সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকের একাধিক পেজ এবং গ্রুপে একটি ছবি পোস্ট করে বলা হচ্ছে, বাংলাদেশের ফুটপাতে কার্পেট দিয়ে এক পথশিশু শীত নিবারণ করছে। এরকম কয়েকটি পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে ও এখানে।
গত ২৬ জানুয়ারি 'Md Sojib LM' নামের একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে "কোথায় আর আমার দেশ স্বাধীন হলো??😢এর শেষই বা কোথায়? আমার বা**র বাংলাদেশ" ক্যাপশনে একটি পোস্ট শেয়ার করা হয়। ফেসবুক পোস্টটির স্ক্রিনশট দেখুন--
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, আলোচ্য দাবিটি বিভ্রান্তিকর। আলোচ্য ছবিটি ২০২০ সালের জুন থেকে মরোক্কোর টাঙ্গিয়ার শহরের যাইতিন এলাকার ছবি হিসেবে সামাজিক মাধ্যম ও সংবাদমাধ্যমে প্রচার হয়ে আসছে। তবে ২০২৩ সাল থেকে ছবিটি বাংলাদেশের বলে সামাজিক মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে।
রিভার্স ইমেজ সার্চ এর মাধ্যমে সামাজিক মাধ্যম এক্স-এ (সাবেক টুইটার) 'إبن اليمن داعس الحوثة' নামের অ্যাকাউন্ট থেকে ২০২০ সালের ২৯ জুন প্রকাশিত এক পোস্টে আলোচ্য ছবিটি খুঁজে পাওয়া যায়। সার্চ অনুযায়ী ধারণা করা যাচ্ছে, এটিই সম্ভবত অনলাইনে আলোচ্য ছবিটির প্রথম উপস্থিতি। উক্ত পোস্টের ক্যাপশনে ছবিটি ধারণ করার স্থান সম্পর্কে কোনো তথ্য দেওয়া না হলেও অ্যাকাউন্টটির নামের সাথে ইয়েমেনের পতাকার ইমু যুক্ত থাকতে দেখা যায়। এ থেকে ধারণা করা যায়, ইয়েমেনের কোনো ব্যক্তি ছবিটি পোস্ট করেছেন। পোস্টটির স্ক্রিনশট দেখুন--
পরবর্তীতে, কি-ওয়ার্ড সার্চ এর মাধ্যমে সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে 'Abderrahim Belechekar Benali' নামের অ্যাকাউন্ট থেকে এক্স (সাবেক টুইটারে) পোস্টটি প্রকাশের পরদিন অর্থাৎ ২০২০ সালের ৩০ জুন আলোচ্য ছবি সহ প্রকাশিত একটি পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়। পোস্টে উল্লেখ করা হয়, "মরোক্কোর টাঙ্গিয়ার শহরের যাইতিন এরিয়ায় এখানকার সমাজ কল্যাণ সংস্থাগুলো পথশিশুদের সহায়তা করতে ব্যর্থ হচ্ছে, যার একটি উদাহরণ এই ছবিটি। কিছু শিশু সামাজিক সংহতি কেন্দ্রের পরিবর্তে রাস্তায় ঘুমাতে কেন পছন্দ করে সেটা নিয়ে আমরা অবাক। যত্ন এবং মৌলিক প্রয়োজনীয়তার অভাব সম্ভাব্য কারণ হতে পারে। টাঙ্গিয়ার শহর মূলত একটি সীমান্তবর্তী শহর যাকে ইউরোপে অভিবাসনের ক্ষেত্রে প্রবেশপথ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। অনেকেই এখান থেকে ইউরোপে অভিবাসনের স্বপ্ন দেখে কিন্তু ভিক্ষুক, বিকারগ্রস্ত বা বেকার হিসাবে রাস্তায় তাদের জীবনযাপন করতে হয়" (অনূদিত ও সংক্ষেপিত)। পোস্টটির স্ক্রিনশট দেখুন--
পাশাপাশি, এই ছবি সম্পর্কে জর্ডানভিত্তিক তথ্য যাচাইকারী প্রতিষ্ঠান 'মিসবার' এর একটি তথ্য যাচাই প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। আলোচ্য ছবিটি তিউনিসিয়ার ছবি দাবিতে ছড়িয়ে পড়লে মিসবার ছবিটি যাচাই করে প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, "মিসবার আলোচ্য ছবিটি যাচাই করে দেখেছে যে এটি বিভ্রান্তিকর এবং মাটিতে শুয়ে থাকা শিশুর ছবিটি তিউনিসিয়ার নয়। এটি ২০২০ সালের জুলাইয়ের দিকে প্রথমবারের মতো ইন্টারনেটে প্রকাশিত হয়েছিল এবং বলা হয়েছিল যে এটি মরক্কোর টাঙ্গিয়ার শহরের ছবি। এছাড়াও এই তথ্য যাচাই প্রতিবেদনে ২০২০ সালের ১ জুলাই মরোক্কোর একটি স্থানীয় গণমাধ্যমে "টাঙ্গিয়ারে পথশিশুদের করুণ ছবি" (অনূদিত) শিরোনামে আলোচ্য ছবি সহ প্রকাশিত একটি সংবাদের লিংক যুক্ত করা হয়। এই সংবাদেও ছবিটি মরোক্কোর বলে উল্লেখ করা হয়। মিসবারের তথ্য যাচাই প্রতিবেদনের স্ক্রিনশট দেখুন--
অর্থাৎ প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী ছবিটি মরক্কোর টাঙ্গিয়ার শহর থেকে তোলা।
এদিকে সার্চ করে মরোক্কোর টাঙ্গিয়ার শহরে ইউরোপে অভিবাসন প্রত্যাশীদের (শিশু সহ) মানবেতর জীবনযাপন সংক্রান্ত তথ্যের সত্যতা পাওয়া যায়। মরোক্কোর সংবাদমাধ্যম 'hespress' এ প্রকাশিত এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদনের স্ক্রিনশট দেখুন--
উল্লেখ্য, মরোক্কোর একটি শহরের আলোচ্য ছবিটি ২০২০ সালে অনলাইনে প্রথম প্রকাশের পর তিউনিসিয়া, মিশর সহ বিভিন্ন দেশের ছবি দাবিতে এটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছিল। অনুসন্ধান অনুযায়ী পরবর্তীতে ২০২৩ সাল থেকে আলোচ্য ছবিটি বাংলাদেশের ছবি হিসেবে প্রচারিত হচ্ছে।
সুতরাং সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে মরক্কোর পথশিশুর করুণ ছবি বাংলাদেশের পথশিশুর ছবি হিসেবে প্রচার করা হচ্ছে; যা বিভ্রান্তিকর।