বিক্ষিপ্ত বিক্ষোভ ও গাড়ি ভাংচুরের একটি ভিডিও সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে লাইভ মুডে প্রচার করে দাবি করা হচ্ছে, সরকার ও চলমান কঠোর লকডাউনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিলের ভিডিও এটি। ভিডিওটির শুরুতে দেখা যায় কিছু গাড়ি জ্যামের কারণে সারি সারি দাঁড়িয়ে আছে, কয়েকজন যুবক একটি বাস ভাংচুর করছে এবং লোকজন দিকবিদিক ছোটাছুটি করছে। কিছুক্ষণ পর পুলিশের সাথে বিক্ষোভকারীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হচ্ছে, এক পর্যায়ে কিছু আন্দোলনকারীকে একটি ব্যানার হাতে দাঁড়িয়ে থাকতেও দেখা যায়। এমন একটি পোস্ট দেখুন এখানে।
গত ২৭ জুলাই Vp Nur নামের একটি ফেসবুক পেজ থেকে এমন একটি ভিডিও 'ভূয়া ভোট! ভূয়া সরকার! ভূয়া লকডাউনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল' শিরোনামে লাইভ মুডে প্রচার করা হয়। পোস্টটি ১০ ঘন্টায় ১ হাজার দু'শত বারের বেশি শেয়ার হয়েছে। দেখুন পোস্টটির স্ক্রিনশট--
প্রসঙ্গত, চলমান করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সারাদেশে সরকার ঘোষিত দ্বিতীয় পর্যায়ের কঠোর বিধিনিষেধ চলছে। এই পরিস্থিতিতে লাইভ মুডে এই ভিডিওটির প্রচার ও এর শিরোনাম থেকে বোঝা যাচ্ছে, লোকজন চলমান লকডাউনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করছে।
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, ভিডিওটি করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে চলমান কঠোর বিধি-নিষেধের সময়কার নয়। বরং এটি গত এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে সাধারণ লকডাউন ঘোষণার সময়ে, রমজানকে সামনে রেখে এক সপ্তাহ দিনে চার ঘন্টা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলা রাখার দাবিতে রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকার ব্যবসায়ীদের বিক্ষোভের ভিডিও। উল্লেখ্য, ৩ এপ্রিল ব্যবসায়ীরা এই দাবিতে বিক্ষোভ করলেও ৪ এবং ৫ এপ্রিল প্ল্যাকার্ড নিয়ে লকডাউন বিরোধী স্লোগানও দেন।
রিভার্স ইমেজ সার্চ করে ভিডিওটির হুবহু একাধিক ভার্সন একাধিক ইউটিউব চ্যানেলে খুঁজে পেয়েছে বুম বাংলাদেশ। 'ইয়েস টিভি' নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে 'রাজধানীতে লকডাউন বিরোধী আন্দোলন' শিরোনামে গত ৫ এপ্রিল আপলোড করা ভিডিও এবং আলোচ্য ভাইরাল ভিডিওটির স্ক্রিনশটের পাশাপাশি কোলাজ দেখুন--
উক্ত ইউটিউব চ্যানেলটির ভিডিওটি দেখুন এখানে। এছাড়া একই দিনে আপলোড করা আরেকটি ইউটিউব চ্যানেলে দেখুন একই ভিডিও। ভিডিওটির শুরুতেই দেখা যায় কিছু যুবক একটি বাস ভাংচুর করছে এবং পথচারীরা দিকবিদিক ছোটাছুটি করছেন।
এই সুত্র ধরে, কি-ওয়ার্ড সার্চ করে মুলধারার একাধিক গণমাধ্যমে রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকায় ব্যবসায়ীদের বিক্ষোভের খবর পাওয়া গেছে। গত ৩ এপ্রিল ব্যতিত পরবর্তী টানা দুই দিন অর্থাৎ ৪ ও ৫ এপ্রিলের বিক্ষোভে গাড়ি ভাংচুরের খবর প্রকাশিত হয়েছে। এরমধ্যে গত ৫ এপ্রিল ট্যাবলয়েড পত্রিকা দৈনিক মানবজমিনের অনলাইনে প্রকাশিত খবরের স্ক্রিনশট দেখুন--
খবরটিতে নিউমার্কেট এলাকার নুর ম্যানশন সহ কোন কোন মার্কেটের ব্যবসায়ীরা বিক্ষোভ করেছেন এর পাশপাশি গাড়ি ভাংচুরের কথাও উল্লেখ আছে। মানবজমিনের পুরো প্রতিবেদনটি দেখুন এখানে।
এদিকে ভয়েস অব আমেরিকা-ভোয়া বাংলা বিভাগের একটি ৪ তারিখ প্রকাশিত এ সংক্রান্ত একটি খবরের সাথে প্রকাশিত একটি ছবির মধ্যে থাকা কয়েকটি ব্যানারের মধ্যে একটির সাথে আলোচ্য ভিডিওটির ২ মিনিট ৫২ সেকেন্ডে দেখা যাওয়া অস্পষ্ট লেখার একটি ব্যানারের সাদৃশ্য পাওয়া গেছে। যাতে নিখুঁতভাবে খেয়াল করলে দেখা যায় ব্যানারের নিচে 'নুর ম্যানশন দোকান মালিক সমিতি' লেখা আছে। যদিও বাকী লেখাগুলো স্পষ্ট নয়। তবে পাশে নিচের ব্যানারের ম্যাকআপ ও শব্দ প্রয়োগের দিকে খেয়াল করলে বোঝা যাচ্ছে একই দাবি সম্বলিত ব্যানার দুটি। ভিডিওটিতে থাকা ব্যানারের সাথে ভোয়া বাংলার ছবির স্ক্রিনশটের তুলনামূলক কোলাজ দেখুন--
তদুপরি দৈনিক প্রথম আলো ও ঢাকা ট্রিবিউন সহ প্রায় সব গণমাধ্যমে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলা রাখার দাবিতে ৪ ও ৫ এপ্রিল রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে ব্যবসায়ীদের টানা বিক্ষোভের খবর প্রকাশিত হয়।
অর্থাৎ ভাইরাল ভিডিওটির তে যেমন দাবি ('ভুয়া ভোট', 'ভুয়া সরকার' কিংবা 'ভুয়া লকডাউন') করা হয়েছে, এটি এমন বিক্ষোভের নয়। এছাড়া, এটি চলামান কঠোর লকডাউন বা কঠোর বিধি-নিষেধের বিরুদ্ধেও কোন বিক্ষোভের ভিডিও নয়। ৪ এপ্রিল দৈনিক ইত্তেফাকের প্রতিবেদনে বিষয়টি আরো স্পষ্ট, দেখুন স্ক্রিনশট--
তবে ভিডিওটি ঠিক ৪ নাকি ৫ এপ্রিল ধারণ করা পৃথকভাবে তা যাচাই করে দেখেনি বুম বাংলাদেশ।
সুতরাং প্রায় চার মাস আগে ঢাকার নিউমার্কেট এলাকার ব্যবসায়ীদের একটি বিক্ষোভের ভিডিওকে চলমান কঠোর লকডাউনের সাথে মিলিয়ে প্রচার করা হচ্ছে; যা বিভ্রান্তিকর।