সময় টিভি একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে যার শিরোনাম, "এবার আল জাজিরার দাবি প্রত্যাখ্যান করলো জাতিসংঘ"। ইউটিউবে Somoy TV চ্যানেলে প্রতিবেদনটি দেখা যাবে এখানে।
এছাড়া সময় টিভির ওয়েবসাইটে এবং আরও কিছু অনলাইন পোর্টালে এ সংক্রান্ত খবর দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে।
ফেসবুক পোস্টটি আর্কাইভ করা আছে এখানে।
সময় টিভির ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশিত ১ মিনিট ২৪ সেকেন্ডের ভিডিওর স্ক্রিপ্টের সাথে সময় টিভির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদনের টেক্সটের মিল আছে।
ওয়েবসাইটে "আল-জাজিরার প্রতিবেদন নিয়ে জাতিসংঘের বিবৃতি" শিরোনামের প্রতিবেদনে নিচের প্যারাটি রয়েছে--
"এবার বাংলাদেশের বিষয়ে আল-জাজিরা টেলিভিশনের দেয়া তথ্যের বিরোধিতা করলো খোদ জাতিসংঘ। স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার নিউইয়র্কে নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র বলেন, আল জাজিরার প্রামাণ্যচিত্রে বাংলাদেশ যে ধরনের ইলেকট্রনিক যন্ত্র ব্যবহার করেছে বলে দাবি করা হয়েছে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের কোনো কন্টিনজেন্টে এরকম যন্ত্র ব্যবহারের প্রমাণ মেলেনি।
এই প্যারাটি ইউটিউবে আপলোড করা ভিজুয়াল প্রতিবেদনেও রয়েছে।
এছাড়া ওয়েবসাইটের প্রতিবেদনে আরেকটি প্যারাও রয়েছে। সেটি হলো--
"জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র স্টেফেন দুজারিক বলেন, 'জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি ইউনিফর্মড সদস্য রয়েছে। প্রতিটি শান্তি মিশনে তাদের মোতায়েনে জাতিসংঘের সুনির্দিষ্ট নির্দেশনাগুলো বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তিতে উল্লেখ রয়েছে। আল জাজিরার প্রামাণ্যচিত্রে যে ধরনের ইলেক্ট্রনিক যন্ত্রের কথা উঠে এসেছে শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশ কন্টিনজেন্টে সে ধরনের কোনো যন্ত্র ব্যবহার করা হয় না।"
কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, সময় টিভির প্রতিবেদনে ভুল ও বিভ্রান্তিকরভাবে জাতিসংঘের মুখপাত্রের বক্তব্য তুলে ধরা হয়েছে।
আল জাজিরার অনুসন্ধানী ডকুমেন্টারি বিষয়ে জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র Stéphane Dujarric গত ৪ ফেব্রুয়ারি ব্রিফিংয়ে এক প্রশ্নের জবাবে যা বলেছে তা জাতিসংঘের ওয়েবসাইট এবং ইউটিউব চ্যানেলে সম্প্রচারিত হয়েছে। Stéphane Dujarric পুরো বক্তব্যের ট্রান্সক্রিপ্ট দেখুন জাতিসংঘের ওয়েবসাইটের এই লিংকে। নিচের স্ক্রিনশটে আল জাজিরা বিষয়ে Stéphane Dujarric এর বক্তব্যের পুরো অংশ দেখুন।
অর্থাৎ, জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র তার বক্তব্যে আল জাজিরার কোনো দাবি প্রত্যাখ্যান করেননি।
বরং আল জাজিরার ডকুমেন্টারিতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে ইসরায়েলি কোম্পানির কাছ থেকে সারভেইলেন্স যন্ত্রপাতি কেনার যে অভিযোগ তোলা হয়েছে সেটির ব্যাখ্যা দিয়ে সেনাবাহিনী একটি বিবৃতি দিয়েছিলো। সেই বিবৃতিতে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, (হাঙ্গেরি থেকে) সারভেইলেন্স যন্ত্রপাতি কেনা হয়েছে 'জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে ব্যবহারের জন্য'।
সেনাবাহিনীর সেই বিবৃতির প্রতি ইঙ্গিত করে সাংবাদিক যখন জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্রকে প্রশ্ন করেছিলেন, তখন মুখপাত্র বলেছেন, "জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে উর্দিধারী সদস্যের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সবচেয়ে বড় অংশগ্রহণকারী। জাতিসংঘের সুনির্দিষ্ট প্রয়োজন অনুসারে এ ধরনের সদস্যদের মোতায়েন করা হয়। বাংলাদেশ অংশগ্রহণ করে, এমন প্রতিটি শান্তিরক্ষা মিশনের জন্য দেশটির সঙ্গে জাতিসংঘের চুক্তিতে এই প্রয়োজনের প্রতিফলন থাকে। আল-জাজিরার তথ্যচিত্রে যেসব ইলেকট্রনিক সরঞ্জামের কথা বর্ণনা করা হয়েছে, তার প্রয়োজনীয়তার কথা কোনো চুক্তিতে উল্লেখ করেনি জাতিসংঘ। আর জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের বাংলাদেশ কনটিনজেন্টসে এ ধরনের সরঞ্জামও রাখা হয়নি।" (অনুবাদ: প্রথম আলো)।
অর্থাৎ, এর মাধ্যমে মূলত জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বিবৃতিতে দেয়া তথ্যটি (শান্তি মিশনের জন্য সারভেইলেন্স যন্ত্রপাতি কেনা) প্রত্যাখ্যান করেছেন। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর দাবির প্রেক্ষিতে তিনি বলেছেন, "আল-জাজিরার তথ্যচিত্রে যেসব ইলেকট্রনিক সরঞ্জামের কথা বর্ণনা করা হয়েছে, তার প্রয়োজনীয়তার কথা কোনো চুক্তিতে উল্লেখ করেনি জাতিসংঘ। আর জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের বাংলাদেশ কনটিনজেন্টসে এ ধরনের সরঞ্জামও রাখা হয়নি।"
জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্রের এই বক্তব্যটি আল জাজিরার ডকুমেন্টারিকে লক্ষ্য করে নয়। কারণ, ডকুমেন্টারিতে এমন কোনো দাবি করা হয়নি যে, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কেনা সারভেইলেন্স যন্ত্রপাতি জাতিসংঘের শান্তি মিশনে ব্যবহৃত হয়ে থাকে বা হতে পারে। বরং এই দাবিটি করেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। এবং সেই দাবির জবাব দিতে গিয়ে মহাসচিবের মুখপাত্র শান্তি মিশনে যে এমন যন্ত্রপাতি ব্যবহারের সুযোগ বাংলাদেশি সেনাদের নেই তথ্যটি জানিয়েছেন।
ফলে জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র Stéphane Dujarric এর এমন বক্তব্যকে "এবার আল জাজিরার দাবি প্রত্যাখ্যান করলো জাতিসংঘ" হিসেবে উপস্থাপন করা ভুল এবং বিভ্রান্তিকর অনুবাদ।
এমন ভুল ও বিভ্রান্তিকর উপস্থাপন শুধু সময় টিভি নয়, আরও কিছু সংবাদমাধ্যমে দেখা গেছে। যেমন একাত্তর টিভির একটি সংবাদে একই রকম ভুল করা হয়েছে।
একটি প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, "বাংলাদেশ সেনা বাহিনী নিয়ে আল জাজিরার প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান জাতিসংঘের"
একাত্তর টেলিভিশনের ভেরিফায়েড ইউটিউব চ্যানেল থেকে 'সংবাদ সমগ্র' শীর্ষক প্রতিবেদনটি ৫ ফেব্রুয়ারী আপলোড করা হয়। দেখুন এখানে। ৫ মিনিট ২০ সেকেন্ড থেকে দেখলে খবরটি পাওয়া যাবে।