সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকের একাধিক আইডি, পেজ ও গ্রুপে 'শিশুবক্তা' হিসেবে পরিচিত রফিকুল ইসলামের একটি ভিডিও শেয়ার করে বলা হচ্ছে, এইমাত্র লাইভে এসে বক্তব্য দিলেন রফিকুল ইসলাম। এরকম দুটি পোস্ট দেখুন এখানে ও এখানে।
গত ২৪ জুলাই 'কোরআন ও হাদিসের আলো (১)Quran O Hadisar Alo(1)' নামের একটি পাবলিক গ্রুপে 'Akhi Akter' নামের একটি আইডি থেকে একটি ভিডিও শেয়ার দিয়ে বলা হয়, ''এই মাত্র পাওয়া জেল থেকে ছাড়া পেয়ে লাইভে এসে যা বললেন শিশু বক্তা রফিকুল ইসলাম''। পোস্টটির স্ক্রিনশট দেখুন--
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, 'শিশুবক্তা' খ্যাত মাওলানা রফিকুল ইসলামের সম্প্রতি কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়া এবং লাইভে আসার দাবিটি সত্য নয়। ফেসবুকে প্রচারিত একটি লাইভ টক-শোতে উপস্থিত ব্যক্তিদের ভিডিওতে কারাগারে যাওয়ার পূর্বে রফিকুল ইসলামের একটি ভিডিও এডিট করে বসিয়ে আলোচ্য ভিডিওটির প্রথম ৬ সেকেন্ড তৈরি করা হয়েছে। ভিডিওটির পরবর্তী অংশটুকু ইউটিউবে হুবহু পাওয়া গেছে, যা অন্তত দুই বছর পুরোনো।
ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, প্রথম ৬ সেকেন্ডে 'শিশুবক্তা' রফিকুল ইসলামসহ মোট তিনজন ব্যক্তিকে ওই টক-শোতে উপস্থিত দেখানো হয়েছে। তবে, টকশোতে উপস্থিত সবার নাম উল্লেখ করা থাকলেও রফিকুল ইসলামের নিচে নামের স্থানে লেখা রয়েছে নিঝুম মজুমদার। ফলে স্বাভাবিকভাবেই ধারণা করা যাচ্ছে ভিডিওটি এডিটেড, নিঝুম মজুমদারের স্থানে এডিট করে রফিকুল ইসলামের বক্তব্য বসানো হয়েছে। দেখুন--
পরে কি-ওয়ার্ড সার্চ করে ফেসবুকে 'Face The People-ফেস দ্যা পিপল' নামে একটি ফেসবুক পেজে ''#পদ্মাসেতুর_নাট_বল্টু_নিয়ে_ষড়যন্ত্র_নাকি_ত্রুটি_?'' শিরোনামে একটি টক-শো খুঁজে পাওয়া যায়। ওই টক-শোর ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, ভিডিওটিতে মূল স্ক্রিনে রফিকুল ইসলামের সাথে অন্যান্য বক্তাদের চেহারা ও নামের মিল থাকলেও রফিকুল ইসলামের স্থানে অনলাইন এক্টিভিস্ট ব্যারিস্টার নিঝুম মজুমদারকে বক্তব্য দিতে দেখা যায়। এ থেকে বোঝা যায় ফেস দ্য পিপলের টক-শোতে নিঝুম মজুমদার এর স্থলে এডিট করে রফিকুল ইসলামের ভিডিওটি বসিয়ে আলোচ্য ভাইরাল ভিডিওটির প্রথম ৬ সেকেন্ড তৈরি করা হয়েছে। ফেস দ্য পিপলের টকশোটি দেখুন--
ভাইরাল পোস্টের বক্তব্যের উৎস খুঁজে বের করতে আরো সার্চ করে ইউটিউবে ২০২০ সালের ১৯ জুলাই ''Salehi Media'' নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে 'শেষ লাইভ শেষ ওয়াজ বক্তা রফিকুল ইসলাম মাদানীর ||লাইভে এসে ক্ষমা চাইলো দেখুন' শিরোনামে একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। ওই ভিডিওতে দেওয়া প্রথম ৬ মিনিটের বক্তব্য এবং ভাইরাল পোস্টে ওই বক্তার দেওয়া বক্তব্য হুবহু এক। ইউটিউব ভিডিওটি দেখুন--
অর্থ্যাৎ আলোচ্য ভিডিওতে দেয়া শিশুবক্তা রফিকুল ইসলামের বক্তব্যটি দুই বছর আগের এবং তিনি কারাগারে যাওয়ার পূর্বের।
এদিকে, নানাভাবে অনুসন্ধানের পরেও শিশুবক্তা রফিকুল ইসলামের সম্প্রতি কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার কোনো সংবাদ গণমাধ্যমে খুঁজে পাওয়া যায়নি। ফলে বিষয়টি স্পষ্ট যে, রফিকুল ইসলামের কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়া এবং লাইভে আসার দাবিটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।
সুতরাং শিশুবক্তা রফিকুল ইসলামের প্রায় দু'বছরের পুরোনো একটি ভিডিওকে এডিট করে বিভ্রান্তিকর শিরোনাম সহ 'এইমাত্র পাওয়া' বলে প্রচার করা হচ্ছে ফেসবুকে, যা ভিত্তিহীন।