিস্তিনের পতাকা হাতে দেখা যাচ্ছে যাতে লেখা "Todos con Palestine"। কিন্তু আসল ছবিটি ছিল ২০১১ সালে স্পেনের লোরকা শহরে ভূমিকম্পের প্রতি সহমর্মিতা জানিয়ে পোস্ট করা রোনালদোর ছবি। ছবিটিতে 'লোরকা' শব্দটিকে এডিট করে 'প্যালেস্টাইন' বানানো হয়েছে।
এ সংক্রান্ত এএফপি'র আরেকটি ছবি দেখুন-