সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকের একাধিক আইডি, পেজ ও গ্রুপে একটি ভিডিও শেয়ার করে বলা হচ্ছে, ভিডিওটি সম্প্রতি ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস এবং ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধ চলাকালে হামাস সৈন্যদের প্যারাসুটে করে নেমে আসার। এরকম কয়েকটি পোস্ট দেখুন এখানে, এখানে ও এখানে।
গত ৯ অক্টোবর 'MD Zakaria Ahmed Mahi' নামে একটি ফেসবুক আইডি থেকে একটি ভিডিও পোস্ট করে লেখা হয়, "ফিলিস্তিনের মুক্তিকামী মুজাহিদরা প্যারাসুট দিয়ে উড়ে উড়ে আবাবিল পাখির মতো ইসরায়েল শত্রু ঘাঁটিতে হামলার জন্য যাচ্ছে, ( ও-আরছালা আলাইহিম তাইরান্ আবাবিল) সুরা ফীল -৩ এ যেন সেই দৃশ্য। ওরা জানে সেখান থেকে ফিরার কোনো সম্ভাবনা নেই, ওরা মরবে জেনেই মারার জন্য গিয়েছে। কারণ ( আল্লাহ তাদের জান মাল কিনে নিয়েছেন জান্নাতের বিনিময়ে , তারা যুদ্ধ করে মারে এবং মরে) তাওবা ১১১। সুতরাং কিসের এতো চিন্তা"। ফেসবুক পোস্টটির স্ক্রিনশট দেখুন--
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, আলোচ্য পোস্টের দাবিটি সঠিক নয়। ভিডিওটি ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের সদস্যদের প্যারাসুটের সাহায্যে ইসরায়েলে অবতরণের নয় বরং মিশরের একটি মিলিটারি একাডেমির সদস্যদের প্যারাসুট প্রশিক্ষণের।
আলোচ্য ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে একটি ভবনের দেখা যায়। এছাড়া ওই ভবনের উপরে একটি উড়ন্ত পতাকা এবং ভবনটির প্রাঙ্গনে লোগোযুক্ত একটি ফলক দেখতে পাওয়া যায়। ওই ভবনের দেওয়ালে আরবী হরফে কিছু লেখা থাকতে দেখা যায়। গুগলের সাহায্যে জানা যায়, ওই ভবনের সামনে 'মিলিটারি একাডেমী' লেখা থাকতে দেখা যাচ্ছে। এ সংক্রান্ত প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করে অনলাইন ফটোস্টকার ওয়েবসাইট এলামিতে আলোচ্য ভিডিওতে দেখানো ওই ফ্রেমের মত একটি ছবি খুঁজে পাওয়া যায়। ছবিটির বর্ণনায় বলা হয়, "In front of a building in Cairo, there is a sign that reads "Military Academy."(বঙ্গানুবাদ--কায়রোর একটি ভবনের সামনে যেখানে "মিলিটারি একাডেমী" খোদিত আছে।)"। ছবিটির স্ক্রিনশট দেখুন--
এবারে, আলোচ্য পোস্ট থেকে নেওয়া একটি স্ক্রিনশট (বামে) এবং এলামিতে প্রাপ্ত ছবিটির (ডানে) একটি তুলনামূলক ছবি দেখুন--
এদিকে গুগলম্যাপে সার্চ করেও আলোচ্য ফ্রেমটির ছবিটির মতই আরেকটি ছবি খুঁজে পাওয়া যায়। গুগল ম্যাপ থেকে প্রাপ্ত ছবিটির স্ক্রিনশট দেখুন--
এছাড়াও, আলোচ্য পোস্টের স্ক্রিনশটে দেখা যাওয়া ওই লোগোটিও মিশরের মিলিটারি একাডেমির বলে নিশ্চিত হওয়া যায়।
এদিকে, আলোচ্য পোস্টটির স্ক্রিনশট নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে 'ahmedsaied41' নামে একটি টিকটক আইডিতে গত ২৪ সেপ্টেম্বর পোস্টকৃত হুবহু আলোচ্য ভিডিওটি খুঁজে পাওয়া যায়। এদিকে, ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস ইসরায়েলে হামলা করে গত ৭ অক্টোবর। তাই, আলোচ্য ভিডিওটি চলমান ইসরায়েল-ফিলিস্তিন যুদ্ধের হওয়ারও কোনো সুযোগ নেই। টিকটক ভিডিওটি দেখুন--
অর্থাৎ ভিডিওটি চলমান ইসরায়েল-ফিলিস্তিন যুদ্ধে হামাস যোদ্ধাদের নয়। গত ৭ অক্টোবর হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধ শুরুর আগেই মিশরের একটি মিলিটারি একাডেমিতে আলোচ্য ভিডিওটি ধারণ করা হয়েছিল।
সুতরাং মিশরের মিলিটারি একাডেমিতে ধারণকৃত দেশটির মিলিটারি সদস্যদের প্যারাসুট প্রশিক্ষণের ভিডিওকে, চলমান ইসরায়েল-ফিলিস্তিন যুদ্ধের দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে ফেসবুকে; যা বিভ্রান্তিকর।