বাংলাদেশের একাধিক মূলধারার সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত একটি খবরে বলা হচ্ছে, সম্প্রতি পিতার হাতে তৈরি গড়াই সেতু দেখতে এসেছেন দুই ব্রিটিশ নাগরিক। দেখুন এমন কিছু খবরের লিংক এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে।
গত ৯ মে দৈনিক ইনকিলাব পত্রিকায় স্টাফ রিপোর্টারের বরাতে একটি খবর প্রকাশিত হয়। 'বাবার হাতের স্মৃতি দেখতে গড়াই রেল ব্রিজে দুই ভাই' শিরোনামের খবরটিতে দাবি করা হয়, গত ২৮ মার্চ নাইজেল স্মলার ও তার ছোট ভাই অড্রিন স্মলার এবং ভিয়েতনামী বন্ধু হুয়াং লি বাংলাদেশে আসেন। স্থানীয় প্রেসক্লাবের সহযোগিতায় তারা গড়াই রেল ব্রিজে ভ্রমণ করেন।
দেখুন সেই প্রতিবেদনের স্ক্রিনশট-
এছাড়া একাধিক মূলধারার সংবাদমাধ্যম এই খবরটি প্রকাশ করলেও পরবর্তীতে সরিয়ে ফেলা হয়। দেখুন বাংলাদেশ প্রতিদিন এবং সময় টিভির দুটি খবরের আর্কাইভ লিংক যথাক্রমে এখানে ও এখানে।
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, ব্রিটিশ ভাতৃদ্বয়ের বাংলাদেশ ভ্রমণের ঘটনাটি পুরোনো। এই বিষয়ে সার্চ করে গড়াই সেতু দর্শন করতে নাইজেল স্মলার ও অড্রিন স্মলারের বাংলাদেশ ভ্রমণের সবচেয়ে পুরোনো পোস্টটি পাওয়া যায় ২০১১ সালে। 'সোহেল হাবিব' নামের একটি আইডি থেকে ৩১ মার্চ ২০১১ সালে উক্ত দুই ভাইয়ের সেই ছবিসহ একটি পোস্ট করা হয় যেখানে তাদের কুষ্টিয়ার কুমারখালিস্থ গড়াই সেতু ভ্রমণের বর্ণনা পাওয়া যায়।
আবেগে আপ্লুত, বাকরুদ্ধ স্মলার ভ্রাতৃদ্বয়
বৃটিশ থেকে এলেন গড়াই রেল ব্রীজ দেখতে
নস্টালজিয়ায় আক্রন্ত দুইজন মানুষ। আবেগে...
Posted by Sohel Habib on Wednesday, 30 March 2011
উল্লেখ্য, উক্ত আইডিতে সোহেল বিপ্লবের পরিচয় দেয়া আছে, তিনি ইত্তেফাক পত্রিকার স্থানীয় প্রতিনিধি এবং কুমারখালি প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক।
পোস্টটির আর্কাইভ দেখুন এখানে।
এছাড়া ২০১১ সালের এই ফেসবুক পোস্টটির সাথে ইনকিলাব পত্রিকার খবরের অজস্র তথ্যগত মিল পাওয়া যাচ্ছে। দেখুন-
এছাড়া ২০১৩ সালেও একই পোস্ট 'আমাদের কুষ্টিয়া।।(our Kushtia)' নামক পেইজ থেকে পাবলিশ করা হয়।
_________আবেগে আপ্লুত, বাকরুদ্ধ স্মলার ভ্রাতৃদ্বয় বৃটিশ থেকে এলেন গড়াই রেল ব্রীজ দেখতে ____________
নস্টালজিয়ায়...
Posted by আমাদের কুষ্টিয়া।।(our Kushtia) on Friday, 10 May 2013
পোস্টটি এখানে আর্কাইভ করা আছে।
তবে নাইজেল এবং অলড্রিন স্মলার প্রকৃতপক্ষে কোন সালে বাংলাদেশ সফরে এসেছিলেন তা এইসকল ফেসবুক পোস্ট থেকে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। ফলে তা নিশ্চিত করতে আমরা খবরের লিংকটি ইমেইলে পাঠিয়ে যোগাযোগ করি নাইজেল স্মলার এর সাথে। তিনি সেই ইমেইলের জবাবে বুম বাংলাদেশকে বলেন, তারা দুই ভাই ১০ বছর আগে ২০১১ সালে বাংলাদেশে এসেছিলেন এবং পত্রিকায় প্রকাশিত ছবিটি সেই ভ্রমণের।
এছাড়া তিনি প্রতিবেদনে উল্লেখিত একাধিক তথ্যকে বিভ্রান্তিকর হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। যেমন, ইনকিলাবের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নাইজেলদের পিতা "বৃটিশ নাগরিক অল্ডউইন ইস্ট বেঙ্গল রেলওয়ের প্রকৌশলীর চাকরি নিয়ে ভারতে আসেন ত্রিশের দশকে প্রথম দিকে। তার কর্মস্থল নির্ধারণ হয় কুষ্টিয়াতে।"। কিন্তু নাইজেল আমাদের জানান, তার পিতার জন্ম মাদ্রাজে এবং তার পূর্বপুরুষ সপ্তদশ শতক থেকে ভারত উপমহাদেশে ছিলেন। ফলে তার পিতা ত্রিশের দশকে ভারতে এসেছেন, তথ্যটি সত্য নয়। পাঠকের আরো নিশ্চিত হওয়ার স্বার্থে তিনি উক্ত ভ্রমণের বিস্তারিত তথ্য এবং কিছু ছবি আমাদের পাঠাবেন বলেও জানান।
অর্থাৎ ২০১১ সালের দুই ব্রিটিশ ব্যক্তির ভ্রমণকে সাম্প্রতিক ঘটনা দাবি করে বিভ্রান্তিকর খবর প্রকাশ করেছে একাধিক সংবাদমাধ্যম।