সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকের একাধিক আইডি ও পেজ থেকে একটি ভিডিও পোস্ট করে দাবি করা হচ্ছে, রাজধানী ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে আগুন লেগে একটি বিমান পুড়ে ছাঁই হয়ে গেছে। ভিডিওতে একটি বিমানে আগুন জ্বলতে দেখা যায়। এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে।
গত ২ জানুয়ারি 'Alamin Islam Shawrof' নামের একটি ফেসবুক আইডি থেকে করা ভিডিওটি পোস্ট করে বলা হয়,"লঞ্চের পর এবার বিমানে আগুন, হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে আগুন লেগে ছাঁই হয়ে গেছে একটি বিমান !" স্ক্রিনশটে দেখুন--
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, পোস্টের বর্ণনায় করা দাবিটি সঠিক নয়। মূলত, ৩০ ডিসেম্বর (বৃহস্পতিবার) মধ্যরাতে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অগ্নিনির্বাপণ মহড়ার ভিডিওকে সত্য ঘটনা দাবি করে বিভ্রান্তিকরভাবে প্রচার করা হচ্ছে।
কিওয়ার্ড এবং রিভার্স ইমেজ সার্চ করে, মূলধারার গণমাধ্যম বাংলা ট্রিবিউন-এর "মধ্যরাতে আগুন নেভানোর মহড়া বিমানবন্দরে" শিরোনামে একটি খবরে আগুন জ্বলতে থাকা বিমানের একটি ছবি খুঁজে পাওয়া যায়, যা গত ৩১ ডিসেম্বর প্রকাশিত হয়েছে। খবরে বলা হয়, "বিমানবন্দরে যদি কোনও বিমানে আগুন লাগে, তখন কীভাবে, কে কী পদক্ষেপ নেবে; সেই মহড়া করা হয়েছে হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১টার দিকে এই মহড়া শুরু হয়। কোনও আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিমানে আগুন লাগলে কীভাবে তা মোকাবেলা করা হবে, সেজন্য প্রতি দুই বছর পর পর মহড়ার বিধান করেছে আন্তর্জাতিক সিভিল এভিয়েশন অথরিটি। বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক বিমাবন্দরগুলোতে নিয়মিত এ ধরনের মহড়া অনুষ্ঠিত হয়। মহড়ার জন্য একটি ডামি উড়োজাহাজ রাখা হয় বিমানবন্দরের রানওয়ের পাশেই। মহড়ার জন্য ডামি উড়োজাহাজে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।রাত ১টা ১৭ মিনিটে 'এবিসি এয়ারলাইন্সের' একটি উড়োজাহাজে আগুন লাগার খবর দেয় এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল টাওয়ার। চার মিনিট পর রাত ১টা ২১ মিনিটে বিমানবন্দরের ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি আসে আগুন নেভাতে। একইসঙ্গে বিমান বাহিনীর ফায়ার সার্ভিসের গাড়িও আসে। সেই সময় বিমান বাহিনীর একটি অস্ত্রধারী দল উড়োজাহাজটি ঘিরে রাখে। স্বাস্থ্য বিভাগের অ্যাম্বুলেন্স আহত যাত্রীদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। গুরুতর আহতদের দ্রুত হাসপাতালে নিতে ঘটনাস্থলে আসে বিমান বাহিনীর একটি হেলিকপ্টার। নিহত যাত্রীদের মরদেহ মর্গে নিয়ে যাওয়া হয়। রাত ১টা ৪৩ মিনিটে মহড়া শেষ হয়।" স্ক্রিনশট দেখুন--
এছাড়া, বেসরকারি সম্প্রচার মাধ্যম যমুনা টেলিভিশনের ইউটিউব চ্যানেলেও এই মহড়ার ভিডিওর প্রকাশিত হয়েছে।
অর্থাৎ হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কোন বিমানে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেনি, মূলত এটি একটি মহড়ার ভিডিও। আন্তর্জাতিক সিভিল এভিয়েশন অথরিটির নিয়মানুযায়ী, দুই বছর পর পর এই মহড়ার বিধান রয়েছে।
উল্লেখ্য, এর আগেও দেশের বিভিন্ন বিমান বন্দরে এ ধরনের মহড়ার সংবাদ গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। ২০২০ সালে সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এরকম একটি মহড়ার খবর দেখুন। স্ক্রিনশট--
সুতরাং সক্ষমতা যাচাইয়ের উদ্দেশ্যে বিমানবন্দরে অগ্নিনির্বাপণ মহড়ার ভিডিওকে সত্য ঘটনা দাবি করে প্রচার করা হচ্ছে ফেসবুকে, যা বিভ্রান্তিকর।