চীনের কেন্দ্রীয় সামরিক কমিশন সেদেশের সেনাবাহিনীকে কোভিড-১৯ এর একটি ভ্যাকসিন ট্রায়াল পর্যায়ে শুধু সেনাসদস্যদের মধ্যে পরীক্ষামূলকভাবে এক বছরের জন্য ব্যবহার করার অনুমতি দিয়েছে, এই সংবাদটিকে সামাজিক মাধ্যমসহ বেশকিছু অনলাইন পোর্টাল বিশ্বে করোনার প্রথম ভ্যাকসিন আবিস্কার বলে 'ব্রেকিং নিউজ' আকারে প্রচার করছে।
সময় নিউজ তাদের ২৯ জুন 'বিশ্বে প্রথম করোনার ভ্যাকসিন তৈরি করল চীন'-এই শিরোনাম দিয়ে খবর ছেপেছে। সময় নিউজ লিখেছে, ''সবাইকে ছাড়িয়ে এবার করোনার ভ্যাকসিনের চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে চীন। সোমবার (২৯ জুন) এ খবর দিয়েছে ইয়াহু নিউজ। খবরে বলা হয়েছে, দেশটির সেনাবাহিনীর গবেষণা শাখা এবং স্যানসিনো বায়োলজিকসের (৬১৮৫.এইচকে) তৈরি একটি কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন মানব শরীরে প্রয়োগের অনুমতি পেয়েছে।''
প্রতিবেদনটি আর্কাইভ করা আছে এখানে।
সময়ের কণ্ঠস্বর নামক অপর একটি পোর্টাল থেকেও 'বিশ্বে প্রথম করোনার ভ্যাকসিন তৈরি করল চীন'-এই শিরোনামে একইরকম প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
পোস্টটি আর্কাইভ করা আছে এখানে।
আরও পড়ুন: করোনা উপসর্গ নিয়ে মৃত্যু: সিজিএসের রিপোর্ট ভুলভাবে প্রকাশ সংবাদমাধ্যমে
ফ্যাক্টচেক:
বিশ্বে প্রথম করোনা টিকা তৈরি করেছে চীন এই বয়ানের খবরটি বিভ্রান্তিকর। গত ২৯ জুন প্রকাশিত রয়টর্সের 'ক্যানসিনোর কোভিড-১৯ ভ্যক্সিন ক্যান্ডিডেট চীনে সামরিক ব্যবহারে অনুমোদন পেল' এই শিরোনামের চীনের প্রতিবেদনে বলা হয়নি যে চীন প্রথম করোনাভাইরাস আবিষ্কার করেছে। (ইংরেজিতে মূল শিরোনাম: 'CanSino's COVID-19 vaccine candidate approved for military use in China'
ক্যানসিনো ও অ্যাকাডেমি অফ মিলিটারি সাইন্স যৌথভাবে এই ভ্যাক্সিন ক্যান্ডিডেটটি তৈরি করেছে। ২৫ জুন চীনের সামরিক কমিশন মিলিটারি প্রয়োগের উপর অনুমোদন দিয়েছে। ভ্যাক্সিন ক্যান্ডিডেট হল ভ্যাক্সিন তৈরির একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। ভ্যাক্সিন ক্যান্ডিডেটকে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের ধাপে সম্ভাব্য প্রতিরোধক হিসেবে প্রাথমিকভাবে তা মানবদেহে পরীক্ষা করা হয়। তবে সেটা আদৌ কার্যকর হবে কিনা বা পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া থাকবে কিনা সে ব্যাপারে বিস্তারিত গবেষণা প্রয়োজন।
রয়টার্সের ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, করোনাভাইরাসের টিকা তৈরির দৌড়ে ক্যানসিনোর তৈরির টিকাটি চীনের আরও আটটি টিকার মধ্যে একটি যা ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল বা মানবদেহে প্রয়োগের অনুমোদন পেয়েছে। এটি কানাডাতে মানবদেহে প্রয়োগেরও অনুমোদন পেয়েছে।
নিউইয়র্ক টাইমসের করোনা ভ্যাকসিন ট্র্যাকার অনুযায়ী অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও অ্যাস্ট্রাজেনকার তৈরী ভ্যাকসিন এখন পর্যন্ত এগিয়ে আছে যা এখন পরীক্ষার তৃতীয় ধাপে রয়েছে। মার্কিন সংস্থা 'মডার্না আইএনসি'র তৈরি এমআরএনএ-১২৭৩ ভ্যাকিসনও এ দৌড়ে রয়েছে। এই টিকারও তৃতীয় ধাপের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ শুরু হচ্ছে আগামী মাসে। আরো সাত থেকে আটটি ভ্যাকসিন এরকম দ্বিতীয় ও তৃতীয় ধাপে রয়েছে।
বুম বাংলাদেশ দেখে বিশ্বে এখন পর্যন্ত ১৪০ টিরও অধিক কোভিড-১৯ এর ভ্যাকসিন তৈরীর চেষ্টা চলছে। একটি সফল ভ্যাকসিন তৈরীর কয়েকটি ধাপ আছে। প্রথমত: প্রিক্লিনিক্যাল পর্যায় যেটাতে ভ্যাকসিনটির কার্যকারিতা ইঁদুর কিংবা বানরের উপর পরীক্ষা করা হয়। এরপর আসে ধাপ ১ যেখানে ছোট পরিসরে গুটি কয়েক মানুষের উপর ভ্যাকসিনটি পরীক্ষা করা হয়। দ্বিতীয় ধাপে কয়েক'শ মানুষের উপর ভ্যাকসিনটির কার্যকারিতা পরীক্ষা করা হয়। তৃতীয় ধাপে পরীক্ষা চালানো হয় কয়েক হাজার মানুষের উপর। তৃতীয় ধাপেও ইতিবাচক ফলাফল আসলে একেকটি দেশের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ভ্যাকসিনটি ব্যবহারের অনুমোদন দেয়।
আরও পড়ুন: গণমাধ্যমে সালমোনেলা ব্যাকটেরিয়াকে পোলট্রি ভাইরাস বলে ভুয়া খবর প্রকাশ