সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকের একাধিক পেজ থেকে দৈনিক প্রথম আলোর অনলাইন সংস্করণের একটি খবরের স্ক্রিনশট শেয়ার করা হচ্ছে, স্ক্রিনশটে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোটের একাধিক সংসদ সদস্য ও নেতাসহ বিভিন্ন ব্যক্তির ছবি ব্যবহার করে শিরোনামে লেখা হয়েছে, "পালাচ্ছিলেন, বিমানবন্দরে আটকে দিলেন অভিবাসন কর্মকর্তারা।" এমন কিছু পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে।
গত ১৩ জুলাই 'Mimoha Mosr' নামের একটি ফেসবুক আইডি থেকে স্ক্রিনশটটি শেয়ার করে ক্যাপশনে লেখা হয় "গণঅভ্যুত্থানের ঘটনা ঘটেছে শ্রীলঙ্কায়। কিন্তু এর আতংকে আওয়ামী নেতাকর্মীদের জানে পানি নাই, একদম চম্মলক্ব চম্মলক্ব অবস্থা।" অর্থাৎ দাবি করা হচ্ছে, খবরটি বাংলাদেশ সংক্রান্ত। স্ক্রিনশট দেখুন--
খবরের স্ক্রিনশটে দেখতে পাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে, আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের একাধিক মন্ত্রী ও সংসদ সদস্য ছাড়াও বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) এর সভাপতি হাসানুল হক ইনু, সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিব উদ্দিন আহমদ, কে এম নূরুল হুদা, অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, সুচিন্তা ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ এ আরাফাতের ছবি রয়েছে।
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, খবরের স্ক্রিনশটটি এডিট করা। দৈনিক প্রথম আলো অনলাইনের একটি সংবাদের শিরোনামের কিছু অংশ ও ফিচার ছবি এডিট করে আলোচ্য স্ক্রিনশটটি বানানো হয়েছে।
কিওয়ার্ড ধরে সার্চ করার পর, মূলধারার সংবাদমাধ্যম দৈনিক প্রথম আলো'র অনলাইন সংস্করণে গত ১২ জুলাই "পালাচ্ছিলেন গোতাবায়া, বিমানবন্দরে আটকে দিলেন অভিবাসন কর্মকর্তারা" শিরোনামে প্রচারিত মূল প্রতিবেদনটি খুঁজে পাওয়া যায়। খবরে শ্রীলঙ্কার একটি গণমাধ্যমের বরাতে লেখা হয়, অর্থনৈতিক সংকটে পড়া শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষের দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া ঠেকিয়ে দিয়েছেন দেশটির অভিবাসন কর্মকর্তারা। কর্মকর্তাদের বরাতে প্রতিবেদনটিতে আরও জানানো হয়, "৭৪ বছর বয়সী গোতাবায়া রাজাপক্ষ স্ত্রীসহ কলম্বোর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পাশে সামরিক ঘাঁটিতে ছিলেন। তিনি গতকাল সোমবার রাতে সেখানেই ছিলেন। সেখান থেকেই আজ বিমানবন্দরে আসেন। গোতাবায়ার ছোট ভাই ও দেশটির সাবেক অর্থমন্ত্রী বাসিল রাজাপক্ষ গোপনে দেশ ছেড়ে যেতে চেয়েছিলেন, কিন্তু দেশটির সরকারবিরোধী বিক্ষোভকারীদের বাধার কারণে তাঁর সেই চেষ্টা ভণ্ডুল হয়েছে।" স্ক্রিনশট দেখুন--
লক্ষ্য করলে দেখা যায়, স্ক্রিনশটে উল্লেখিত খবরে প্রকাশিত সময়ের সাথে দৈনিক প্রথম আলো অনলাইনে প্রকাশিত খবরের সময় হুবহু এক। মূলত দৈনিক প্রথম আলোর এই প্রতিবেদনটিকেই এডিট করে বর্তমান স্ক্রিনশটটি বানানো হয়েছে। তুলনা দেখুন--
অর্থাৎ স্ক্রিনশটটি এডিট করা।
এদিকে, দৈনিক প্রথম আলো ছাড়াও বাংলাদেশের মূলধারার কোনো গণমাধ্যমে সাম্প্রতিক সময়ে আওয়ামী লীগের কোনো নেতাকর্মীর দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টার সময় বিমানবন্দরে আটকে দেওয়ার মতো কোনো ঘটনার সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়নি।
সুতরাং শ্রীলঙ্কা সংক্রান্ত একটি খবরের স্ক্রিনশট এডিট করে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের পালিয়ে যাওয়ার সময় বিমানবন্দরে অভিবাসন কর্মকর্তাদের দ্বারা বাধাপ্রাপ্ত হয়েছেন বলে দাবি করা হচ্ছে সামাজিক মাধ্যমে, যা বিভ্রান্তিকর।