সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানের মুসলমানদের নিয়ে কথিত একটি মন্তব্যযুক্ত সম্পাদিত ছবি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়েছে। সম্পাদিত ছবিটি অনুযায়ী যুবরাজ বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানে একজনও খাটি মুসলমান নেই, সব হিন্দু ধর্ম থেকে ধর্মান্তরিত এরকম মন্তব্য করেছেন বলে দাবী করা হচ্ছে।
এরকম কিছু সাম্প্রতিক ফেসবুক পোস্ট দেখুন নিচের স্ক্রিনশটে--
বিন সালমানের কথিত এমন বক্তব্য নিয়ে এর আগে বাংলাদেশি সংবাদমাধ্যমে ভারতের একটি অনলাইন পোর্টালের বরাতে খবর প্রকাশিত হয়েছিল ২০১৭ সালে। দেখুন তখনকার বাংলাদেশ প্রতিদিনের খবরের স্ক্রিনশট--
বিন সালমানের এমন বক্তব্যের উৎস কোথায় তা জানতে বাংলা ও ইংরেজি উভয় ভাষায় গুগলে অনুসন্ধান চালিয়ে নির্ভরযোগ্য কোন সূত্র খুঁজে পায়নি বুম বাংলাদেশ।
এমবিএস নামে খ্যাত সৌদি সিংহাসনের উত্তরাধিকারী মোহাম্মদ বিন সালমান বর্তমান সৌদি বাদশাহ সালমানের পুত্র এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রীও। পিতার শাসনের আড়ালে থেকে তিনি সৌদি সরকারের সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তি হয়ে উঠেছেন। তিনিই বহির্বিশ্বের সাথে সৌদি সম্পর্কের নিয়ন্ত্রক হয়ে উঠেছেন।
ভারতীয় উপমহাদেশের মুসলমানদের নিয়ে সৌদি যুবরাজের মত ব্যক্তি এরকম কোন মন্তব্য করে থাকলে তা সৌদিসহ বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানের মূলধারার সংবাদমাধ্যমে আসার কথা কিন্তু সেরকম কোন খবর
এসব দেশের স্বীকৃত ও মূলধারার কোনো সংবাদমাধ্যমে পাওয়া যায়নি।
২০১৭ সালের ১১ জুন তারিখে 'কলকাতা ২৪×৭' নামক একটি পোর্টালে এরকম একটি
প্রতিবেদন পাওয়া যায় যেখানে কোন তথ্যসূত্র ছাড়াই শুধু কথিত মন্তব্যটি উল্লেখ করা হয়েছে।
অনলাইনে আরও অনুসন্ধানে দেখা যায়, তানভীর আরাইন নামে পাকিস্তানি এক সাংবাদিক তার
টুইটারে ২০১৭ সালের ১০ জুন আরবী একটি টেক্সটের ছবি দিয়ে সেটিকে মোহাম্মদ বিন সালমানের মন্তব্য বলে অভিহিত করেন যেখানে যুবরাজ পাকিস্তান সম্পর্কে অবমাননাকর মন্তব্য করেছেন বলে তানভীর দাবী করেন। এই টুইটকে সূত্র হিসেবে নিয়ে
২০১৭ সালের ১০ ডিসেম্বর ভারতীয়
অন্য আরেকটি সংবাদ পোর্টাল 'পোস্টকার্ড'
খবর প্রকাশ করে।
তানভীর আরাইনের স্ক্রিনশটটিতে দেখা যায়, ২০১৫ সালের ২৩ এপ্রিল তারিখে তেহরান থেকে 'আরবী ২১ নিউজের' এই আরবী টেক্সটি প্রকাশ করা হয় যা তানভীর আরাইন ২০১৭ সালে এসে টুইট করেন।
পাকিস্তানী সিনিয়র সাংবাদিক আব্বাস নাসির এই টুইটের মন্তব্য সেকশনে এর সত্যতা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করলে সেখানে পাকিস্তানী রাজনীতিবীদ নাদিম এম কোরেশী খবরটিকে ভুয়া বলে অভিহিত করেন। তানভীর আরাইন প্রত্যুত্তরে একটি চিঠি দেখান যাতে সৌদি কর্তৃপক্ষের অফিসিয়াল কোন সিল কিংবা স্বাক্ষর দেয়া নেই।
তিনি চিঠিটি কোথা থেকে পেয়েছেন তাও জানাননি আরাইন। টুইটের মন্তব্য সেকশনে আরো অনেকে এই খবরের সত্যতা জানতে চাইলে তানভীর অন্য কোন সূত্র দিতে পারেননি।
তাছাড়া 'আরবী ২১ নিউজের' কথিত এই রিপোর্ট পৃথক সূত্র হতে যাচাই করার চেষ্টা করা হলেও কোথাও এটির নির্ভরযোগ্য কোনো সূত্র পাওয়া যায়নি।
গুরুত্বপূর্ণ একজন ব্যক্তির গুরুত্বপূর্ণ এমন বক্তব্য নির্ভরযোগ্য কোনো সূত্রে না পাওয়া যাওয়ায় এটিকে বানোয়াট বক্তব্য হিসেবেই চিহ্নিত করেছে বুম।
দ্যা কুইন্টও ইতোমধ্যে এই বিষয়টি নিয়ে ফ্যাক্ট চেক করেছে। দেখুন
এখানে।