"জ্বর হলেই করোনাভাইরাসের পরীক্ষা না-করার পরামর্শ দিয়েছেন ভারতের বিশিষ্ট হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. দেবী শেঠী। তার মতে, অতিরিক্ত পরীক্ষা ভবিষ্যতে বিপদ বাড়াবে।"-- এমন একটি খবর সম্প্রতি বাংলাদেশে মূলধারার সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।
১৯ মার্চ টাইমস অব ইন্ডিয়ার বরাতে খবরটি প্রকাশ করে সময়টিভির অনলাইনে শিরোনাম দেয়া হয়েছে, "করোনায় দেবী শেঠির জরুরি পরামর্শ"।
সময়টিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে--
"প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত এখন পুরো বিশ্ব। নানাভাবে এ ভাইরাসটি শরীরে ছড়িয়ে পড়ে ফলে অজান্তেই আক্রান্ত হচ্ছেন যে কেউ। এমন পরিস্থিতিতে করোনা ভাইরাস নিয়ে জরুরি কিছু পরামর্শ দিয়েছেন উপমহাদেশের বিখ্যাত হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ দেবী শেঠি।
টাইমস অব ইন্ডিয়া বলছে, করোনা ভাইরাস নিয়ে বিশ্বজুড়ে চলমান আতঙ্কের মাঝে ভাইরাল হয়েছে ভারতীয় এ চিকিৎসকের একটি অডিও ক্লিপ। এতে অত্যধিক করোনা পরীক্ষা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দেবী শেঠি বলেছেন, এ বার্তাটি শুধু ভারতের জন্য। এখানে সমস্যাটা অন্যরকমের। আমাদের দেশের জনসংখ্যা ১৩০ কোটি। পরীক্ষা-কিট রয়েছে দেড় লাখেরও কম।"
এনটিভি অনলাইনে একই খবরের শিরোনাম করা হয়েছে, "করোনার লক্ষণ শনাক্তকরণ নিয়ে দেবী শেঠি যা বললেন"।
প্রতিবেদনের শুরুতে বলা হয়েছে--
"নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত সন্দেহ হলেই কি স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো জরুরি? এ বিষয়ে ভারতের হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. দেবী শেঠি এক অডিও বার্তায় দিয়েছেন কয়েকটি পরামর্শ। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া এ খবর জানিয়েছে।"
এনটিভির প্রতিবেদন থেকে আরও একটি প্যারা তুলে দেয়া হলো--
"অডিও বার্তায় ডা. শেঠি বলেন, 'যদি কারো ফ্লু বা সর্দি থাকে, প্রথমে নিজেকে আইসোলেট (অন্যের সংস্পর্শ থেকে সরানো) করে লক্ষণ ভালো করে পর্যবেক্ষণ করতে হবে। প্রথম দিন শুধু ক্লান্ত লাগবে। তৃতীয় দিন হালকা জ্বর অনুভূত হবে। সেইসঙ্গে কাশি ও গলায় সমস্যা হবে। পঞ্চম দিন পর্যন্ত মাথাব্যথা থাকবে। পেটের সমস্যাও হতে পারে। ষষ্ঠ বা সপ্তম দিনে শরীরে ব্যথা বাড়বে এবং মাথাব্যথা কমতে থাকবে। তবে ডায়রিয়ার লক্ষণ দেখা দিতে পারে। পেটের সমস্যা থেকে যাবে। এবার খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। অষ্টম ও নবম দিনে সব লক্ষণই চলে যাবে। তবে এ সময় সর্দির প্রভাব বাড়তে থাকে। (এমন যদি হয়) এর অর্থ, আপনার প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়েছে এবং আপনার করোনা নিয়ে শঙ্কায় ভুগতে হবে না।'
দেবী শেঠির কথিত অডিও বার্তা নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশি আরও যেসব সংবাদমাধ্যম:
বাংলাদেশ প্রতিদিন: http://archive.is/hYmJB
বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড: http://archive.is/Vs1mk
জাগোনিউজ: http://archive.is/haTQ4
ঢাকা টাইমস: http://archive.is/lEgYc
বাংলানিউজ: http://archive.is/7MWKP
একুশেটিভি অনলাইন: http://archive.is/VBu9X
যুগান্তর: http://archive.is/aUVMU
ফ্যাক্ট চেক:
টাইমস ইন্ডিয়া এমন কোনো প্রতিবেদন প্রকাশ করেনি যেমনটা সময়টিভির প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে। অর্থাৎ, যে অডিও ক্লিপকে "দেবী শেঠির পরামর্শ" বলে দাবি করে সময়টিভি সহ বাংলাদেশের অন্যান্য সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশ করা হয়েছে সেই অডিও ক্লিপের বক্তব্যকে "দেবী শেঠির বক্তব্য" হিসেবে তুলে ধরেনি টাইমস অব ইন্ডিয়া।
বরং ভারতের একই অডিও ভাইরাল হওয়ার প্রেক্ষিতে বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমগুলোতে এই খবর প্রকাশিত হওয়ার দিনই (১৯ মার্চ) টাইমস অব ইন্ডিয়া ফ্যাক্ট চেকিং প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ওই অডিও ক্লিপের ওপর; এবং জানিয়েছে ক্লিপটি দেবী শেঠির নয়।
অবশ্য টাইমস গ্রুপের বাংলা ভাষার ওয়েবসাইট "এই সময়" অডিওটিকে দেবী শেঠির দাবি করে সংবাদ প্রকাশ করেছিলো। যদিও পরে প্রতিবেদনটি সরিয়ে নেয়া হয়েছে।
বাংলাদেশি সংবাদমাধ্যমগুলোর মধ্যে কোনো কোনোটিতে "এই সময়" এর বরাত দেয়া হয়েছে। "এই সময়" এর শিরোনামের সাথে বাংলাদেশের একাধিক সংবাদমাধ্যমের শিরোনাম মিলে যায়।
টাইমস অব ইন্ডিয়ার ফ্যাক্ট চেকিং প্রতিবেদনে জানানো হয়. দেবী শেঠির মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান নারায়ণা হেলথের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা নিশ্চিত করেছে দেবী শেঠি এমন কিছু বলেননি; অডিওর কণ্ঠটিও তার নয়।
বুম-ও এ নিয়ে ফ্যাক্ট চেকিং প্রতিবেদন প্রকাশ করে জানায়, অডিওটিতে সাথে অসত্যভাবে দেবী শেঠির নাম যুক্ত করা হয়েছে।
নারায়ণা হেলথ এর ভেরিফায়েড ফেসবুক পেইজ থেকেও অডিওটির সাথে দেবী শেঠির কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই বলে জানানো হয়।
অডিওটি অন্য চিকিৎসকের:
বুম-এর অনুসন্ধানে জানা গেছে অডিও ক্লিপটি চেন্নাইয়ের সন্তোষ জেকব নামে একজন চিকিৎসকের। তিনি চেন্নাইয়ের 'বি ওয়েল হসপিটাল'-এর অর্থোপেডিক ও স্পোর্টস ইনজুরি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের প্রধান।
বুম ডা. জেকবের সঙ্গে যোগাযোগ করে। তিনি জানান যে, উনিই রেকর্ডিংটি করেছিলেন। সেই সঙ্গে বলেন, অডিও ক্লিপটি ভাইরাল হওয়ায় উনি বিস্মিত হয়েছেন।
"মেসেজটি নিজস্ব একটি রোটারি গ্রুপে পাঠানো হয়েছিল। কারণ, একজন সদস্য কোভিড-১৯-এর সংক্রমণ দেখে খুবই চিন্তিত হয়ে পড়েছিলেন। সচেতনতা বাড়াতে এবং ডাক্তারের সঙ্গে কখন যোগাযোগ করতে হবে, সে কথা জানাতেই মেসেজটি দেওয়া হয়েছিল," বলেন ডঃ জেকব।
জেকব জানান, উনি রোটারি ক্লাব অফ ইন্ডিয়ার সদস্য। আর মেসেজটির মানে এই ছিল না যে, হাসপাতালে যাওয়া ঠিক নয়। "আমি এক বন্ধুকে বোঝাতে চেয়েছিলাম যে, যাঁরা উপসর্গগুলি চেনেন, সেগুলির গতিপ্রকৃতি নজরে রাখতে হবে তাঁদের। যদি দেখা যায়, সেগুলি সাধারণ ফ্লুর উপসর্গের চেয়েও বেশি কিছু, তাহলেই ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে," বলেন ডঃ জেকব।
টাইমস অব ইন্ডিয়াকেও ডা. জেকব একই কথা বলেছেন।