সম্প্রতি সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকের একাধিক আইডি ও পেজ থেকে 'উস্কানিমূলক পোশাক পরলে যৌন হয়রানির অভিযোগ আমলে নেবে না আদালত' মর্মে একটি বক্তব্য শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে বাংলাদেশের বিচার বিভাগের মন্তব্য এটি। এমন কিছু পোস্টের লিংক দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে।
গত ১৮ আগস্ট 'Md Haliem' নামের একটি ফেসবুক পেজ থেকে বক্তব্যটি শেয়ার করে লেখা হয়, "উস্কানিমূলক পোশাক পরলে যৌন হয়রানির অভিযোগ আমলে নেবে না আদালত। ধন্যবাদ বাংলাদেশের বিচার বিভাগের প্রতি," পোস্টের স্ক্রিনশট দেখুন--
ফ্যাক্ট চেক:
বুম বাংলাদেশ যাচাই করে দেখেছে, মন্তব্যটি বাংলাদেশের বিচার বিভাগের নয় বরং ভারতের কেরালা রাজ্যের একটি আদালতের।
কী ওয়ার্ড ধরে সার্চ করার পর, ভারতীয় একাধিক সংবাদমাধ্যমে দেশটির কেরালা রাজ্যের একটি জেলা সেশন কোর্টের মন্তব্যের খবর খুঁজে পাওয়া যায়। তন্মধ্যে, ভারতীয় সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমস-এর বাংলা সংস্করণে "মহিলা উত্তেজক পোশাক পরলে যৌন হেনস্থা মামলা প্রাথমিকভাবে দাঁড়ায় না, বলছে কোর্টের পর্যবেক্ষণ" শিরোনামে একটি খবর খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, মালায়লম সাহিত্যিক সিভিক চন্দ্রনের বিরুদ্ধে আনা একটি যৌন হেনস্থার অভিযোগের প্রেক্ষিতে কেরালার এক সেশন কোর্ট পর্যবেক্ষণে জানায়, ভারতীয় সংবিধানের ৩৫৪ এর এ ধারায় প্রাথমিকভাবে অপরাধটি দাঁড়াচ্ছে না যখন মহিলা যৌন উত্তেজক পোশাক পরে থাকেন। স্ক্রিনশট দেখুন--
মূলত, ২০২০ সালে কেরালার নন্দি সমুদ্র সৈকতে কেরালার সমাজকর্মী ও সাহিত্যিক সিভিক চন্দ্রনের বিরুদ্ধে এক লেখিকাকে যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠে। অভিযোগে বলা হয় সিভিক চন্দ্রন তাকে জোরপূর্বক একটি নির্জন স্থানে নিয়ে গিয়ে যৌন হেনস্তা করেন। এর দুই বছর পর চলতি বছরে সিভিক চন্দ্রনের বিরুদ্ধে মামলা রেজিস্ট্রি করে পুলিশ। কেলারার কোঝিকোড়ি সেশন আদালত রায় 'রিজার্ভ' রেখে মামলার বিষয়ে কিছু পর্যবেক্ষণ জানান। সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবর মতে আদালত আরও জানিয়েছে, চন্দ্রনের বয়স ৭৪ এবং তিনি শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী, তাই তিনি নিজে অন্য ব্যক্তির উপর জোর করতে পারেন না। খবরটি ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভিতেও প্রকাশিত হতে দেখা যায়। স্ক্রিনশট দেখুন--
অর্থাৎ মন্তব্যটি বাংলাদেশের কোনো আদালতের নয় বরং ভারতীয় একটি সেশন আদালতের।
পাশাপাশি, একাধিকবার অনুসন্ধান করেও বাংলাদেশি কোনো আদালতের এরূপ রায় বা পর্যবেক্ষণের খবর প্রকাশিত হতে দেখা যায়নি।
সুতরাং ভারতের কেরালা রাজ্যের একটি নিম্ন আদালতের পর্যবেক্ষণকে বাংলাদেশের বিচার বিভাগের দাবি করা হচ্ছে সামাজিক মাধ্যমে, যা বিভ্রান্তিকর।