সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকের একাধিক পেজ ও আইডি থেকে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের ডাইভারসিটি ভিসা (ডিভি) প্রোগ্রামে বাংলাদেশিদের অংশগ্রহণের বিজ্ঞাপন সম্বলিত পোস্ট শেয়ার করা হচ্ছে। পোস্টগুলোর নিচে আবেদনের লিংকও যুক্ত করে দেয়া হয়েছে। এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে।
গত ৩ নভেম্বর 'Directorate Of Primary Education' নামের একটি ফেসবুক আইডি থেকে একটি আবেদন ফর্মের ছবি পোস্ট করে লেখা হয়, "আমেরিকান ডিভি লটারি ২০২৪ ❐ বাংলাদেশ থেকে (১৮--৪০) বয়স হলে ছবি, NID নাম্বার দিয়ে মোবাইল থেকে আবেদন করুন। আবেদনের লিঙ্ক ১ম কমেন্টে"। স্ক্রিনশট দেখুন--
কমেন্টের লিংকে প্রবেশ করে দেখা যায় সেখানে ডিভি প্রোগ্রামের আবেদন সংক্রান্ত কিছু তথ্য দেয়া হয়েছে এবং একটি লিংক যুক্ত করা হয়েছে যাতে প্রবেশ করলে ভিন্ন একটি ঝুঁকিপূর্ণ ওয়েবসাইটে রি-ডিরেক্ট করছে। স্ক্রিনশট দেখুন--
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, বাংলাদেশিদের জন্য ডিভি প্রোগ্রামের ভিসা চালুর দাবিটি সঠিক নয় বরং প্রতারণাপূর্ণ।
ডেটা ট্র্যাকিং টুল ক্রাউডট্যাঙ্গলে সার্চ করে দেখা যায়, কেবল 'Directorate Of Primary Education' নামের পেজটি থেকেই বিগত কয়েক বছরে অন্তত ৬০ বার একই দাবি করে ডিভি প্রোগ্রামে আবেদনের ভুয়া লিংক শেয়ার করা হয়েছে।
আবার, আলোচ্য পেজটির নাম ও দেখতে হুবহু প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর-এর ফেসবুক পেজের মত হলেও এটিও আসলে ভুয়া পেজ। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মূল পেজ (বামে) এবং একই নামে তৈরি ভুয়া পেজটির তুলনা দেখুন--
বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের ডাইভারসিটি ভিসা (ডিভি) প্রোগ্রাম বন্ধ
কিওয়ার্ড ধরে সার্চ করার পর, বাংলাদেশে অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের ওয়েবসাইটে 'Diversity Visa – Beware of Diversity Immigrant Visa Scammers! As of 2012, Bangladesh Is No Longer Eligible to Participate in the Diversity Visa Program.' শিরোনামে একটি বিজ্ঞপ্তি খুঁজে পাওয়া যায়। বিজ্ঞপ্তি থেকে জানা যায়, ২০১২ সাল থেকে দেশটিতে বাংলাদেশিদের জন্য ডিভি লটারির মাধ্যমে ভিসা প্রাপ্তির সুযোগ বন্ধ রয়েছে। প্রতারণা থেকেও সাবধান করা হয় সেখানে।
২০১৪ সালের ৮ ডিসেম্বর দৈনিক প্রথম আলোর অনলাইন সংস্করণে "বাংলাদেশিদের জন্য আর ডিভি লটারি নয়" শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনেও একই তথ্য পাওয়া যায়।
পুনরায় সার্চ করার পর, মূলধারার সংবাদমাধ্যম বনিক বার্তার অনলাইন সংস্করণে "প্রতারণা নিয়ে সতর্ক করে মার্কিন দূতাবাসের মামলা" শিরোনামে একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়, যা চলতি বছর ৩০ এপ্রিল প্রকাশিত হয়েছে। প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, ডিভি অনুরূপ ভিসা প্রদানের নামে প্রতারণার জন্য ইউএসএ ট্যুর ফেয়ার নামের একটি ভিসা পরামর্শক প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে সতর্ক করে মামলা করেছিল ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাস। প্রতিবেদনে মার্কিন দূতাবাসের বরাতে লেখা হয় "বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের ডাইভারসিটি ভিসা (ডিভি) প্রোগ্রাম বন্ধ রয়েছে ২০১২ সাল থেকে। ওই লটারিতে অংশ নিতে কারো কাছ থেকে অর্থও নেয়া হয় না। তাছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা দিয়ে থাকে মার্কিন সরকার। বাইরের কোনো প্রতিষ্ঠান এ ভিসার নিশ্চয়তা কোনোভাবেই দিতে পারে না।" দেখুন প্রতিবেদনটির স্ক্রিনশট--
আবার আলোচ্য ফেসবুক পোস্টে যে আবেদন পত্রের যে ছবিটি যুক্ত করা হয়েছে সেটি বাংলাদেশের মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট আবেদন ফরমের। ডিভি প্রোগ্রামের নয়।
অর্থাৎ বাংলাদেশিদের জন্য ডিভি লটারির মাধ্যমে ভিসা প্রাপ্তির সুযোগ এখন আর নেই। ফলে ফেসবুক পোস্টগুলোতে করা আবেদনের বিজ্ঞপ্তিটি প্রতারণাপূর্ণ।
সুতরাং, ডিভি লটারির মাধ্যমে বাংলাদেশিদের ভিসা আবেদনের প্রতারণাপূর্ণ বিজ্ঞাপন প্রচার করা হচ্ছে একাধিক ফেসবুক পোস্টে।