সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকের একাধিক আইডি ও পেজ থেকে একজন মাদ্রাসা ছাত্রের ছবি পোস্ট করে বলা হচ্ছে, দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদ্রাসায় ছদ্মবেশী একজন খ্রিস্টান ছাত্র ধরা পড়েছে। এরকম কয়েকটি পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে ও এখানে।
গত ২৪ আগস্ট 'Hafej Humayun Kobir' নামে একটি ফেসবুক আইডি থেকে পোস্ট করে বলা হয়, "ইন্না-লিল্লাহ! আজ হাটহাজারী মাদরাসায় খ্রিস্টান মিশনারী দুজন সদস্য ধরা পড়ে। একজন জামাতে হিদায়াতুন্নাহু অপরজন হেদায়া ক্লাসে পড়াশোনা করে।তারা দু'জন যে কামড়াতে বাস করে, সে কামড়ার এবং আশপাশের ছেলেদের কে গোপনে গোপনে দাওয়াত দিতে শুরু করেছে তারা। এভাবে তারা বেশ কিছুদিন যাবৎ দাওয়াত দিচ্ছে। এবং ছাত্রদের সাথেও এই নিয়েও অনেক কথা কাটাকাটি হয়।পরে মাদরাসার কিছু ছাত্ররা কর্তৃপক্ষ কে অবগত করে এই বিষয় সম্পর্কে। আজ অত্র মাদরাসার সিনিয়র শিক্ষক আনোয়ার শাহ্ আজহারি তাদের দু'জন কে পরিক্ষার "হল" রুমে জিজ্ঞাসা করে।পরে তাদের কথাবার্তায় খ্রিস্টানদের আদর্শের আবাস পাওয়া যায়। ছাত্ররা তাকে ঘিরে ধরেছে।তাদের উপর ঝাপিয়ে পড়েছে চতুর্দিক থেকে। কর্তৃপক্ষ তাদের জন্য কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার জন্য আলাপআলোচনা করতেছে।অনেকদিন যাবৎ এভাবে চলছে খ্রিস্টানদের চক্রান্ত হাটহাজারী মাদরাসার প্রতি। মুহতামিম _এবং_দায়িত্বশীলদের_উদ্দেশ্য_করে_বলছি_আপনারা_খুব_সচেতনতার_ সাথে_এবং_সর্বাধিক_বিবেচনা_করে_তারপরেই_একজন_ছাত্রকে_ভর্তি_করবেন_। #ইনশাআল্লাহ"। ফেসবুক পোস্টটির স্ক্রিনশট দেখুন--
অর্থাৎ এই পোস্টে দাবি করা হচ্ছে, চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী হাটহাজারী মাদ্রাসায় ছাত্রদের মধ্যে একজন ছদ্মবেশী খ্রিস্টান মিশনারীর সদস্য ধরা পড়েছে।
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, আলোচ্য পোস্টের দাবিটি সঠিক নয়। দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদ্রাসার শিক্ষক ও মুখপাত্র মাওলানা মুনির আহমদ মাদ্রাসাটিতে খ্রিস্টান মিশনারীর সদস্য ধরা পড়ার দাবিটি ভুয়া বলে নিশ্চিত করেছেন।
আলোচ্য পোস্টের দাবিটি সত্য কি না জানতে সার্চ করে গণমাধ্যমে হাটহাজারী মাদ্রাসায় খ্রিস্টান ছাত্র ধরা পড়ার কোনো সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়নি। এদিকে হাটহাজারী মাদ্রাসার ফেসবুক পেজ "Darul Uloom Mueenul Islam দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারী"-তে গত ২৪শে আগস্ট করা একটি পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়। ওই ফেসবুক পোস্টে বলা হয়, "বিজ্ঞপ্তি----------- হিদায়াতুন্নাহু জামাতের একজন ছাত্রকে ভর্তি জালিয়াতিসহ জামিয়ার অভ্যন্তরীণ আইন ও শৃঙ্খলাবিরোধী কাজে জড়িত থাকায় আজ (বৃহস্পতিবার) জামিয়া থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এই নিয়ে বিভ্রান্তিমূলক পোস্ট/প্রচারণা থেকে বিরত থাকার জন্য জামিয়া দারুল উলূম হাটহাজারী মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।" ফেসবুক পোস্টটি দেখুন--
এদিকে, আলোচ্য পোস্টটি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে হাটহাজারী মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করে বুম বাংলাদেশ। দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদ্রাসার শিক্ষক এবং মাদ্রাসার মুখপাত্র মাওলানা মুনির আহমদ জানান, আইনশৃঙ্খলা ভঙ্গজনিত কারণে মাদ্রাসার একজন শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তবে খ্রিস্টান ছাত্র বা মিশনারির সদস্য ধরা পড়ার বিষয়টি সম্পূর্ণ গুজব।
অর্থাৎ চট্টগ্রামের হাটহাজারি মাদ্রাসায় একজন খ্রিস্টান মিশনারির সদস্য ধরা পড়ার দাবটি ভিত্তিহীন।
সুতরাং হাটহাজারী মাদ্রাসায় খ্রিস্টান মিশনারীর সদস্য বা ছাত্র ধরা পড়ার ভুয়া দাবি প্রচার করা হচ্ছে ফেসবুকে; যা বিভ্রান্তিকর।