সামাজিক মাধ্যিম ফেসবুকের একাধিক আইডি, পেজ ও গ্রুপে একটি ভিডিও শেয়ার করে বলা হচ্ছে, ভারতের মুসলিমদের উপরে নির্যাতন, অগ্নিসংযোগ এবং ভাঙচুরের সময়ে আলোচ্য ভিডিওটি ধারণ করা হয়েছে। এরকম কয়েকটি ফেসবুক পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এখানে, এখানে ও এখানে।
গত ৪ এপ্রিল 'Rakib Ahmed Rafid' নামে একটি ফেসবুক একাউন্ট থেকে যানবাহন ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের একটি ভিডিও পোস্ট করে বলা হয়, "ভারতের জঙ্গি গোষ্ঠীর, মুসলমানদের উপর নির্যাতনের চিত্র বিশ্বের কাছে তুলে ধরার জন্য অনুরোধ রইলো। অবশেষে পশ্চিমবঙ্গে হিন্দুত্ববাদী সন্ত্রাসী গুষ্ঠীগুলো মুসলিমদের লক্ষ করে তান্ডব শুরু করে দিয়েছে! 😡 বিজেপির দাবী পশ্চিমবঙ্গ বাংলাদেশ হয়ে যাচ্ছে, সুতরাং পশ্চিম বাঙলা থেকে মোল্লাদের তাড়াতে হবে! সেই লক্ষেই হিন্দুত্ববাদী জঙ্গীদের তান্ডব চলছে, আগুন দিচ্ছে মুসলমানদের বাড়ী,ঘর আর ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে। পথে পথে মুসলমানদেরকে ধরে ধরে মারধর করা হচ্ছে, নিরপরাধ মুসলিমদেরকে হত্যা করা হচ্ছে, মুসলমান মা-বোনদেরকে ধরে ধরে ধর্ষণ করা হচ্ছে, ধর্ষণের পর তাদেরকে নির্মমভাবে হত্যা করা হচ্ছে, বিশ্ব মুসলিম এক হয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।" ফেসবুক পোস্টটির স্ক্রিনশট দেখুন--
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, দাবিটি সঠিক নয়। ভিডিওটি ভারতের নয় বরং ২০২৩ সালে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)-র ডাকা অবরোধ চলাকালে যানবাহন ভাঙচুর ও আগুন লাগানোর সময়ে আলোচ্য ভিডিওটি ধারণ করা হয়।
ভিডিওটি সম্পর্কে জানতে ভিডিওটি থেকে কি-ফ্রেম কেটে নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে দৈনিক পত্রিকা প্রথম আলোর ইউটিউব চ্যানেলে ২০২৩ সালের ২৭ নভেম্বর "সিলেটে অবরোধের সমর্থনে মশালমিছিল ও যানবাহন ভাঙচুর | Sylhet" শিরোনামে একটি ভিডিও প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। ভিডিওটির সাথে আলোচ্য ভিডিওটির হুবহু মিল পাওয়া যায়। ভিডিওটি থেকে জানা যায়, ওইদিন সিলেট নগরীর সুবিদবাজার এলাকায় বিএনপির ডাকা অবরোধের সমর্থনে মশাল মিছিল এবং সেখান থেকে যানবাহন ভাঙচুর ও আগুন লাগানোর ঘটনা ঘটে। ওইসময়ে এম্বুলেন্স, সিএনজিচালিত অটোরিকশা এবং রিকশা ভাঙচুর করে তাতে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। ইউটিউব ভিডিওটি দেখুন--
পরবর্তীতে এর সূত্র ধরে কি-ওয়ার্ড সার্চ করে প্রথম আলোর অনলাইন ভার্সনে ২০২৩ সালের ২৬ নভেম্বর "সিলেটে অবরোধের সমর্থনে মশালমিছিল, যানবাহনে আগুন" শিরোনামে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, অবরোধের সমর্থনে সিলেটে মশালমিছিল করেছেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা। এ সময় কয়েকটি যানবাহন ভাঙচুর ও আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে। রোববার সন্ধ্যা সাতটার দিকে নগরের সুবিদবাজার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ওই এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। স্ক্রিনশট দেখুন--
এছাড়াও, সিলেট থেকে প্রকাশিত সিলেট মিরর নামে একটি অনলাইন পোর্টালেও ওই একই দিনে অর্থাৎ ২০২৩ সালের ২৬ নভেম্বর প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকেও একই তথ্য পাওয়া যায়।
অর্থাৎ আলোচ্য পোস্টের দাবিটি সঠিক নয়। আলোচ্য ভিডিওটি ভারতের মুসলিমদের উপরে নির্যাতনের নয়। ২০২৩ সালে সিলেটে বিএনপির অবরোধের সমর্থনে সংঘটিত মশালমিছিল ও অগ্নিসংযোগকালে আলোচ্য ভিডিওটি ধারণ করা হয়।
সুতরাং ভারতের মুসলিমদের উপরে নির্যাতনের ভিডিও দাবি করে বাংলাদেশের সিলেটের রাজনৈতিক কর্মসূচির পুরোনো ভিডিও প্রচার করা হচ্ছে ফেসবুকে যা বিভ্রান্তিকর।