সম্প্রতি সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকের একাধিক আইডি থেকে একটি খবর শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে, নয়াপল্টনে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে বিএনপির সমাবেশের কারণে রাস্তা বন্ধ হয়ে যাওয়ায়, জ্যামে আটকে এক প্রসূতি মা মারা গেছেন। এমন কিছু পোস্টের লিংক দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে।
গত ১১ আগস্ট 'NahidRains' নামের একটি ফেসবুক আইডি থেকে লেখা হয়, "নয়াপল্টনে রাস্তা আটকে বিম্পির সমাবেশ করার জন্য একজন প্রসুতি মা মারা গেছেন। এটা আসলে ঠান্ডা মাথায় খুন। সুশীল সমাজ চুপ কেন?" পোস্টের স্ক্রিনশট দেখুন--
কোনো কোনো ফেসবুক একাউন্ট থেকে একই ঘটনায় প্রসূতি মা ও গর্ভের বাচ্চারও মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করে প্রচার করা হচ্ছে। এরকম একটি পোস্টের স্ক্রিনশট দেখুন--
তবে কোনো একাউন্ট থেকেই মৃত দাবিকৃত প্রসূতি মা বা গর্ভের বাচ্চা সম্পর্কে বিস্তারিত কোনো তথ্য দেয়া হয়নি। কোন হাসপাতালে যাচ্ছিলেন বা সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কেও কোনো ফেসবুক পোস্টে তথ্য নেই।
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, পোস্টে দাবি করা তথ্যটি ভিত্তিহীন।
প্রথমত,
কী ওয়ার্ড ধরে গুগলে এ্যাডভান্স সার্চের পর, গত ১১ আগস্ট বাংলাদেশে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে ঢাকায় বিরোধী দল বিএনপির সমাবেশের ফলে রাস্তা বন্ধ থাকায় কোনো প্রসূতি মায়ের মৃত্যু খবর মূলধারার কোনো সংবাদমাধ্যমে খুঁজে পাওয়া যায়নি।
বুম বাংলাদেশ আরও নিশ্চিত হওয়ার জন্য গত ১১ আগস্ট ভোর থেকে এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত বাংলাদেশ প্রতিদিন, দৈনিক প্রথম আলো, দৈনিক কালের কণ্ঠ, দৈনিক যুগান্তর, দৈনিক ইত্তেফাক, দৈনিক জনকণ্ঠ, দৈনিক সমকাল, বাংলা ট্রিবিউন, দ্য ডেইলি স্টার, দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড, বিডি নিউজ২৪ ডটকম সহ মূলধারার অন্তত ১৫ টি সংবাদমাধ্যমের ওয়েবসাইটে- "নয়াপল্টনে বিএনপি রাস্তায় জ্যামে আটকে প্রসূতি নারী", "বিএনপির সমাবেশের কারণে অ্যাম্বুলেন্স আটকে মৃত্যু", "প্রসূতি নারীর মৃত্যু", "জ্যামে প্রসূতি নারী আটকে পড়ে", "বিএনপির সমাবেশের কারনে রাস্তা বন্ধ", "বিএনপির সমাবেশের রাস্তায় প্রসূতি নারী আটকে পরে মৃত্যু", " নয়া পল্টনে জ্যামে আটকে অ্যাম্বুলেন্সে প্রসূতি নারী ও গর্ভের বাচ্চার মৃত্যু" সহ অন্তত ৫০ টি কিওয়ার্ড ধরে সার্চ করেও আলোচ্য দাবির মত কোনো তথ্য বা খবরের সন্ধান পায়নি। কোনো রাজনৈতিক সমাবেশের জন্য সাধারণ নাগরিকদের মৃত্যুর খবর বা ঘটনাটি যদি আদৌ ঘটে থাকে তবে তা সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ না হওয়া অস্বাভাবিক ব্যাপার।
দ্বিতীয়ত,
বুম বাংলাদেশ পল্টন মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সালাহউদ্দিন মিয়ার সাথে যোগাযোগ করলে তিনি তাঁর দায়িত্বপ্রাপ্ত থানায় গতকাল অর্থাৎ ১১ আগস্ট বিএনপির সমাবেশস্থলের আশেপাশে অ্যাম্বুলেন্স আটকে কোনো প্রসূতি নারীর মৃত্যুর অভিযোগ পাননি বলে জানান। কোনো সমাবেশস্থলের রাস্তা বন্ধ থাকলেও রোড ডাইভারশনের মাধ্যমে বিকল্প রাস্তা খুলে দেয়া হয় বলেও জানান নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক পুলিশ কর্মকর্তা।
অর্থাৎ বিএনপির সমাবেশের ফলে রাস্তা বন্ধ থাকায় প্রসূতি মায়ের মৃত্যুর খবরটি ভিত্তিহীন।
সুতরাং কোনো বিস্তারিত তথ্য প্রমাণ ছাড়াই বিএনপির সমাবেশের ফলে রাস্তা বন্ধ থাকায় একজন প্রসূতির মৃত্যুর ভিত্তিহীন খবর প্রচার করা হচ্ছে সামাজিক মাধ্যমে, যা বিভ্রান্তিকর।