সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকের একাধিক আইডি, গ্রুপ ও পেজে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহম্মদ ইউনূসের ছবি সহ একটি ফটোকার্ড পোস্ট করে বলা হচ্ছে, রাষ্ট্রীয়ভাবে আগামী ১৬ সেপ্টেম্বর মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স.) এর জন্মদিন অর্থাৎ ইদ-ই-মিলাদুন্নবী পালন করা হবে। এরকম কয়েকটি পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে ও এখানে।
গত ৬ সেপ্টেম্বর 'Ashrafi Jahan' নামে একটি ফেসবুক একাউন্ট থেকে একটি ফটোকার্ড পোস্ট করে বলা হয়, "এটা মানি না আর মানবো না!!যেখানে জন্মদিন পালন করা ইসলামে জায়েজ না সেখানে কেনো আমাদের নবীজীর জন্মদিন পালন করা হবে..?? এটা করা ঠিক হবে না। আমাদের নবী কখনো জন্মদিন পালন করছে এমন প্রমানতো পাওয়া যায় নি🤔🤔🤔🤔😥😥😥"। পোস্টে যুক্ত ফটোকার্ডটিতে লেখা থাকতে দেখা যায়, "আসছে আগামী ১৬ই সেপ্টেম্বর প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ (স.) এর জন্মদিন। রাষ্ট্রীয়ভাবে পালন করা হবে দিনটি"। ফেসবুক পোস্টটির স্ক্রিনশট দেখুন--
অর্থাৎ দাবি করা হচ্ছে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ডক্টর মুহাম্মদ ইউনূস আগামী ১৬ সেপ্টেম্বর ইদ-ই-মিলাদুন্নবীকে রাষ্ট্রীয়ভাবে পালনের ঘোষণা দিয়েছেন।
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, আলোচ্য পোস্টের দাবিটি বিভ্রান্তিকর। সম্প্রতি মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স.) এর জন্মদিন অর্থাৎ ইদ-ই-মিলাদুন্নবী রাষ্ট্রীয়ভাবে পালন করার ঘোষণা দেননি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহম্মদ ইউনূস। তবে এরকম একটি খবর মন্ত্রীপরিষদ বিভাগের প্রজ্ঞাপনের বরাতে ২০২১ সালে প্রকাশিত হতে দেখা গেছে। অর্থাৎ এই সিদ্ধান্তটি পুরোনো। নতুন সরকার এ নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেনি।
সম্প্রতি মুহম্মদ ইউনূস ইদ-ই-মিলাদুন্নবীকে রাষ্ট্রীয়ভাবে পালনের ঘোষণা দিয়েছেন কি না জানতে কি-ওয়ার্ড সার্চ করে দৈনিক পত্রিকা ইনকিলাবের অনলাইন ভার্সনে ২০২১ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি "ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) রাষ্ট্রীয়ভাবে পালিত হবে- জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের অভিনন্দন" শিরোনামে একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, "রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দেয়া হয়েছে বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জন্ম ও ওফাত দিবস ১২ রবিউল আওয়ালকে। গত সোমবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবীর দিবসটিতে বাংলাদেশের সব সরকারি ও বেসরকারি ভবন ও অফিস প্রাঙ্গণে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। এছাড়া বিদেশি ক‚টনৈতিক মিশন ও দূতাবাসগুলোতে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। অবিলম্বে এ নির্দেশনা কার্যকর হবে বলেও প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে।"। তবে, সম্প্রতি মুহম্মদ ইউনূসের পক্ষ থেকে এরকম কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। স্ক্রিনশট দেখুন--
পরবর্তীতে বিভিন্ন কি-ওয়ার্ড ধরে সার্চ করেও প্রধান উপদেষ্টা মুহম্মদ ইউনূসের পক্ষ থেকে কিংবা নতুন সরকারের পক্ষ থেকে আগামী ১৬ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রীয়ভাবে ইদ-ই-মিলাদুন্নবী হিসেবে পালনের নতুন করে ঘোষণা দেওয়ার কোনো সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়নি।
অর্থাৎ রাষ্ট্রীয়ভাবে ইদ-ই-মিলাদুন্নবী পালনের খবরটি পুরোনো।
সুতরাং ২০২১ সালের পুরোনো সংবাদ প্রচার করে মুহম্মদ ইউনূসের নতুন সরকারের পক্ষ থেকে আগামী ১৬ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রীয়ভাবে নবীজীর জন্মদিন পালনের ঘোষণার খবর প্রচার করা হচ্ছে, যা বিভ্রান্তিকর।