সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকের একাধিক আইডি, পেজ ও গ্রুপে একটি গ্রাফিক্স পোস্টার শেয়ার করে বলা হচ্ছে, চীনকে বয়কট করার স্লোগন লেখা পোশাকও চীন উৎপাদন করছে, ফলে ভারতের "Boycott China" আন্দোলনের কারণে বানিজ্যিকভাবে চীনই লাভবান হচ্ছে। এরকম কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে ও এখানে।
গত ৩ জুলাই 'Madarganj Helpline' নামের একটি পাবলিক গ্রুপে একটি ছবি শেয়ার করে লেখা হয়, '"Boycott China" লেখা পোশাক উৎপাদনকারী চীন নিজেই। 'বয়কট চিন' স্লোগান দেওয়া টি-শার্ট, টুপির এখন দারুণ চাহিদা ভারতে। চীনেই এই টি-শার্ট এবং টুপিগুলি তৈরি করা হচ্ছে। চীনের তৈরি টুপি টিশার্ট পরেই ভারতীয়রা চীনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। অর্থাৎ, সেই প্রতিবাদের মাধ্যমে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছে চীনই৷ আর এটাই হলো চিনের বিজনেস পলিসি।' পোস্টটির স্ক্রিনশট দেখুন--
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, পোস্টের বর্ণনায় করা দাবিটি সঠিক নয়। চীনের গণমাধ্যমের সুত্রে জানা গেছে, দেশ বিরোধী কোন স্লোগান লিখা পণ্য উৎপাদন করা চীনে কঠোর শাস্তিযোগ্য অপরাধ, তাই "BOYCOTT CHINA" স্লোগান লিখা টি-শার্ট কিংবা টুপি চীনে তৈরি হওয়ার কোন সুযোগ নেই। মূলত, এ সংক্রান্ত একটি ব্যঙ্গাত্মক প্রতিবেদন থেকে ভুয়া খবরটি ছড়িয়ে পড়ে।
thescoopbeats.com নামের ব্যতিক্রমধর্মী একটি অনলাইন গণমাধ্যমে 'China is manufacturing boycott China caps and t-shirts due to High demand in India?' শিরোনামে ২০২০ সালের ২৩ জুন প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। ওই প্রতিবেদনে চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম গ্লোবাল টাইমসের বরাত দিয়ে বলা হয়, ভারতীয়রা চীন থেকে প্রথমে ওই পোশাকগুলো আমদানি করেছে এবং পরে ওই পোশাকে 'BOYCOTT CHINA' লিখে প্রিন্ট করেছে। স্ক্রিনশট দেখুন--
এই প্রতিবেদনের সুত্র ধরে কি-ওয়ার্ড সার্চ করে চীনের রাষ্ট্রীয় পত্রিকা 'Global Times'-এ ''Boycott China' T-shirts and caps in India were not made in China: insiders' শিরোনামে ২০২০ সালের ২২ জুন প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, In fact, Chinese laws and regulations prohibit the export of products brandished with anti-China content and graphics, a government source told the Global Times on Monday, adding it should be "common sense" to manufacturers and exporters that such activity is punishable. অর্থাৎ চীনের সরকারি সুত্র গ্লোবাল টাইমসকে জানায়, চীনে দেশবিরোধী কোনো গ্রাফিক্স বা লেখা দিয়ে কোনো পণ্য তৈরি করা আইনত নিষিদ্ধ। তাই, উৎপাদক ও তৈরিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো খুব স্বাভাবিকভাবেই জানে যে এটা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। প্রতিবেদনটির স্ক্রিনশট দেখুন--
গ্লোবাল টাইমসের ওই প্রতিবেদন থেকে আরো জানা যায়, চীনের রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান 'Insiders' জানিয়েছে যে, চীন নয়, ভারতেরই কোনো প্রতিষ্ঠান ওই পোশাকগুলোতে চীনবিরোধী স্লোগান প্রিন্ট করে লাগিয়েছে।
এদিকে, 'news18.com' নামের একটি সংবাদমাধ্যমে 'How a Satire Article on China Selling #BoycottChina Merchandise to Indians Became 'Viral' News' শিরোনামে ২০২০ সালের ২৩ জুন প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। যেখানে সুপরিচিত প্রহসনমূলক (স্যাটায়ার) ওয়েবসাইট thefauxy.com এর কথা উল্লেখ করে বলা হয়েছে, উক্ত ওয়েবসাইটের একটি ব্যঙ্গাত্মক প্রতিবেদন'কে ভুল করে সত্য হিসেবে ধরে নেয়ার ফলে বিভ্রান্তিকর এই খবরটি ছড়িয়ে পড়ে। স্ক্রিনশট দেখুন--
অর্থ্যাৎ ভারতে 'BOYCOTT CHINA' স্লোগান লেখা পোশাকগুলো চীনে তৈরি নয়। তবে, এই ব্যাপারে একটি স্যাটায়ার ওয়েবসাইটে প্রকাশিত একটি ব্যঙ্গাত্মক গল্পকে সত্য হিসেবে ধরে নেয়ায় সামাজিক মাধ্যমে বিভ্রান্তিকর খবরটি ছড়িয়ে পড়ে।
সুতরাং চীনকে বয়কট করার স্লোগান লেখা পোশাক তৈরি করে রপ্তানি করছে, ফলে ভারতের 'বয়কট চায়না' আন্দোলনে বানিজ্যিকভাবে চীনই লাভবান হচ্ছে বলে যে দাবি করা হচ্ছে, তা বিভ্রান্তিকর।