বিভিন্ন অনলাইন পোর্টালে ও সামাজিক মাধ্যমে একটি খবর ছড়িয়েছে যার শিরোনাম "শ্বশুরের সাথে রাত কাটাতে বাধ্য হয় শাহবিনা"। খবরটি বিভিন্ন ফেবুক পেজ ও গ্রুপ থেকে শেয়ার করা হচ্ছে। দেখুন এখানে, এখানে ও এখানে।
এখানে উল্লেখ্য, সকল পোর্টালেরই ভাষ্য হুবহু একইরকম। এক জায়গায় লেখা হয়েছে-
''স্বা'মীকে তা'লাক দিলে যখন তাকে বলা হয় দেবরের স'''ঙ্গে রা'ত কা'টালে তবেই তিনি আবার স্বা'মীকে বিয়ে করতে পারবেন, তখন শাহবিনা প্র'তিবাদে ফেটে পড়েন। দেবরের স'''ঙ্গে শুতে না-চাওয়ায় তাকে বাড়ি থেকেও বের করে দেওয়া হয়। শাহবিনা এরপ'র যো'গাযোগ করেন লখনৌতে 'আলা হজরত হেল্পিং সোসাইটি'র প্র'তিষ্ঠাতা নিদা খানের স'''ঙ্গে। যার জীবনের অ'ভিজ্ঞতাও প্রায় একই রকম।
নিদা খানের বিয়ে হয়েছিল উত্তরপ্র'দেশের একটি অ'ভিজাত মুসলিম প'রিবারের স'ন্তা'ন উস'মা'ন রেজা খানের স'''ঙ্গে। কিন্তু ২০১৬ সালে তাদের বি'চ্ছেদ হয়ে যায়। নিদা খান তার স্বা'মীর দেওয়া তিন তা'লাকের বি'রু''দ্ধে ফৌজদা'রি আ'দালতে যান আর সেই মা'মলাও জেতেন।
আ'দালতে তিনি ব'লেছিলেন, তার স্বা'মী এত শারী'রিক ও মা'নসিক অ'ত্যাচা'র করতেন যে তার গ'র্ভপাতও হয়ে গিয়েছিল। বিবাহ-বি'চ্ছিন''্না নিদা খান অবশ্য তার লড়াই চালিয়ে যা'চ্ছেন। নিজের এনজিও তৈরি করে তিনি তিন তা'লাক ও নিকা হালালের ভি'ক্টিম'দের পাশে দাঁড়াচ্ছেন – আর বেরিলির শাহবিনার পাশে দাঁড়াতেও তিনি এগিয়ে গিয়েছিলেন।
কিন্তু এর প'রই সোমবার বেরিলির শহর ইমাম মুফতি খুর'শিদ আলম নিদা খান ও শাহবিনা দুজ'নের বি'রু'''দ্ধেই ফতোয়া জা'রি করে প্রকাশ্য বি'বৃতি দিয়েছেন, যাতে বলা হয়েছে ইস'লামকে অ'পমা'ন করার জ'ন্য তাদের ধ'র্ম থেকে বি'তাড়িত করা হচ্ছে "নিদা খান অ'সুস্থ হয়ে পড়লে তাকে কোনও ওষুধ দেওয়া যাব''ে না। সে মা'রা গেলে তার জ'ন্য কেউ নামাজ পড়বে না, কেউ তার জা'নাজায় যেতে পারবে না," বলা হয়েছে ওই
ফতোয়ায়, "এমন কী, কব'রস্থানেও তাকে দা'ফন করা যাব''ে না। যারা তাকে স'ম'র্থন করবে বা তার পাশে দাঁড়াবে, তাদেরও ঠিক এই একই শা'স্তি হবে।" দারুল উলুম দেওবন্দের স্বীকৃত দারুল ইফতা ওই ফতোয়া জা'রি করার প'র থেকেই শাহবিনা ও নিদা খানকে মে'রে ফেলার হু'মকি দেওয়া হচ্ছে ব'লেও তারা অ'ভিযোগ করেছেন। পাঁচ ব্য'ক্তির বি'রু''দ্ধে তারা একটি এফআ'ইআর-ও দায়ের করেছেন।''
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ খবরটির সত্যতা যাচাই করে দেখতে পায় এই খবরটি মূলত আড়াই বছর আগের। ১০১৮ সালের জুলাইয়ের ১৮ তারিখ বিবিসি বাংলা 'তিন তালাক ফতোয়া: শ্বশুরের সাথে রাত কাটাতে বাধ্য হয় শাহবিনা' শিরোনামে খবরটি প্রকাশ করে। খবরে বলা হয়-
'ভারতের উত্তরপ্রদেশে ইসলাম ধর্মের তিন তালাক ও 'নিকা হালালা' বা হিল্লাহ্ বিয়ের প্রথার শিকার দুজন মুসলিম নারীর বিরুদ্ধে ধর্মীয় নেতারা ফতোয়া জারি করার পর তারা রুখে দাঁড়িয়ে বলেছেন ইসলাম থেকে তাদের বের করার অধিকার কারও নেই।
বেরিলির গৃহবধূ শাহবিনাকে তার স্বামী তিন তালাক দেওয়ার পর হিল্লাহ্ বিয়ের মাধ্যমে তার শ্বশুরের সঙ্গে এক রাতের জন্য শুতে বাধ্য করা হয়েছিল - যাতে তিনি নিজের স্বামীকে আবার বিয়ে করতে পারেন।
কিন্তু সেই স্বামী আবার তাকে তালাক দিলে যখন তাকে বলা হয় দেবরের সঙ্গে রাত কাটালে তবেই তিনি আবার স্বামীকে বিয়ে করতে পারবেন, তখন শাহবিনা প্রতিবাদে ফেটে পড়েন।
দেবরের সঙ্গে শুতে না-চাওয়ায় তাকে বাড়ি থেকেও বের করে দেওয়া হয়।'
বিবিসির এই খবরই সম্প্রতি বিভিন্ন অনলাইন পোর্টাল কাট-ছাট করে ও অপ্রয়োজনীয়ভাবে অনেক শব্দের মাঝখানে যতিচিহ্ন ব্যবহার করে প্রকাশ করছে।
সেই সাথে বিবিসির খবরের শিরোনামের ফতোয়ার বিষয়টি পোর্টালগুলো বাদ দিয়ে শুধু 'শ্বশুরের সাথে রাত কাটাতে বাধ্য হয় শাহবিনা' অংশ দিয়ে শিরোনাম করে সাধারণের কাছে তা চটকদার করে প্রকাশ করা হচ্ছে।
সুতরাং ভিন্ন একটি সংবাদমাধ্যমের আড়াই বছর আগে প্রকাশিত একটি খবরকে কোন প্রসঙ্গ ছাড়া এবং ঘটনার দিন তারিখ উল্লেখ করা ছাড়াই নতুন করে প্রকাশ করা বিভ্রান্তিকর।