সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকের একাধিক আইডি ও পেজ থেকে একটি কোলাজ ছবি পোস্ট করে দাবি করা হচ্ছে, সন্তান প্রসব সংক্রান্ত একটি অপারেশন থিয়েটারে দীর্ঘ ৭ ঘন্টা যাবৎ চেষ্টা করে চিকিৎসকেরা দেখেছেন, মা ও শিশু উভয়কে বাঁচানো সম্ভব নয়। পরে চিকিৎসকেরা মায়ের সিদ্ধান্ত জানতে চাইলে, সন্তানের জীবন বাঁচিয়ে মা নিজে মৃত্যুকে বেছে নিলেন। সদ্যজাত নবজাতককে তার মৃত মায়ের হাতের উপরে এভাবে দেখে তার পাশেই ডাক্তার কাঁদছেন। একটি ছবিতে মা ও নবজাতক এবং অন্য ছবিতে ক্রন্দনরত এক ব্যক্তিকে দেখা যাচ্ছে। এমন কয়েকটি পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে।
গত ২৭ জানুয়ারি 'শাফির আহমদ শাকির' নামের একটি ফেসবুক আইডি থেকে "মা যার তুলনা হয়না!!" শিরোনামে দুটি ছবির কোলাজ সহ এমন একটি হৃদয়স্পর্শী গল্প পোস্ট করা হয়। বিস্তারিত দেখুন স্ক্রিনশটে--
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, ক্যাপশনে লেখা গল্পটি মনগড়া। মূলত ভাইরাল পোস্টে কোলাজ ছবি দুটি ভিন্ন ঘটনার এবং পাশের মাস্ক পরিহিত ক্রন্দনরত ব্যক্তিটিও চিকিৎসক নয়।
রিভার ইমেজ সার্চের মাধ্যমে, Merve Tiritoğlu Şengünler Photography নামের একটি ফেসবুক পেজে 'En güzel kavuşma' শিরোনামে তুর্কি ভাষায় প্রকাশিত একটি পোস্টে ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়, যা ২০১৫ সালের ১৪ ডিসেম্বর আপলোড করা হয়েছে। তবে এই ছবির নারী মারা গেছেন কিনা এমন কোন তথ্য ছবিটির সাথে দেয়া হয়নি। পেজের বিবরণ থেকে জানা যায়, 'Merve Tiritoğlu Şengünler Photography' মুলত একজন আলোকচিত্রীর ফেসবুক পেজ, সেখানে নবজাতকের ছবি সহ আরও নানান ধরনের ছবি প্রকাশিত হয়। দেখুন--
ক্রন্দনরত ব্যক্তির ছবি
ভাইরাল পোস্টে ডাক্তার দাবি করা ব্যক্তির ছবিটি রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে, আন্তর্জাতিক ফ্যাক্ট চেকিং সংস্থা স্নোপ্সের একটি ফ্যাক্ট চেক প্রতিবেদনে ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, এর আগেও ছবিটি আলোচ্য ভাইরাল পোস্টের অনুরূপ ধরণের বিভ্রান্তিকর দাবিতে সামাজিক মাধ্যমে প্রচার হয়েছিল।
ফ্যাক্ট চেক প্রতিবেদনের সূত্র ধরে 'ozgemetinphotography' নামের একটি ইন্সটাগ্রাম অ্যাকাউন্টের পোস্টে মূল ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়, যা ২০১৭ সালের ৫ সেপ্টেম্বরে আপলোড করা হয়েছে। ইন্সটাগ্রামের ঐ পোস্টটির কমেন্ট সেকশনে 'ozgemetinphotography' এর একাউন্টের ব্যবহারকারী একজনের মন্তব্যের জবাবে জানান, ছবিটি তারই তোলা এবং ছবির ক্রন্দনরত অবস্থার লোকটি একজন বাবা, তার সন্তান সুস্থভাবে জন্মগ্রহণ করেছে। তার স্ত্রীর মৃত্যু হয়নি এবং সেজন্য কাঁদেননি। ছবির ব্যক্তিটি চিকিৎসক দাবি করে ছড়িয়ে পরা গল্পটি মিথ্যা বলে জানান তিনি। স্ক্রিনশট দেখুন--
অর্থাৎ ভাইরাল পোস্টে সংযুক্ত কোলাজ ছবিটি দুটি ভিন্ন ঘটনার।
সুতরাং ভিন্ন ঘটনার দুটি ছবি যুক্ত করে মনগড়া গল্প সহ সামাজিক মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে, যা বিভ্রান্তিকর।