সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে সম্প্রতি একটি খবর শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে, ময়মনসিংহে ১৭ জন কোরআনে হাফেজা নৌকাডুবিতে মারা গেছেন। ফেসবুকের একাধিক আইডি ও পেজে খবরটির সাথে দুটি ছবিও যুক্ত করতে দেখা গেছে। যুক্ত করা ছবি দুটির একটিতে মুসল্লিদের জানাজার প্রস্তুতি নিতে এবং অন্য ছবিতে লোকজনকে পাশাপাশি বেশ কয়েকটি কবর খুঁড়তে দেখা যাচ্ছে। এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে, এবং এখানে।
গত ২২ সেপ্টেম্বর 'আঙ্গর মমিসিং (ময়মনসিংহের সংস্কৃতি ও আঞ্চলিক ভাষার গ্রুপ)' নামের ফেসবুক গ্রুপে 'Hridoy Ahmed' নামের একটি আইডি থেকে ছবি দুটি পোস্ট করে লেখা হয়েছে "📢একটি শোক সংবাদ 😢 ময়মনসিংহে ১৭জন বোন কোরআনের হাফেজা হয়েছেন হিফয্ শেষ করে সকলে নৌকা ভ্রমণের উদ্দেশ্য রওয়ানা দেন।ফেরার পথে তাদের নৌকা ডুবে ১৭জনেই মৃত্যু বরণ করেন, ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন 😥 😭আল্লাহ প্রিয় বোন গুলোকে জান্নাতের উচ্চ মাকাম দান করুন আমিন 🤲 😢 #হৃদয় ✍️ #ময়মনসিংহ"
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, পোস্ট করা দুটি ছবিই ২০২০ নেত্রকোনার মদন এলাকার গোবিন্দশ্রী রাজালীকান্দা হাওরে নৌকাডুবির ঘটনায় নিহতদের জানাজা ও দাফনের। পাশাপাশি ময়মনসিংহের স্থানীয় সাংবাদিকরা ১৭ হাফেজার মৃত্যুর খবরটি ভিত্তিহীন বলে বুম বাংলাদেশকে নিশ্চিত করেছেন।
ইমেজ রিভার্স সার্চিং টুল ব্যবহার করে, একাধিক উৎসে খবরটির সাথে যুক্ত ছবিগুলো খুঁজে পাওয়া গেছে। তন্মধ্যে মূলধারার গণমাধ্যম বাংলা ট্রিবিউনে ২০২০ সালের ০৬ আগস্ট "মদনে নৌকাডুবিতে নিহতদের দাফন সম্পন্ন" শিরোনামে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে আলোচ্য দুটি ছবিই খুঁজে পাওয়া গেছে। বাংলা ট্রিবিউনে-এর প্রতিবেদনে বলা হয়, "নেত্রকোনার মদনের গোবিন্দশ্রী রাজালীকান্দা হাওরে নৌকাডুবিতে নিহত ১৭ জনের দাফন সম্পন্ন হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৬ আগস্ট) সকাল ৬টায় ময়মনসিংহ সদরের কোনাপাড়া ঈদগাহ মাঠে জানাজা শেষে পাশের কবরস্থানে মাদরাসার মুহতামিম মাওলানা মাহফুজুর রহমানসহ ৯ জনকে দাফন করা হয়। বাকি ৮ জনকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।"
বাংলা ট্রিবিউনের প্রতিবেদনে সংযুক্ত ছবি এবং আলোচ্য ভাইরাল পোস্টের ছবির পাশাপাশি স্ক্রিনশট দেখুন--
এর আগের দিন অর্থাৎ গত বছরের ৫ আগস্ট নেত্রকোনায় হাওরে ঘুরতে এসে নৌকাডুবে ১৭ জন নিহত হওয়ার খবর দেশের মূলধারার গনমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। চ্যানেল আই অনলাইনে ২০২০ সালের ৫ আগস্ট "নেত্রকোনায় হাওড়ে নৌকাডুবে ১৭ জন নিহত" শিরোনামে প্রকাশিত খবরে নিহত ১৭ জনের মধ্যে লুবনা আক্তার (১০) ও জুলফা আক্তার (৭) নামে কিশোরী দুই বোনের নাম উল্লেখ করেছে। খবরটিতে মদন থানার ভারপাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রমিজুল হকের বরাতে বলা হয়, "মদন উপজেলার পর্যটনকেন্দ্র 'মিনি কক্সবাজার' খ্যাত উচিতপুর হাওরে নৌকাডুবিতে ১৭টি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। চারজন নিখোঁজ রয়েছেন।" ফলে বুম বাংলাদেশ ওই ঘটনায় মৃতের সর্বশেষ সংখ্যা যাচাই করে দেখেনি।
এদিকে ১৭ জন কোরআনের হাফেজার নৌকাডুবিতে মৃত্যু সংক্রান্ত ভাইরাল হওয়া খবরটির ব্যাপারে বুম বাংলাদেশের তরফ থেকে ময়মনসিংহের স্থানীয় সাংবাদিকদের সাথে যোগাযোগ করা হলে, সম্প্রচার মাধ্যম এনটিভি'র স্টাফ করেসপন্ডেন্ট ও ময়মনসিংহ সিটি প্রেস ক্লাব সভাপতি আইয়ুব আলী খবরটিকে 'ভিত্তিহীন' হিসেবে চিহ্নিত করেন। পাশাপাশি বিভিন্ন কি-ওয়ার্ড দিয়ে সার্চ করার পর মূলধারার বা স্থানীয় কোনো সংবাদ মাধ্যমেও এ সংক্রান্ত কোনো খবর খুঁজে পাওয়া যায়নি।
অর্থাৎ এক বছর পুরোনো ভিন্ন ঘটনার ছবি যুক্ত করে ময়মনসিংহে ১৭ জন কোরআনের হাফেজার নৌকাডুবিতে মৃত্যুর ভুয়া ও ভিত্তিহীন খবর ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।