সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকের একাধিক আইডি থেকে একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে কারাদণ্ডপ্রাপ্ত সাবেক জামায়াত নেতা মাওলানা দেলাওয়ার হোসেন সাঈদীর একটি ছবি পোস্ট করে তিনি অসুস্থ বলে দাবি করা হচ্ছে। এরকম কয়েকটি পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে ও এখানে।
গত ২৫ জানুয়ারি 'jannatul Sumaiya Heme' নামে একটি ফেসবুক গ্রুপে 'Imran vlogs' নামে একটি আইডি থেকে একটি ছবি পোস্ট করে বলা হয়, "❝সাঈদী হুজুর ❞ জেলখানায় ভীষণ অসুস্থ 😭 ওনার জন্য ❝আমিন❞ না বলে যাবেন না😭 🤲🤲আল্লাহ কুরআনের পাখিকে মুক্ত করে দাও। আমিন। 🤲"। ফেসবুক পোস্টটি দেখুন--
অর্থ্যাৎ ছবিটি দেলাওয়ার হোসেন সাঈদীর সম্প্রতি অসুস্থ হওয়ার সময়ে তোলা বলে ফেসবুক পোস্টটিতে উপস্থাপন করা হচ্ছে।
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, আলোচ্য পোস্টের ছবিটি সাম্প্রতিক নয়। ছবিটি ২০১২ সাল থেকে অনলাইনে খুঁজে পাওয়া যায় এবং ছবিটি সেই সময়ে সাঈদীর অসুস্থতাকালে তোলা।
ছবিটির রিভার্স ইমেজ সার্চ করে প্রায় ১০ বছরের পুরনো একটি ফেসবুক পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়। 'ভালবাসি দেশকে' নামে একটি ফেসবুক প্রোফাইল থেকে ২০১২ সালের ১৫ জুন ছবিটি পোস্ট করে লেখা হয়, "পরিবারের পক্ষ থেকে দেশবাসীর কাছে দোয়া কামনা। ...মাওলানা সাঈদী সিসিইউতে গভীর পর্যবেক্ষণে।
বিশ্ব বরেণ্য আলেমে দ্বীন, জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে রাজধানীর বারডেম হাসপাতালে সিসিইউতে গভীর পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। বড় ছেলে মাওলানা রাফীক বিন সাঈদীর জানাজায় অংশ নেওয়ার জন্য প্যারোলে মুক্তি পেয়ে মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী কারাগারে যাওয়ার পথেই অসুস্থ হয়ে পড়েন। কারাগারে নেয়ার পর তাকে বারডেম হাসপাতালে নেয়া হয়েছে।
রাজধানীর মতিঝিল সরকারী বালক উচ্চ বিদ্যালয় ময়দানে নামাজে জানাযা শেষে সন্ধ্যা ৭টা ৩ মিনিটে তাকে নিয়ে আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী কারাগারের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয়। এ সময় গাড়ী বহরের সাথে হাজার হাজার জনতা কারাগারের গেট পর্যত্ম পৌছে দেয়। কারাগারে পৌছার পরপরই মাওলানা সাঈদীর বুকে ব্যথা অনুভুত হয়। কারা কর্তৃপক্ষ দ্রতে তাকে বারডেম হাসপাতালে নিয়ে আসে।
মাওলানা সাঈদীর ছোট ছেলে মাসুদ সাঈদী রাত ১২ টা ১৫ মিনিটে দৈনিক সংগ্রামকে জানান, আববুকে সিসিইউতে গভীর পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। এখন তিনি ঘুমুচ্ছেন। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তার ‘মাইল্ড এ্যাটাক' হয়েছে। তবে তিনি আশংকা মুক্ত। মাসুদ সাঈদী পরিবারের পক্ষ থেকে তার পিতার জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন।"। ফেসবুক পোস্টটি দেখুন--
উক্ত পোস্টের সূত্র ধরে দৈনিক সংগ্রামের ওয়েবসাইটে গিয়ে ২০১২ সালের ১৫ জুন 'মাওলানা সাঈদী সিসিইউতে গভীর পর্যবেক্ষণে' শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। ওই প্রতিবেদন থেকেও জানা যায় একই তথ্য। স্ক্রিনশট দেখুন--
একই দিনে অনলাইনভিত্তিক গণমাধ্যম বাংলানিউজ টোয়েন্টিফোরের প্রতিবেদন দেখুন--
আবার, ছবিটি লক্ষ্য করলে দেখা যায়, ছবিতে সাঈদীর পাশে দাঁড়িয়ে থাকা এক ব্যক্তির ইউনিফর্মে ইব্রাহীম কার্ডিয়াক হাসপাতালের লোগো বসানো থাকতে দেখা যায়। এ থেকে ধারণা করা যায়, ওই সময়ে হার্ট এটাকের কারণে ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতালেও ভর্তি করা হতে পারে তাকে। এব্যাপারে জানতে সার্চ করে একটি ফেসবুক পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়। ওই ফেসবুক পোস্টে একটি মেডিকেল প্রেসক্রিপশন যুক্ত করা থাকতে দেখা যায়। পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, ২০১২ সালের ১৬ জুন ইস্যু করা ওই প্রেস্ক্রিপশনের রোগীর নামের স্থানে দেলাওয়ার হোসেন সাঈদীর নাম যুক্ত করা আছে। ফেসবুক পোস্টটি দেখুন--
অর্থ্যাৎ ২০১২ সালে মাওলানা দেলাওয়ার হোসেন সাঈদীর অসুস্থতাকালে আলোচ্য ছবিটি ধারণ করা হয়।
বুম বাংলাদেশ কেবল ছবিটি যাচাই করে দেখেছে। বর্তমানে মাওলানা সাঈদীর শারীরিক অবস্থা কেমন বা সত্যিই তিনি অসুস্থ আছেন কিনা সে বিষয়ে কোনো খোঁজ নেয়া হয়নি।
সুতরাং অন্তত ১০ বছরের বেশি পুরোনো একটি ছবি নতুন করে প্রচার করে মাওলানা দেলাওয়ার হোসেন সাঈদী অসুস্থ বলে দাবি করা হচ্ছে, যা বিভ্রান্তিকর।