সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকের একাধিক পেজ থেকে একটি ভিডিও শেয়ার করে বলা হচ্ছে, শিশুবক্তা খ্যাত ইসলামিক বক্তা কারাবন্দী মাওলানা রফিকুল ইসলাম মাদানীর মৃত্যু হয়েছে। এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে।
গত ২৮ জানুয়ারি 'Nazmul Hasan Miftah Official' নামের ফেসবুক পেজ থেকে একটি ভিডিও শেয়ার করে লেখা হয়, "আজকে দুপুরে না ফে_রার দেশে চলে গেলেন রফিকুল ইসলাম মাদানি - আজকের তাজা খবর"। ভিডিওটিতে একটি লাশবাহী খাটিয়াকে ঘিরে বহু মানুষের হেঁটে চলার দৃশ্য দেখা যায়। স্ক্রিনশট দেখুন--
অর্থ্যাৎ ভিডিওটিতে দাবি করা হয়েছে, এই মাসের ২৮ তারিখ অর্থ্যাৎ গত পরশুদিন দুপুরে মৃত্যুবরণ করেছেন রফিকুল ইসলাম মাদানী।
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, রফিকুল ইসলাম মাদানীর মৃত্যুর খবরটি ভিত্তিহীন। আলোচ্য পোস্টটির ভিডিওর ক্যাপশনে রফিকুল ইসলামের মৃত্যু হয়েছে লেখা হলেও ভিডিওটির ভিতরে ওই তথ্যটিকেই ভুল বলে দাবি করা হয়েছে।
পোস্টটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, ভিডিওটির শুরুতে রাস্তা দিয়ে লাশবাহী একটি খাটিয়া নিয়ে বহু মানুষের এগিয়ে চলার দৃশ্য দেখিয়ে বলা হয়, "দর্শক আপনারা দেখতে পাচ্ছেন, রফিকুল ইসলামকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। সে আজকে পুলিশের নির্মম হত্যাচারে মারা গিয়েছে। দেখেন, তার জানাজার জন্যে কত লোক হাজির হয়েছে।" তবে, এরপরে পুরো ভিডিওতে রফিকুল ইসলামের মৃত্যু নিয়ে কোনো তথ্য দেয়া হয়নি। এরপরে ভিডিওটির ৮ মিনিট ১৫ সেকেন্ডে বলতে শোনা যায়, "যারা এইসমস্ত থামনিল উলটাপালটা দিয়ে টাকা উপার্জন করতে চায়, তাদের শাস্তি চাই। কারণ, দেখবেন, এইসব ঘটনাকে পরেও ভুয়া মনে করবে মানুষ। এরপরে যখন আলেমরা মারা যাবেন তখন তাদের জানাজায় মানুষ হবে না। তাই অবশ্যই একটা প্রতিবাদ করতে হবে।"
কি-ওয়ার্ড ধরে সার্চ করে যুগান্তরের ওয়েবসাইটে গত ১৭ জানুয়ারি "রফিকুল ইসলাম মাদানীর বিচার শুরু" শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে রফিকুল ইসলাম মাদানীর সর্বশেষ খবর খুঁজে পাওয়া যায়। ওই প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে, "গাজীপুরের বাসন থানায় করা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দায়ের করা মামলায় ‘শিশুবক্তা’ রফিকুল ইসলাম মাদানীসহ দুইজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেছেন আদালত। এর ফলে আসামিদের বিরুদ্ধে মামলার আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হলো। মঙ্গলবার ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক এ এম জুলফিকার হায়াত এই আদেশ দিয়ে আগামী ১ মার্চ সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য করেছেন। মামলায় অপর আসামিরা হলেন- হাফেজ মাসুম বিল্লাহ। অভিযোগ গঠনের শুনানিতে কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে তারা দুজনই নিজেদের নির্দোষ দাবি করে ন্যায়বিচার চান। আসামিদের পক্ষে অব্যাহতির আবেদন করা হলেও বিচারক তা নাকচ করে এ মামলায় তাদের বিচার শুরুর আদেশ দেন।" স্ক্রিনশট দেখুন--
একই বিষয়ে অনলাইন ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম নিউজবাংলার প্রতিবেদনের স্ক্রিনশট দেখুন--
এছাড়া সম্প্রতি শিশুবক্তা খ্যাত রফিকুল ইসলাম মাদানী সংক্রান্ত আর কোনো খবর সংবাদমাধ্যমে পাওয়া যায়নি। অর্থাৎ বর্তমানে রফিকুল ইসলাম মাদানী কারাগারে রয়েছেন। স্বাভাবিকভাবেই কারাবন্দী অবস্থায় আলোচিত এই ইসলামি বক্তার মৃত্যু হলে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হওয়ার কথা। কিন্তু নানাভাবে সার্চ করেও তাঁর মৃত্যু সংক্রান্ত কোনো খবর খুঁজে পায়নি বুম বাংলাদেশ।
সুতরাং বিভ্রান্তিকর শিরোনামে মাওলানা রফিকুল ইসলাম মাদানীর মৃত্যুর ভুয়া সংবাদ প্রচার করা হচ্ছে ফেসবুকে, যা বিভ্রান্তিকর।