বাংলাদেশের মূলধারার বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে গতকাল শনিবার খবর প্রকাশিত হয়েছে যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান গ্লোব বায়োটেক এর প্রস্তুত করা ভ্যাকসিনকে 'স্বীকৃতি' দিয়েছে।
কয়েকটি খবর দেখুনঃ চ্যানেল আই অনলাইন লিখেছে - বাংলাদেশের ভ্যাকসিনের বিশ্ব স্বীকৃতি
সময় টিভি - বাংলাদেশে তৈরি ভ্যাকসিনকে স্বীকৃতি দিলো বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা
ডিবিসি অনলাইন - গ্লোব বায়োটেকের করোনা ভ্যাকসিনকে স্বীকৃতি দিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা
ইনকিলাব - গ্লোব বায়োটেকের করোনা ভ্যাকসিনকে স্বীকৃতি দিল বিশ্ব স্বাস্ব্য সংস্থা
একইভাবে শিরোনামে না থাকলেও জনকণ্ঠ, জাগোনিউজ, পূর্বপশ্চিমবিডিসহ অন্যান্য সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনের মূল অংশে 'বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার স্বীকৃতি' দেয়ার তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে।
ইনকিলাবের প্রতিবেদনের শুরুতে বলা হয়েছে-
"দেশীয় প্রতিষ্ঠান গ্লোব বায়োটেকের করোনা ভ্যাকসিন ব্যানকোভিড'কে স্বীকৃতি দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। শনিবার (১৭ অক্টোবর) গ্লোব বায়োটেক এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য নিশ্চিত করে।
গ্লোব বায়োটিকের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ১৫ অক্টোবর গ্লোব বায়োটেকের আবিষ্কৃত তিনটি ভ্যাকসিনকে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন ক্যান্ডিডেট তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করেছে। এতে বলা হয়, শুধু মাত্র গ্লোব বায়োটেকই বিশ্বের একমাত্র প্রতিষ্ঠান যাদের তিনটি ভ্যাকসিন ক্যান্ডিডেট তালিকায় স্থান পেয়েছে।''
বেশীরভাগ সংবাদমাধ্যমেই গ্লোব বায়োটেক এর প্রেস বিজ্ঞপ্তির ওপর পুরোপুরি নির্ভর করে প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে।
ফ্যাক্ট চেক:
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ওয়েবসাইটে দেখা যায় 'গ্লোব বায়োটেক' এর ভ্যাকসিনকে সংস্থাটির পক্ষ থেকে 'স্বীকৃতি দেয়া'র কোনো তথ্য নেই।
করোনা ভ্যাকসিনের সর্বশেষ অবস্থা নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ওয়েবসাইটে দেয়া "Draft landscape of COVID-19 candidate vaccines" শিরোনামের খসড়া তালিকার সাথে একটি ডিসক্লেইমার দেয়া আছে। সেটি হুবহু এখানে তুলে ধরা হলো-
"These landscape documents have been prepared by the World Health Organization (WHO) for information purposes only concerning the 2019-2020 global of the novel coronavirus. Inclusion of any particular product or entity in any of these landscape documents does not constitute, and shall not be deemed or construed as, any approval or endorsement by WHO of such product or entity (or any of its businesses or activities). While WHO takes reasonable steps to verify the accuracy of the information presented in these landscape documents, WHO does not make any (and hereby disclaims all) representations and warranties regarding the accuracy, completeness, fitness for a particular purpose (including any of the aforementioned purposes), quality, safety, efficacy, merchantability and/or non-infringement of any information provided in these landscape documents and/or of any of the products referenced therein. WHO also disclaims any and all liability or responsibility whatsoever for any death, disability, injury, suffering, loss, damage or other prejudice of any kind that may arise from or in connection with the procurement, distribution or use of any product included in any of these landscape documents."
ভাবানুবাদ:
"বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কেবলমাত্র ২০১৯-২০ সালের করোনাভাইরাস মহামারী সম্পর্কিত তথ্য প্রকাশের খাতিরে এই তালিকাটি প্রস্তুত করেছে। এই তালিকায় কোন পণ্য বা প্রতিষ্ঠানের অন্তর্ভুক্তিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কোনো ধরনের অনুমতি বা স্বীকৃতি হিসেবে মনে করার কোনো কারণ নেই। বরং উক্ত তালিকায় দেয়া তথ্যগুলোকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কিছু যৌক্তিক ধাপে যাচাই করলেও উল্লেখিত পণ্য বা প্রতিষ্ঠানের সঠিকতা, সম্পূর্ণতা, নির্দিষ্ট কাজের (উপরে উল্লেখিত) সক্ষমতা, মান, নিরাপত্তা, কার্যকারিতা, বাণিজ্যিকতা, অথবা প্রদত্ত তথ্যের অবিকৃতির ব্যাপারে কোন প্রতিনিধিত্ব বা নিশ্চয়তা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা দেয় না। এছাড়াও উক্ত তালিকায় উল্লেখিত পণ্যসমূহের ক্রয়বিক্রয় এবং বন্টনের কারণে কোনো ধরনের ক্ষতি যেমন- মৃত্যু, পঙ্গুত্ব, শারিরীক ক্ষতি, কষ্ট, বা অন্যান্য ভোগান্তি ইত্যাদি হয়ে থাকলে সেসবের দায়-দায়িত্ব থেকে নিজেকে মুক্ত মনে করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।"
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এই খসড়া তালিকার লিংকে পিডিএফ ফরম্যাটে একটি ফাইল দেয়া রয়েছে। মোট এগারো পৃষ্ঠার সেই ফাইলে দুটি ভাগে "Candidate vaccines in clinical evaluation" এবং "Candidate vaccines in preclinical evaluation" শিরোনামে মোটি ১৯৮টি ভ্যাকসিন ক্যান্ডিডেটের তালিকা দেয়া রয়েছে।
এর মধ্যে ১৫৬টি প্রিক্লিনিক্যাল ইভ্য়ালুয়েশন পর্যায়ে এবং ৪২টি ক্লিনিকাল ইভ্যালুয়েশন পর্যায়ে রয়েছে বলে উল্লেখ করা আছে।
প্রিক্লিনিক্যাল ইভ্যালুয়েশন পর্যায়ে থাকা ১৫৬টি ক্যান্ডিডেটের মধ্যে বাংলাদেশের গ্লোব বায়োটেকের তিনটি ক্যান্ডিডেট ভ্যাকসিন রয়েছে। দেখুন এখানে।
গ্লোব বায়োটেকের বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী বাংলাদেশি সংবাদমাধ্যমগুলোর প্রতিবেদনে 'বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এই ১৯৮টি ভ্যাকসিন ক্যান্ডিডেটের তালিকায় বাংলাদেশের গ্লোব বায়োটেকই একমাত্র প্রতিষ্ঠান যার একার তিনটি ক্যান্ডিডেট ভ্যাকসিন রয়েছে' বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
কিন্তু বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার খসড়া তালিকায় প্রিক্লিনিক্যাল ইভ্যালুয়েশন পর্যায়ে মিশরের একটি প্রতিষ্ঠানের চারটি ভ্যাকসিন ক্যান্ডিডেটের নাম দেখা গেছে। প্রতিষ্ঠানটির নাম "National Research Centre, Egypt"। তাদের চারটি ক্যান্ডিডেটের ধরনের নাম হলো--
DNA plasmid vaccine S,S1,S2,RBD &N,
Inactivated whole virus,
Influenza A H1N1 vector,
Protein Subunit S,N,M&S1 protein
এগারো পৃষ্ঠার এই ডকুমেন্টের প্রতিটি পৃষ্ঠায় উপরে উল্লিখিত ডিসক্লেইমারটি ব্যবহার করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। অর্থাৎ, এই তালিকাভুক্ত কোনো ভ্যাকসিন ক্যান্ডিডেটকে কোনো ধরনের স্বীকৃতি দেয়নি সংস্থাটি। ফলে সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে 'বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার স্বীকৃতি' ধরনের তথ্য তুলে ধরা ভুল ও বিভ্রান্তিকর।
এ বিষয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বাংলাদেশ অফিসে যোগাযোগ করা হলে সংস্থাটির একজন মুখপাত্র বলেন যে, এই তালিকা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পক্ষ থেকে কোনো ধরনের স্বীকৃতি বুঝায় না। বরং যাচাইবাছাইয়ের পর প্রস্তুতির পর্যায়ে থাকা বিভিন্ন পণ্যের বিষয়ে সংগৃহীত কিছু তথ্য এখানে দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে।