সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে একটি ভিডিও দিয়ে দাবি করা হচ্ছে, টঙ্গীতে টিকা নেয়ার পর ১৬ জন শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে মারা গেছে। দেখুন এমন দুটি পোস্টের লিংক এখানে এবং এখানে।
গত ২৩ জানুয়ারি 'P O S T' নামের ফেসবুক পেজ থেকে একটি পোস্ট করে দাবি করা হয়, গত ২০ জানুয়ারি গাজীপুরের টঙ্গী পাইলট স্কুল অ্যান্ড কলেজে ফাইজারের টিকা নেওয়ার পর ফরহাদ সহ ১৬ শিক্ষার্থীকে অসুস্থ অবস্থায় টঙ্গী মেডিকেলে আনা হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করে। এছাড়া সেই মৃত ১৬ জন শিক্ষার্থীর জন্যে দোয়াও কামনা করা হয় এই পোস্টটিতে। পোস্টটির সাথে যুক্ত ভিডিওতে হাসপাতালে একাধিক ব্যক্তিকে কান্নাকাটি করতে দেখা যায় এবং একজন কিশোরের লাশ নিয়ে যেতে দেখা যায়। দেখুন সেই পোস্টের স্ক্রিনশট--
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, টঙ্গীতে ফাইজার টিকা নিয়ে ১৬ জনের মৃত্যুর খবরটি ভিত্তিহীন। প্রথমত, যেই ভিডিওটি উপরোক্ত ফেসবুক পোস্টগুলোতে যুক্ত করা হয়েছে সেখানে একটি কিশোরের লাশ হাসপাতালের বেডে দেখা যাচ্ছে। রিভার্স সার্চিং টুল ব্যবহার করে একই ছবিযুক্ত খবর পাওয়া গেছে গাজীপুরভিত্তিক অনলাইন পোর্টাল 'বহুমাত্রিক সংবাদ' এ। গত ২০ জানুয়ারি প্রকাশিত সেই প্রতিবেদনটির শিরোনাম ছিল, 'টঙ্গীতে টিকা নিতে এসে শিক্ষার্থীর মৃত্যু'। দেখুন--
খবরটিতে বলা হয়, আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে টঙ্গী পাইলট স্কুল অ্যান্ড গার্লস কলেজ কেন্দ্রে টিকা নিতে এসে এক শিক্ষার্থী মারা যায়। মৃত ওই শিক্ষার্থীর নাম ফরহাদ (১৬)। তিনি টঙ্গীর এরশাদ নগর ৬ নম্বর ব্লকের বেড়িবাঁধ এলাকায় মোস্তফার ছেলে। ফরহাদ টঙ্গীর দত্তপাড়া চানকিরটেক এলাকার বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার স্কুল অ্যান্ড কলেজের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী। এই খবরটির সাথে একটি কিশোরের ছবি যুক্ত করা হয়েছে যা ভিডিওটির কিশোর এবং অন্যান্য একাধিক তথ্যের সাথে হুবহু মিলে যায়। কিন্তু সেখানে কেবল ১ জন শিক্ষার্থীর মারা যাওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
পরবর্তীতে উক্ত প্রতিবেদনের সুত্র ধরে সার্চ করলে এ সংক্রান্ত একাধিক প্রতিবেদন মূলধারার সংবাদ মাধ্যমে পাওয়া গেছে। 'টিকা নিতে এসে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন শিক্ষার্থী' শিরোনামে একই দিনে একটি বিস্তারিত খবর প্রকাশ করে দৈনিক যুগান্তর অনলাইন। প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে খবরটিতে বলা হয়, 'ফরহাদসহ তার সহপাঠীরা দুপুরে কলেজগেট এলাকায় নির্ধারিত টিকাদান কেন্দ্রে লাইনে দাঁড়ান। একপর্যায়ে দুপুর পৌনে ২টার দিকে লাইনে দাঁড়ানো অবস্থা থেকে পড়ে যান তিনি। পরে সহপাঠীরা তাকে উদ্ধার করে স্থানীয় ঢাকা ইম্পেরিয়াল হাসপাতালে নিয়ে গেলে তার অবস্থা আশঙ্কাজনক দেখে শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর তাকে মৃত ঘোষণা করেন।' খবরটি দেখুন--
সুতরাং যুগান্তরের এই প্রতিবেদনটিতেও টিকা দিতে এসে ফরহাদ নামে একজন কিশোরের মারা যাওয়ার কথা বলেও ১৬ শিক্ষার্থী অসুস্থ বা মারা যাওয়ার কোন তথ্যই সেখানে নেই।
একইভাবে দৈনিক সমকাল অনলাইনেও খবরটি প্রকাশিত হয়। 'টঙ্গীতে টিকা নিতে গিয়ে শিক্ষার্থীর মৃত্যু' শীর্ষক খবরটিতে নিহত শিক্ষার্থীর মায়ের বরাতে বলা হয়, ফরহাদ আগে থেকেই হৃদরোগে আক্রান্ত ছিল। কিন্তু সেখানেও একই ঘটনায় একাধিক ব্যক্তির আহত বা মারা যাওয়ার কোনো খবর পাওয়া যায়নি। দেখুন--
এছাড়া আজকের পত্রিকা অনলাইনেও টিকা নিতে গিয়ে ফরহাদের মৃত্যুর খবরটি প্রকাশিত হয়েছিল। সেখানে প্রতিবেদককে টঙ্গী পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহ আলম বলেন, টিকা কেন্দ্র পরিদর্শন করেছি। টিকা নেওয়ার আগেই অসুস্থ হয়ে পড়েছিল সে। মরদেহটি পরিবারের সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। 'টঙ্গীতে টিকা নিতে এসে শিক্ষার্থীর মৃত্যু' শিরোনামের সেই প্রতিবেদনটির উক্ত অংশের স্ক্রিনশট–
কিন্তু একইভাবে এখানেও ১৬ জনের ফাইজার টিকা নিতে এসে অসুস্থ হয়ে মারা যাওয়ার কোন খবরের কথা বলা নেই। উল্লেখ্য, স্থানীয় শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালে জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. মকবুল হোসেন 'আজকের পত্রিকা'কে জানান, গাজীপুরের টিকে নিতে আসা ফরহাদের মৃত্যুর আসল কারণ জানা যাবে ময়নাতদন্ত এবং আনুষঙ্গিক তদন্তের পর।
যায়যায়দিন অনলাইনেও খবরটি প্রকাশিত হয়েছিল। পড়ুন তাদের প্রতিবেদনটি। এদিকে এরইমধ্যে ফ্যাক্টচেকিং সংস্থা 'ফ্যাক্টওয়াচ' ১৬ জনের টিকা নেয়ার পর অসুস্থ হয়ে মারা যাওয়ার খবরটিকে 'মিথ্যা' হিসেবে চিহ্নিত করে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। পড়ুন এখানে।
অর্থাৎ গাজীপুরে করোনার টিকে নিতে এসে ১৬ জন অসুস্থ হয়ে মারা গেছে, এমন খবর কোথাও খুঁজে পাওয়া যায়নি। ফলে এমন ভিত্তিহীন তথ্য সামাজিক মাধ্যমে প্রচার করা বিভ্রান্তিকর।